এবার পাকিস্তানে নিষিদ্ধ টিকটক, কারণ ‘অনৈতিকতা’

এবার পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হলো টিকটক। “অনৈতিক ও অশ্লীল” কনটেন্ট ঠেকাতে সোশাল ভিডিও অ্যাপটিকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে দেশটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2020, 10:24 AM
Updated : 10 Oct 2020, 10:24 AM

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির ‘অনৈতিক ও অশ্লীল’ কনটেন্টের ব্যাপারে পাকিস্তানে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে অভিযোগ এসেছিল। পরে সে অভিযোগের ভিত্তিতে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ)।

তবে, টিকটক যদি অবৈধ কনটেন্ট প্রশ্নে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করে দেখবে বলে জানিয়েছে পিটিএ।

টিকটক বলছে, “যেসব বাজারে অ্যাপ রয়েছে, সেসব বাজারের আইন মেনে চলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”       

“আমরা নিয়মিত পিটিএ এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, এবং তাদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছি। আমরা একটি উপসংহারে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী যা আমাদেরকে দেশটির প্রাণবন্ত এবং সৃজনশীল কমিউনিটিকে সেবা দিয়ে নিজেদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে দেবে।” – বলেছে টিকটক।

টিকটক অ্যাপটির মালিক বেইজিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স। খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠা অ্যাপটিকে নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই তৈরি হয়েছে গোপনতা শঙ্কা। এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, তদন্ত শুরু করে অ্যাপটির ব্যাপারে। তাদের শঙ্কা, চীন চাইলেই মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটা দিয়ে দেবে মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।

তবে, টিকটক ও বাইটড্যান্স বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। টিকটক নিষিদ্ধ করার বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে ভারত। জুনেই টিকটক নিষিদ্ধ করে দিয়েছে দেশটি। আর যুক্তরাষ্ট্র টিকটককে নির্দেশ দিয়েছে নিজেদের মার্কিন ব্যবসা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে। অস্ট্রেলিয়াতেও চাপের মুখে রয়েছে অ্যাপটি।

পিটিএ মুখপাত্রের তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানে টিকটকের দুই কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্লেষণী সংস্থা সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুসারে, গত ১২ মাসে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেইসবুকের পর ডাউনলোডের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অ্যাপটি।

পাকিস্তানে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিন পাকিস্তানি কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্যে, জুলাইয়ে টিকটককে সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি দেওয়া হয়েছে।         

“আমরা তাদেরকে অনেকবার বলেছি অনৈতিক ও অশ্লীল কনটেন্ট ঠেকাতে কার্যকরী কোনো প্রক্রিয়া নিয়ে আসতে।” – সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেছেন এ কথা।

দ্বিতীয় আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, এ সমস্যা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনিই টেলিকম কর্তৃপক্ষকে অশ্লীল কনটেন্টের ব্যাপারে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

গত মাসে টিন্ডার, গ্রাইন্ডারসহ পাঁচটি ডেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে পিটিএ।

ব্যাপারটিকে এতো সহজ করে দেখছেন না পাকিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন এক সংস্থার পরিচালক। ‘বোলো ভাই’ নামে ওই গ্রুপের পরিচালক উসমান খিলজী জানিয়েছেন, এ পদক্ষেপ পাকিস্তান সরকারের ডিজিটাল পাকিস্তান স্বপ্নের ক্ষতিসাধন করলো।

“সরকার এমন একটি এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপকে নিষিদ্ধ করলো যা কোটি মানুষ ব্যবহার করেন, এবং হাজারো কনটেন্ট নির্মাতার আয়ের উৎস, বিশেষ করে যারা ছোটো শহর ও গ্রাম থেকে আসছে, এটি সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত গণতান্ত্রিক স্বাভাবিকতা ও মৌলিক অধিকারের উপহাস।” - বলেছেন খিলজী।

অধিকার বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে পাকিস্তান তার নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার দেয় না।

“টিকটক নিষেধাজ্ঞা এমন একটি আবহে এসেছে, যেখানে টেলিভিশনে কণ্ঠরোধ করা হয়, পত্রিকা থেকে উধাও হয়ে যায় কলাম, ব্লক হয়ে যায় ওয়েবসাইট, নিষিদ্ধ হয় টিভি বিজ্ঞাপন।” – টুইটারে জানিয়েছে অ্যামনেস্টির সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অফিস।