জুম অবসাদ? আপনি একা নন, ভুগছেন অনেকেই

“আজকেও দুটো জুম কল আছে!” বা “এই হোম অফিস, জুম মিটিং নিয়ে আর পারছি না।” অথবা- “জানি না কবে এই জুমের হাত থেকে মুক্তি পাবো” -- দীর্ঘশ্বাস সহ এমন কথা কি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন সম্প্রতি?

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2021, 12:33 PM
Updated : 27 Feb 2021, 12:50 PM

নিজের ওপর দোষ চাপাবেন না, কেবল আপনিই নন, এমন কথাবার্তা অনেকেই বলছেন এবং গবেষকদের নজর গিয়ে পড়েছে জুম থেকে তৈরি মানসিক অবসাদের ওপর। তারা বলছেন, জুম বা অনলাইন মিটিংয়ের কারণে সৃষ্ট মানসিক অবসাদ একেবারেই বাস্তব সমস্যা এবং এর ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকেই।

টানা কয়েকটি জুম মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার পর ‘জুম অবসাদ’ -এ ভুগতে পারেন ব্যবহারকারী। অন্তত সে কথাই উঠে এসেছে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়। জুম অবসাদের মূল কারণগুলোও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা। কারণের পাশাপাশি নিরাময়ের কথাও উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে, প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণার ফলাফল।

মূল গবেষক ও ‘ভার্চুয়াল হিউম্যান ইন্টারঅ্যাকশন ল্যাবের’ পরিচালক জেরেমি বেইলেনসন বলছেন, জুম অবসাদের দিকে নিয়ে যেতে চারটি বিষয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই চারটি বিষয় এমন যে প্রচলিত মুখোমুখি আলাপ বা মিটিংয়ে সেগুলোতে ভুগতে হয় না। দীর্ঘদীনের অভ্যাস ভেঙে নতুন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের। এই পরিবর্তনগুলো আপাতদৃষ্টিতে এতোটাই সূক্ষ্ম যে চট করে চোখেও পড়ে না। অথচ একের পর এক মিটিংয়ে ঠিকই জানান দেয় এর প্রতিক্রিয়াগুলো।

গবেষক সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরেছেন পিয়ার রিভিউড জার্নাল ‘টেকনোলজি, মাইন্ড অ্যান্ড বিহেভিয়ার’- এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক নিবন্ধে। আসুন একটু চোখ বুলিয়ে নেই সেগুলোয়। চাইলে মিলিয়ে নিতে পারেন নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গেও।

অনেক বেশি কাছে থেকে দৃষ্টি সংযোগ

সাধারণত বাস্তব জীবনে কথোপকথনের আমাদের চেহারা যতোটা বড় দেখায়, জুমে তার চেয়েও বেশি বড় আকারে অংশগ্রহণকারীরা হাজির হন পর্দায়। জুমে কথা বলার বিষয়টিও পুরোটাই নির্ভর দৃষ্টি সংযোগের উপর।

জুমে আমরা কী করি? লম্বা সময় ধরে পর্দায় ভেসে থাকা কারো চেহারার দিকে, বিশেষ করে চোখের দিকে তাকিয়ে আমরা কথা বলি। আর জুমের কল্যাণে সেই পর্দার চেহারা হাজির হয় একেবারে আমাদের মুখের কাছে, সরাসরি চোখ বরাবর। একটু ভেবে দেখুনতো সাধারণ পরিস্থিতিতে এমন কাছ থেকে কার দিকে আপনি তাকাতেন? একেবারে কাছের মানুষ বা অন্তরঙ্গ সঙ্গীর প্রতি, তাই তো? এই জুমের জামানায় সেই অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দিকে তাকানোর মতো একেবারে কাছ থেকে আমারা তাকিয়ে কথা বলছি স্বল্প পরিচিত লোকদের সঙ্গে, ভিন্ন বিভাগের কর্মীর সঙ্গে বা কখনও কখনও একেবারেই অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে। গবেষক বেইলেনসন বলছেন, এই বিষয়টিই মানসিক চাপের কারণ হয়ে উঠছে কারো কারো বেলায়।

কলের সময় নিজেকে দেখা

জুম কলের সময় নিজেকে দেখতে পাওয়ার বিষয়টিকে মানসিক ‘চাপ’ হিসেবে দেখছেন বেইলেনসন। ব্যাপারটি অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে – কেউ অফিসে সারাক্ষণ আয়না নিয়ে অনুসরণ করার মতো।

গতিশীলতার অভাব

জুম কলে সাধারণত স্থির একটি ফ্রেম দেখা যায়। ব্যবহারকারীরা মিটিং বা ফোন কল চলাকালে ঠিক ঘোরাফেরা করতে পারেন না। অথচ ফোন বা প্রত্যক্ষ আলোচনার সময় অংশগ্রহণকারীরা হাঁটাচলা করতে পারেন।

অনুচ্চারিত ইঙ্গিত ধরার অতিরিক্ত চেষ্টা

জুম কলেও অনেক সময় শব্দ ব্যবহার না করে অংশগ্রহণকারীরা একে অন্যের ইঙ্গিত ধরার চেষ্টা করেন। বেইলেনসন বলছেন, এভাবে “ব্যবহারকারীদের ইঙ্গিত বুঝতে এবং বোঝাতে আরও বেশি চেষ্টা করতে হয়।”

সমাধান

কয়েকটি সমাধান রয়েছে যা সহজেই প্রয়োগ করা সম্ভব। এর মধ্যে প্রথমেই হলো ক্যামেরা নিজের স্বাচ্ছন্দ্য মতো ঠিক করে নিয়ে নিজেকে নিজের ডিভাইসের পর্দা থেকে আড়াল করে ফেলা।

অন্যের চেহারার আকার ছোট করতে জুম উইন্ডোর আকার কমিয়ে নিতে পারেন অংশগ্রহণকারী। এতে করে চেহারা তুলনামুলক ছোট দেখাবে।

এ ছাড়াও লম্বা সময় মিটিং চললে নিজের ভিডিও বন্ধ করে খানিকটা সময় বিরতি নিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

বেইলেনসেন জানিয়েছেন, জুমের পক্ষ থেকেও এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিজ পরামর্শ ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।

ইউএসএ টুডে’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে ব্যবহারকারীদেরকে নিজ কম্পিউটার থেকে নিয়মিত বিরতি নেওয়ার অথবা মিটিং সংক্ষিপ্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছে জুম।

“যেখানে কিছু পরিবর্তন নির্বিঘ্ন, সেখানে অন্য পরিবর্তন চ্যালেঞ্জিং। আমরা সবাই এই নতুন যোগাযোগের রাস্তা সম্পর্কে শিখছি, এবং কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের অস্পষ্ট সীমারেখার মধ্যে সমন্বয় করছি।” – বিবৃতিতে বলেছে জুম।

কোভিড-১৯ সংক্রমণে এখনও নাজেহাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। অনেক মানুষকেই ঘরে বসে জুমের মাধ্যমে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড সারতে হচ্ছে। ২০২০ সালে জুমের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময়টিতে দৈনন্দিন এক কোটি মিটিং অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০ কোটিরও বেশি।