দেশের দুই প্রান্তে বসেও ‘মুখোমুখি’ ওপরাহ - বারাক ওবামা

‘দ্য ওপরাহ কনভারসেশন’ এর সর্বশেষ পর্বে অংশ নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। অনুষ্ঠানে দেখা গেছে, ওপরাহ উইনফ্রে ও বারাক ওবামা মুখোমুখি গল্প করেছেন ছিমছাম এক বসার ঘরে। সে সময় তাদের পাশের ফায়ারপ্লেসে আগুনও জ্বলছিল। আদতে কিন্তু পুরোটাই ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি, প্রযুক্তির জাদু।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 03:28 PM
Updated : 18 Nov 2020, 03:28 PM

করোনাভাইরাস বাস্তবতায় নিজ নিজ নিরাপদ অবস্থান থেকে পুরোটা শুটিং সম্পন্ন করেছেন ওবামা এবং ওপরাহ। গ্রিন স্ক্রিন ও অন্যান্য প্রযুক্তি কৌশলের বদৌলতে দু’জনকে দেখে মনে হয়েছে একই ঘরে বসে রয়েছেন তারা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’ নামে যে নতুন বইটি প্রকাশ করেছেন, সেটি নিয়ে কথা বলতেই 'মুখোমুখি' হয়েছিলেন দু'জন।

শুটিংয়ের সময় ওবামা ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসির এক স্টুডিওতে, অন্যদিকে ওপরাহ ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্টা বারবারা অঞ্চলে নিজ বাসায়।

গুগলের হিসেবে ওয়াশিংটন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দূরত্ব দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি। ওয়াশিংটন থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ১৬ ঘণ্টা ছয় মিনিট, আর হেঁটে যেতে প্রায় ১৪ দিন।

ছবি: অ্যাপলটিভি

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ওই অনুষ্ঠানের গল্প তুলে ধরেছে দ্য ওপরাহ ম্যাগাজিন। অনুষ্ঠানটিকে এতোটাই বাস্তব মনে হয়েছে যে কেউ না বলে দিলে প্রযুক্তির ফাঁকি ধরাই হয়তো সম্ভব হত না। ওপরাহ অবশ্য অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলেছিলেন, “প্রযুক্তির বদৌলতে, আমরা একই ঘরে মুখোমুখি বসে কথা বলতে পারছি, এমনকি আমাদের মাস্কও পরতে হচ্ছে না।” প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই সময় মজা করে বলেন, “আমাদের এখানে আগুনও জ্বলছে।”

অনুষ্ঠানের পরে ওপরাহ জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর বাস্তবতায় সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়েই ওপরাহের টিমকে সৃজনশীল পথ বেছে নিতে হয়েছিল। তিনি বলেন, “মুখোমুখি বসে কথা বলার কোনো তুলনা হয় না, কিন্তু এটিকে তার পরের সবচেয়ে ভালো কিছু বলা যেতে পারে।”

ওপরাহ’র টিম ‘হার্পো প্রোডাকশনস’ জানিয়েছে, মুখোমুখি কথা বলার বদলে মনিটরের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছেন ওপরাহ এবং ওবামা। মনিটরকে ইচ্ছা করেই চোখ বরাবর বসানো হয়েছিল, যাতে তাকানো দেখে মনে হয় দুজনেই দুজনকে দেখছেন।

সাধারণত টক শো ধাঁচের অনুষ্ঠানে ওপরাহ ইশারায় দেওয়া কিউয়ের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু এবার তাকে নির্ভর করতে হয়েছে ক্যামেরা লেন্সের নিচেই থাকা মনিটরের উপর। এ প্রসঙ্গে ওপরাহ বলেছেন, “স্বাভাবিকভাবে মুখোমুখি বসে থাকাটা অনেক বেশি ভালো, কিন্তু এটি ছিল অনেকটাই কাছাকাছি। লেন্সের দিকে তাকিয়ে থাকার বদলে আপনি অন্য মানুষটির শারীরিক ভাষা পড়তে পারছেন, মুখভঙ্গি দেখতে পাচ্ছেন, সবকিছুই চোখে পড়ছে।”

ছবি: অ্যাপলটিভি

“প্রেসিডেন্ট ওবামার সাক্ষাৎকার নিয়ে মনে হচ্ছিল, তিনি আমার সামনেই রয়েছেন।” – যোগ করেছেন ওপরাহ। গ্রিন স্ক্রিন প্রযুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সবুজ বা সাদা কোনো কিছু পরতে মানা করা হয়েছিল। এমনকি স্বচ্ছ্ব কোনো গ্লাস থেকেও পানি খেতে মানা করা হয়েছিল। কারণ গ্রিন স্ক্রিনে গায়েব হয়ে যেতে পারে সেটি, দেখে মনে হতে পারে কোনো গ্লাস নেই, শূন্য কিছু থেকে পানি খাচ্ছেন। এজন্য ওবামা ও ওপরাহকে একই রকম দেখতে চায়ের মগ দেওয়া হয়েছিল।

পুরো আয়োজনটিকে মসৃণভাবে তুলে ধরতে দুটি পাশেই একই ধরনের আসবাবের ব্যবস্থা করা হয়েছিল “একদম সুনির্দিষ্ট” মাপে। এ ছাড়াও কারিগরি জটিলতা এড়াতে ওয়াশিংটন ডিসি এবং ক্যালিফোর্নিয়া, দুই স্থানেই একই মডেলের ক্যামেরা, লেন্স, লাইট এবং অডিও ধারণের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছিল কারিগরি দলটি।

অনুষ্ঠানে ওবামা এবং ওপরাহ’র যে ঘরটি দর্শকরা দেখেছেন তা অর্ধেক বাস্তব, অর্ধেক কাল্পনিক। “আসবাব ও প্রেসিডেন্টকে এক স্থানে বসানোর পর, তার ছবি, চেয়ার, সাইড টেবিল, গানির গ্লাস, মেঝে, এমনকি ছায়াও ফাইবার লাইনের মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। সেখানে উইনফ্রের বসার ঘরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে, ভার্চুয়ালি দুজনকে এভাবে এক স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।” –ব্যাখ্যা করেন হার্পো প্রোডাকশনসের প্রতিনিধি।

পুরো অনুষ্ঠানটির প্রেরণা ওপরাহ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী ড্রু ব্যারিমোরের ডেটাইম টকশো থেকে। ওখানে উপস্থিত তারকা ক্যামেরন ডিয়াজের সঙ্গে অনেকটা এভাবেই দূরে বসে কথা বলেছিলেন ব্যারিমোর। কিন্তু দেখে মনে হয়েছিল মুখোমুখিই বসেছেন তারা।

ওপরাহ চেয়েছিলেন তার অনুষ্ঠান দেখে যাতে মনে হয় অন্তরঙ্গ কোনো স্থানে বসে কথা বলছেন তিনি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মহাকাশে বসতে চেয়েছিলেন! অন্তত সেরকমটাই মনে হয়েছে তার বক্তব্য থেকে। অনুষ্ঠানে মজা করেই বলেন, “আমাদের মহাকাশে বসা উচিত ছিল। আমরা নেপচুনের বাবলে বসে থাকতে পারতাম।”