আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো ডেটাফুল

আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম ডেটাভিত্তিক কনটেন্ট সাইট ডেটাফুল। এখন থেকে হাতের নাগালেই সহজে মিলবে যে কোনো ডেটা।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2021, 02:07 PM
Updated : 16 Jan 2021, 02:07 PM

ডেটাফুলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান, বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক, এবং সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন। জুমের মাধ্যমে সম্পন্ন এ অনুষ্ঠানটি ছিল আগ্রহী সবার জন্য উন্মুক্ত।

ডেটাফুল কী?

ডেটাফুলের উদ্যোক্তা পলাশ দত্ত বললেন, ডেটাফুল মূলত কাজ করে উন্মুক্ত ডেটা নিয়ে। এক কথায় বললে, উন্মুক্ত ডেটাকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে ডেটাফুল।

“বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জরিপ ও শুমারির মাধ্যমে যে ডেটা তৈরি করে তা যে কেউ যখন ব্যবহার করতে চায়, তা কোনো গবেষণার কাজে হোক বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে হোক, তা চাওয়া মাত্র ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় পাওয়া যায় না। আমরা যদি, গত ১০ বা ১৫ বছরের ধান উৎপাদনের ডেটাও দেখতে চাই বা আমদানির কোনো ট্রেন্ড জানতে চাই, এই ডেটা সাধারণ মানুষের জন্য সহজে ব্যবহারউপযোগী অবস্থায় পাওয়া যায় না। ডেটাফুলের চেষ্টা হচ্ছে, এই বিবিএসের এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর সরকারি ডেটাকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে একটি ওয়েবসাইটে, একটি স্থানে নিয়ে আসার। যাতে যে কেউ চাইলেই যাতে সে ডেটায় প্রবেশ করতে পারে।”    

ডেটাফুলের সেবা ব্যবহারে কী অর্থের প্রয়োজন পড়বে?

না, ডেটাফুলের সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই ব্যবহার করতে পারবেন একজন ব্যবহারকারী। সরাসরি ডেটাফুলের সাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডেটা খুঁজে নিতে হবে শুধু। অনুষ্ঠানে পলাশ দত্ত ডেটাফুলের সাইট দেখিয়ে বলেন, “এটা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এজন্য এখনও কোনো অর্থ দিতে হচ্ছে না।”

বর্তমানে ডেটাফুলের সাইটে আমদানি, রপ্তানী, জ্বালানী এবং মূল্য ও মজুরি সম্পর্কিত ডেটা রয়েছে। অনুষ্ঠানে পলাশ দত্ত ফুড অ্যান্ড ব্রেভারেজ আমদানি অংশে গিয়ে দেখান, ১৯৮২-৮৩ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ডেটা গুছানো অবস্থায় রয়েছে এবং লেখচিত্রে ডেটা দেখা যাচ্ছে।

এ ছাড়াও লেখচিত্রের উপরে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ রয়েছে। সেখানে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, গত এক দশকে এ খাতে আমদানি মূল্যমান কত বেড়েছে এবং লেখচিত্রের পাশে সংক্ষিপ্ত একটি নোট তুলে ধরছে, গত এক দশকে আমদানি কতখানি বেড়েছে, সে বিষয়টি।

ডেটার প্রয়োজনীয়তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, করোনার মহা সংকটের সময় পরিসংখ্যানের যে কত প্রয়োজন এটি হয়তো অনেকেই উপলব্ধি করেননি।

“করোনা উত্তর পৃথিবী – এটি একটি নতুন পৃথিবী হবে। আমরা এতোদিন যেভাবে জীবনযাপন করেছি, তার থেকে ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে। সেই চিন্তাভাবনা নিয়েই এখন আমাদের সামনের দিকে এগোনোর প্রয়োজন আছে।  কোভিড-১৯ এ সারা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছেন, কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, কত মানুষ সুস্থ হয়েছেন, এ পরিসংখ্যানগুলো প্রায় প্রতিদিনই আমরা গণমাধ্যমে পেয়ে থাকি। কিন্তু তারপর যদি একটু গভীরে যেতে চাই, আমাদের যে মানুষ মারা গেলেন তাদের আর্থিক অবস্থান কেমন ছিল, বিত্তবান মানুষ কেমন ছিল, বিত্তহীন মানুষ কেমন ছিল, মধ্যবিত্ত কেমন ছিল, কোন পেশার সঙ্গে তার সংযুক্ত ছিল, - নানা ধরনের ডেটা প্রয়োজন আছে। বিশ্বব্যাপীও প্রয়োজন আছে, আমাদের দেশের প্রয়োজন আছে” – উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন আআমস আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের মেশে অনেক সময়ই ডেটা পাওয়া যায় না, সঠিক ডেটাটি পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ডেটাফুলের যে কার্যক্রম, তাতে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট।”

প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, “আমি জানি তথ্য আছে, কিন্তু অনেক সময় কাজের সময় পাই না। আমি মাঝে মাঝে ছোট একটি তথ্য খুঁজে পাই না। যদি আমি এমন একটি জায়গা পেতাম, যেখানে ওয়ান ক্লিক আমাকে ওই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যায়, যেখানে ওটা আছে এবং সেটাকে আপনার বৈজ্ঞানিকভাবে সাজিয়ে রাখেন, সেটা নিয়ে যদি আমি পড়তে পারি, তাহলে আমার উপকার হবে। শুধু আমি কেন, আমাদের লক্ষ-কোটি মানুষ যারা আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা, নিছক জানা, সবক্ষেত্রে জানতে পারবেন।”

ডেটা ব্যবহার 

আমাদের দেশে ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, আমাদের ডেটা ব্যবহারের সংস্কৃতিটি গড়ে উঠেনি। আমাদের সেটা গড়ে তুলতে হবে।” – বলেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন।

তিনি আরও বলেন, “ইউনাইটেড নেশনস স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশন আনুষ্ঠানিভাবে পরিসংখ্যানের কিছু নীতি ঠিক করে দিয়েছে, গোটা বিশ্বে সরকারি সংস্থাগুলো সেটা মেনে চলেন বা চলার চেষ্টা করেন। যদিও ডেটাফুল একটি বেসরকারি উদ্যোগ, তবুও তারা যেহেতু ডেটা নিয়ে কাজ করবেন, জনগণকে সেবা দেবেন, সেক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকেই যারা ডেটা নিয়ে কাজ করি, তারা যদি সে বিষয়গুলোর দিকে সচেতন থাকি, তাহলে ডেটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না, ডেটার কোনো গোপনীয়তারও প্রয়োজন পড়বে না।”

“ডেটাকে হতে হবে প্রাসঙ্গিক, নিরপেক্ষ এবং প্রত্যেকরই সমান অধিকার থাকতে হবে ব্যবহারে। কাজেই আপনাদের ওয়েবসাইটটিতে যাতে প্রত্যেকের প্রবেশাধিকার থাকে, এবং এই ডেটা যখন আপনারা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করবেন, সেক্ষেত্রে পেশপাগত মান, এবং নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বটা রয়েছে। এক্ষেত্রে দায়িত্ববান হতে হবে এবং স্বচ্ছ্বতা থাকতে হবে।”

এ ছাড়াও তথ্য-উপাত্তের যথাযথ নির্ভরযোগ্য সূত্রের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, ব্যক্তির গোপনীয়তা বা প্রতিষ্ঠানের কোনো স্পর্শকাতর বিষয় থাকলে, সে গোপনীয়তা অবশ্যই রক্ষা করা এবং উপাত্ত ও উপাত্তের বিশ্লেষণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন রাখার আবশ্যকতার ব্যাপারে নজর রাখতে ডেটাফুলকে আহবান জানান পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক এই মহাপরিচালক।

অনলাইনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির সঞ্চলনার দায়িত্ব পালন করেন ডেটাফুলের আশফাকুর রহমান।