কোম্পানি শিখিয়েছে ইলন মাস্ক সম্পর্কে ‘অসাম’ বলতে!

লাস ভেগাস শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘বোরিং কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইলন মাস্ক। এখন প্রতিষ্ঠানের মূল কাণ্ডারীর গুণগান করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের টেসলা গাড়ির চালকদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে একখানা পাণ্ডুলিপি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 02:51 PM
Updated : 1 August 2021, 02:51 PM

এমন এক স্বনিয়ন্ত্রিত ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থার কথা মাস্ক বলেছিলেন, যাতে ১৬ জন যাত্রী নিয়ে পরিবহন যানগুলো চলবে ঘণ্টায় একশ’ ৫০ মাইল গতিতে। মাস্কের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার দূরত্ব অনেক বেশি বলে উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে। ‘কনেভনশন সেন্টার লুপ’ নামের ওই টানেলে এখন চলছে টেসলার যাত্রীবাহী গাড়ি। গড় গতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ মাইল।

লাস ভেগাসের ওই টানেলে যাতায়াতকারী গাড়িগুলোর চালকদের জন্য আলাদা পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছে বোরিং কোম্পানি। যাত্রী ইলন মাস্ককে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে বা কৌতুহল দেখালে, চালকদের উত্তর দিতে হবে ওই পাণ্ডুলিপি মেনে।

মাস্কের জন্য কাজ করতে ভালো লাগে কি না, এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে, “হ্যাঁ, তিনি একজন ভালো নেতা। তিনি আমাদের সেরা কাজটা দিতে উদ্বুদ্ধ করেন” -- উত্তরে বলতে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চালকদের।

টেসলা চালকদের জন্য তৈরি ওই পাণ্ডুলিপি টেকক্রাঞ্চ সংগ্রহ করেছে নেভাডা’র তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার আইনের সুবাদে। আর সাইটটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘লুপ’ পরিবহন টানেলের চালকদের বেশ কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই পাণ্ডুলিপিতে। যাত্রীর প্রশ্ন স্পর্শকাতর দিকে মোড় নিলে আলোচনার বিষয় পাল্টে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া আছে তাতে।

“আমাদের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে জনগনের কৌতুহল এড়ানোর উপায় নেই এবং আলোচনার পুরোটা জুড়েই থাকতে পারে ওই বিষয়। যতো সম্ভব অল্প বলুন এবং ওই আলোচনা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাত্রী যদি ওই বিষয়ে চাপ দিতেই থাকে, নম্র ভাবে বলুন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু এই ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না’ এবং আলোচনার বিষয় পাল্টে ফেলুন।”--বলা হয়েছে বোরিং কোম্পানির নির্দেশনায়।

বিলিওনেয়ার ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন সময় নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন মাস্ক। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট গিজমোডো মাস্কের বিবরণ দিয়েছে ‘প্রতিশোধ পরায়ণ বস’ হিসেবে। বেতন বাড়াতে বলায় ১২ বছরের পুরানো সহকারীকে ছাঁটাই করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। যদিও ওই ঘটনার বিস্তারিত বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন মাস্ক; সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে ওই বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে, এটা আঁচ করতে পেরে বোরিং কোম্পানি আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে মন্তব্য গিজমোডো’র।

“খবরের কাগজে তার ব্যাপারে যা পড়েছি, সেটা কী সত্যি যে তিনি বস হিসেবে অভদ্র/কর্মীদের ছুটি নিতে দেন না?”-- এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে উত্তরে কী বলতে হবে তাও বলে দেওয়া আছে বোরিং কোম্পানির নির্দেশাবলীতে।

“ওই খবরটা আমি দেখিনি, কিন্তু আমার এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি।”

টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, যাত্রীরা যদি চালককে প্রশ্ন করেন যে তারা কতো দিন ধরে ওই টানেলে গাড়ি চালাচ্ছেন, তবে তার উত্তরে চালকদের বলতে বলা হয়েছে. “এই টানেলগুলোকে চেনার জন্য যথেষ্ট সময় ধরে”। এমন নির্দেশনার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে ওই পাণ্ডুলিপিতে। “আপনি ওখানে এক সপ্তাহ ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন জানলে যাত্রীরা নিরাপদ বোধ করবেন না (যদিও তার মানে হতে পারে কয়েকশ’ রাইড)। আপনি কতো দিন ধরে এখানে চাকরি করছেন সেটাও বলবেন না, তার বদলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান অথবা মনোযোগ অন্যদিকে টানুন।”

টানেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন আসলে সেটিও এড়িয়ে যাওয়ার পন্থা শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই পাণ্ডুলিপির মাধ্যমে। “এটা খুবই নিরাপদ সিস্টেম। আর আমি ঠিক জানি না, আপনাকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলতে হবে”।

টানেল খুঁড়তে কতো খরচ হয়েছে, বা প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মী সংখ্যা কতো, এমন প্রশ্নগুলোকেও এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে টেসলা চালকদের।

অন্যদিকে বোরিং কোম্পানির টেসলা চালকরাও যে সব সময় আইন মেনে গাড়ি চালাচ্ছেন এমনটা নয় বলে উঠে এসেছে টেকক্রাঞ্চের অনুসন্ধানে। অনেক সময় যাত্রীদের সিটবেল্ট না বাঁধলেও চলবে বলে ভুল তথ্য দেন তারা।