এআই বিজ্ঞানীকে চাকরিচ্যুত করে তোপের মুখে গুগল

কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিজ্ঞানীকে চাকরিচ্যুত করার পর তোপের মুখে পড়েছে গুগল। সার্চ জায়ান্ট খ্যাত প্রতিষ্ঠানটির কাছে জবাব চেয়ে এক হাজার দুইশ’রও বেশি গুগল কর্মী এবং এক হাজার পাঁচশ’রও বেশি গবেষক নেমেছেন প্রতিবাদে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2020, 10:18 AM
Updated : 5 Dec 2020, 10:18 AM

গুগলকে থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া ওই বিজ্ঞানীর নাম টিমিট গেব্রু। প্রতিষ্ঠানটির ‘এথিকাল আই’ দলের কারিগরি সহ-নেতত্বে ছিলেন তিনি।

গুগলের বিরুদ্ধে তার গবেষণা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন গেব্রু। প্রতিষ্ঠানটির বৈচিত্র্য প্রচেষ্টা নিয়ে সমালোচনা করার কারণে চাকরি হারিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

বুধবার এক টুইটে গেব্রু জানান, প্রতিষ্ঠানের এআই বিভাগে কর্মরত নারী ও বন্ধুদের অভ্যন্তরীণ এক গ্রুপে ইমেইল পাঠিয়েছিলেন তিনি।

গার্ডিয়ান প্রযুক্তি নিউজলেটার প্ল্যাটফর্মারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ওই মেইলে এক গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা লেখা ছিল, গুগলের বৈচিত্র্য কর্মসূচী নিয়েও মন্তব্য ছিল বিস্তর।

মেইলে গেব্রু বলেছিলেন, গুগলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের বেলায় “কোনো জবাবদিহিতা” নেই। তিনি লিখেছিলেন, “আপনার জীবনে শনি নেমে আসবে যখন আপনার যথেষ্ট পরিচিত নেই এমন ব্যক্তির বেলায় সমর্থন দেবেন, অন্যান্য নেতৃস্থানীয়দের আপনি মনক্ষুন্ন করে ফেলবেন।”

“এমন কোনো পথ নেই যে আরও নথি বা আরও আলোচনার মাধ্যমে কিছু অর্জিত হবে।” – যোগ করেছেন তিনি।

গেব্রুর গবেষণা নিয়ে সমস্যা শুরু হয় নভেম্বরে। গুগলের এক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক তাকে জানান, এক গবেষণা থেকে নাম সরিয়ে নিতে হবে গেব্রুকে। গবেষণাটিতে মূলত বলা হয়েছে, মানব হাতের লেখা এবং বক্তব্য নকল করতে পারে এমন এআই প্রক্রিয়া যাতে ঐতিহাসিক লিঙ্গ বৈষম্য বর্ধিত করতে এবং আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও পদক্ষেপ নিতে পারে।

“আমার মনে হয়েছে আমাদেরকে সেন্সর করা হচ্ছে এবং সব নৈতিক এআই গবেষণায় এর প্রয়োগ রয়েছে। আপনি সবসময়ই এমন গবেষণা করতে পারবেন না যা প্রতিষ্ঠানকে খুশি রাখবে এবং সমস্যা তুলে ধরবে না।”

গেব্রু জানিয়েছেন, গুগলের সঙ্গে মধ্যস্থতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। গুগল মূল আপত্তির পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিলে নাম সরিয়ে নিতেন তিনি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যাপার কীভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা করতেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি এতে রাজি না হলে, পরে এক সময় পদত্যাগ করবেন বলে ভেবেছিলেন গেব্রু।

গুগল তার অনুরোধ রাখেনি, এবং তার বৈচিত্র্য বিষয়ক ওই মেইল পাঠানোর পরপরই ব্যবস্থা নিয়েছে। গেব্রুর দলের সদস্যদেরকে গুগল জানিয়েছে, পদত্যাগ করেছেন তিনি। ওই সময়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক মেইল প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখনও গুগল বলছে, গেব্রু পদত্যাগ করেছেন।

কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক মেইলে গুগলের এআই বিভাগ প্রধান জেফ ডিন বলেছেন, ওই গবেষণা প্রতিবেদন “আমাদের প্রকাশনার যোগ্য হয়নি”। তিনি আরও লিখেছেন, “আমার আরও খারাপ লেগেছে যে আপনারা অনেকে এ সপ্তাহে টিমিটের কাছ থেকে মেইল পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ডিইআই প্রোগ্রামের কাজ বন্ধ করার জন্য। দয়া করে তা করবেন না।”

শুক্রবার পৃথক এক দীর্ঘ বিবৃতিতে গেব্রুর চাকরিচ্যুতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। সেখানেও পুরো ব্যাপারটিকে পদত্যাগ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ডিন।

ডিনের মন্তব্যের বাইরে বাড়তি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি গুগল।