প্রযুক্তিবান্ধব এস্তোনিয়ায় কোভিড যুদ্ধের খবর কী?

ডিজিটাল সরকারের ধারণায় এস্তোনিয়ার অবস্থান সম্ভবত বিশ্বে এক নম্বর। কিন্তু তার মানে কি এই যে, করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকানোয় এই দেশটির অবস্থান অন্যদের চেয়ে ভালো ছিল?

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2021, 12:51 PM
Updated : 21 May 2021, 01:06 PM

বিবিসি'র সঙ্গে আলাপচারিতায় এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট জানালেন তার দেশ এই মহামারী মোকাবেলায় কেমন করেছে।

ছোট্ট এই বল্টিক দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। দেশটির নাগরিকরা সরকারের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগের জন্য অসম্ভব দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন।

কাজেই করোনাভাইরাসের মহামারী শুরু হলে যখন নাগরিকদের চলাফেলায় বিধিনিষেধ আরোপের পরিস্থিতি চলে এলো, অন্য অনেক দেশের চেয়েই এস্তোনিয়াার প্রস্তুতি ভালো ছিল।

প্রেসিডেন্ট কার্স্টি কালুলাইড বলেন, তার সন্তান এবং এই বয়সী শিশুরা আগে থেকেই "ই-স্কুলের" সঙ্গে পরিচিত ছিল। পরের দিনের কাজগুলো সম্পর্কে অনলাইনেই জেনে নেওয়ার অভ্যাস তাদের মধ্যে ছিল। "এখন সেই প্ল্যাটফর্মেই জুম কলের মাধ্যমে স্কুলে যোগ দেওয়ার একটি লিঙ্ক যোগ হয়েছে মাত্র।"

একইভাবে গোটা স্বাস্থ্য সেবার যাবতীয় যোগাযোগ আগেই চলে গিয়েছিল অনলাইনে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা কেবল সেখানে নতুন একটা বাটন যোগ করে দিয়েছি লোকজনের অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য।”

“কেউ যখন অসুস্থতাজনিত ছুটির আবেদন করেন, তাকে একজন চিকিৎসক ফোন করেন এবং তার অসুস্থতার লক্ষণগুলো জেনে নিয়ে দরকার মনে করলে তাকে কিছু প্যাথলজিকাল পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়ে দেন। এর ফলে ডাক্তারের চেম্বারে আর তাদের ভীড় করতে হচ্ছে না এবং সেখান থেকে রোগও ছড়াচ্ছে না।”

এটা বেশ ভালোভাবেই কাজ করছিলো। অন্তত পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত।

২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময় এস্তোনিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার খুবই কম ছিল, বলা চলে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এরপর যখন শীত এলো, সংখ্যাগুলো ক্রমশ বাড়তে শুরু করলো। প্রেসিডেন্ট স্বীকার করলেন, “এক পর্যায়ে আমাদের অবস্থা ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ হয়ে দাঁড়াল।”

সমস্যা তাহলে কোথায় হয়েছিল?

প্রেসিডেন্ট ব্যাখ্যা করে বলেন, “লোকজন দেখাসাক্ষাৎ করতে চায়”। এর ফলে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ভাইরাস সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

বল্টিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এই নারী রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “তাদের সব ধরনের ডিজিটাল স্কিল আছে। অনেকেই দূর থেকে কাজ করেন। কিস্তু আর যাই হোক, এক গ্লাস ড্রিংক হাতে নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে তো আর জুম আড্ডা দেওয়া যায় না। এটা ঠিক জমে না।”

বসন্ত নাগাদ এস্তোনিয়া রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। দেশটিতে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় কোভিড মৃত্যু হার এখন যুক্তরাজ্য বা জার্মানির চেয়ে কম। তবে, এশিয়ার প্রযুক্তিবন্ধব দেশগুলো, যেমন তাইওয়ান বা দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় বেশি।

এর অবশ্য একটি সম্ভাব্য কারণও আছে। দেশটির সরকার তার নাগরিকদের যে বিশাল আকারের ডেটা সংগ্রহ করছে তাতে করে নাগরিকদের নজরে রাখার মাধ্যমে ভাইরাসের গতিবিধি শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে, সরকার তাদের গোপনতা বা প্রাইভেসি বিষয়টাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট কালুলাইড বলেন, নাগরিকরা অনুমতি না দিলে সরকার ওই নাগরিকের কোনো তথ্য নেবে না।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া তার নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করে লোকজনের গতিবিধি অনুসরণ করছে এবং লোকজনকে ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। কারো মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাসার দরজায় এসে কড়া নাড়ছে।

এই পর্যায়ের নজরদারী এস্তোনিয়া বা পশ্চিমা অনেক দেশে কল্পনাও করা যায় না।

প্রযুক্তিই যে কোভিডের বিস্তার রোধে যাদুর কাঠি নয়, তার নানারকম প্রমাণ মিলছে। এটা অনেক বেশি নির্ভর করে পরিস্থিতি এবং সেই পরিস্থিতিতে মানুষের আচরণের ওপর।

তরুণ এস্তোনিয়ানরা হয়তো প্রযুক্তিপ্রেমিক, ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, কিন্তু আড্ডা না হলে তাদের হয় না। ওয়েবক্যামে তাকিয়ে জুম কলের চেয়ে সামনাসামনি আড্ডায় পান করাতেই তাদের আগ্রহ বেশি।