প্ল্যাটফর্মে বর্ণবাদী নির্যাতনের বিষয় স্বীকার করলো ইনস্টাগ্রাম

প্রযুক্তিগত ভুলের কারণে বর্ণবাদী মন্তব্য এবং ইমোজি সরানো হয়নি বলে স্বীকার করে নিয়েছে ইনস্টাগ্রাম। তবে, বিষয়টি এতো সহজ নয়!

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2021, 11:44 AM
Updated : 16 July 2021, 11:44 AM

ইউরো কাপ ফাইনালে পেনাল্টি মিস করার মুহূর্তেই তিনি জানতেন এর জন্য তীব্র বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হতে হবে তাকে এবং এক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মগুলো আগে তেমন কিছুই করেনি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউরো ২০২০ ফাইনালের পর ইংল্যান্ডের ফুটবলার বুকায়ো সাকা, মার্কাস র‌্যাশফোর্ড এবং জাডন স্যাঞ্চোর দিকে বর্ণবাদী আক্রমণের বন্যা বয়ে যাওয়ার পর ফেইসবুক মালিকানাধীন মেসেজিং সেবাটি এ তথ্য জানালো বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

ইনস্টাগ্রাম প্রধান অ্যাডাম মোসেরি বলেছেন, মানব মডারেটরদের কাছে পাঠানোর বদলে ওই বিষয়গুলোকে “ভুল করে” স্বয়ংক্রিয় মডারেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, বিষয়টি এখন ঠিক করা হয়েছে।

মোসেরি বিবিসি নিউজকে বলেন, “আমাদের কাছে রিপোর্টকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রযুক্তি রয়েছে এবং আমরা ভুল করে এর মধ্যে কিছু মন্তব্যকে সহজসরল হিসেবে চিহ্নিত করছিলাম। অথচ সেগুলো একেবারেই তেমন ছিল না।”

“এই ধরনের মন্তব্যের প্রতিবেদন এখন সঠিকভাবে পর্যালোচনা হবে আশা করা যায়।”

সাকার ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি কমেন্টে কয়েকটি ওরাংওটাং ইমোজি ছিল বলে সোমবার প্রতিবেদনে বলেছে বিবিসি।

কয়েক মিনিটের মধ্যে ইনস্টাগ্রামের একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায় যেখানে সেবাটি উল্লেখ করেছে, প্ল্যাটফর্মের প্রযুক্তির বিবেচনায় মন্তব্যটি “সম্ভবত ইনস্টাগ্রামের নীতিমালা লঙ্ঘন করে না”।

বিবিসি নিউজ আরও পর্যালোচনার অনুরোধ করলেও কোন প্রতিক্রিয়া পায়নি।

এর পর, বৃহস্পতিবার, সাকা নিজেই ওই নির্যাতনের জবাব দিয়েছেন।

তিনি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এই সপ্তাহে আমি, মার্কাস এবং জাডন যে ঘৃণ্য এবং অপমানজনক বার্তা পেয়েছি, আমি চাই না যে কোন শিশু বা প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তিকে তার মধ্য দিয়ে যেতে হোক।”

“আমি তখনই জানতাম আমি কী ধরনের ঘৃণার মুখোমুখি হবো। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আপনার শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মগুলি এই বিষয়গুলি বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট কাজ করছে না।”

মোসেরির স্বীকারোক্তি এবং প্রতিশ্রুতির পর, বুধবার রাতে আরও বেশ কয়েকটি বর্ণবাদী মন্তব্য এবং ইমোজি সম্পর্কে রিপোর্ট করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনও পর্যালোচনার ফলাফল পাওয়া যায়নি।

সাকার অ্যাকাউন্টে স্ক্রল করে নিচের দিকে গেলে আরও অনেক বর্ণবাদী মন্তব্য পাওয়া যায় যেগুলো যেগুলো এখনও রিপোর্ট করা এবং অপসারণ করা হয়নি।

মোসেরি বেশ কয়েকটি টুইট করেছেন। এর মধ্যে একটিতে তিনি বলেছেন, "ইনস্টাগ্রামে বর্ণবাদী ইমোজি বা যে কোনও ধরনের ঘৃণামূলক বক্তব্য পাঠানো একেবারেই ঠিক নয়।"

বানর ইমোজি

ইনস্টাগ্রামে বর্ণবাদ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যেখানে প্রচুর কনটেন্ট মডারেট করা হয়নি।

এপ্রিল মাসে লিভারপুল ফুটবল ক্লাব তাদের কয়েকজন খেলোয়াড়কে বর্ণবাদী বানর ইমোজি পাঠানোর পর এই প্ল্যাটফর্মের সমালোচনা করেছিল।

ইনস্টাগ্রাম এর আগে বৈষম্যবিরোধী এবং উৎপীড়ন বিরোধী গ্রুপগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল আপত্তিকর শব্দ, বাক্যাংশ এবং ইমোজির একটি তালিকা তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে।

ব্যবহারকারীরা সেটিংসে লুকানো শব্দ সরঞ্জাম পরিবর্তন করে তাদের অ্যাকাউন্টগুলিতে নির্দিষ্ট শব্দ বা ইমোজি ফিল্টার করতে পারেন।

কিন্তু সেন্টার ফর কাউন্টারিং হেটের (সিসিডিএইচ) প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদ বলছেন, এটা "বিশ্বাসের বাইরে" যে বর্ণবাদী নির্যাতন ইনস্টাগ্রামের ফিল্টারকে উপেক্ষা করে চলেছে।

তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দেরকে যে ১০৫টি অ্যাকাউন্ট বর্ণবাদী নির্যাতন করেছে বলে আমরা চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে ৮৮টি এখনো আছে।”

তিনি বলেন, সামাজিক নেটওয়ার্ক যে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় সেটি এখনও “অনেক দূরের বিষয়”।

“বানরের ইমোজিকে বর্ণবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়া থেকে শুরু করে বর্ণবাদী অ্যাকাউন্টগুলোকে, ইনস্টাগ্রাম এবং এর মূল সংস্থা ফেইসবুক থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করা পর্যন্ত ফেইসবুক ব্যর্থ হয়েছে।”

ইমরান বলেন, “আমরা যথেষ্ট কথা শুনেছি। এখন সময় এসেছে যুক্তরাজ্য সরকারের জার্মানিকে অনুসরণ করার যেভাবে বর্ণবাদ এবং চরমপন্থার হাতে মেগাফোন তুলে দেওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মহুলোকে মোটা দাগে জরিমানা করার।”