এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে শীর্ষ চীনা চিপ নির্মাতা

অনুমোদন ছাড়া চীনের ‘সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনের’ (এসএমআইসি) কাছে প্রযুক্তি বিক্রি করতে পারবে না মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান - এক চিঠির মাধ্যমে এ নির্দেশনা জানিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2020, 12:09 PM
Updated : 28 Sept 2020, 12:09 PM

প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে মন্তব্য করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞাটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সংঘাত আরও বাড়াবে। শুক্রবার মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘চীন নিজেদের সামরিক খাতে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, এমন ঝুঁকি’ পর্যালোচনা করার পরই এ পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে।

এ পদক্ষেপের ফলে পণ্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় মার্কিন সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি পাবে না চীনের নেতৃস্থানীয় চিপ নির্মাতা এসএমআইসি। চীন প্রশ্নে কয়েক বছর ধরেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ে, টিকটক, উইচ্যাটের ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি’ মুখপাত্র জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অনুমোদন প্রশ্নে মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই ব্যুরোর, কিন্তু তারা “মার্কিন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির সম্ভাব্য হুমকিতে ক্রমাগত নজর রাখছে এবং তা বিশ্লেষণ করছে” এবং এ বিষয়ে “প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে”।  

চীনের চিপ নির্মাতার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানোর ব্যাপারটি প্রথমে জানিয়েছে দ্য ফিনানশিয়াল টাইমস।

চীনা চিপ নির্মাতা এসএমআইসি প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেন্টাগনও। তারা জানিয়েছে, এসএমআইসির শেয়ারধারীদের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিরা রয়েছেন, চীনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার ‘এসওএস ইন্টারন্যাশনাল’ এর এক গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা ছিল, চীনের সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নিজ গবেষণায় এসএমআইসি প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার তুলে ধরেছেন। অন্যান্য এসএমআইসি ক্রেতাদের সঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলেও দাবি করা হয়েছিল প্রতিবেদনটিতে।

শনিবার এক এসএমআইসি মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের চীনা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কোনো যোগসাজশ নেই, প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাণিজ্যিক ও নাগরিক ব্যবহারের জন্য চিপ তৈরি করে। নতুন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসএমআইসি কোনো অফিশিয়াল নোট পায়নি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

গত বছর চীন ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছে কম্পিউটার চিপ আমদানিতে। বিশ্বের মোবাইলে ফোন, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশ এবং কম্পিউটারের বড় একটি অংশ চীনা কারখানায় তৈরি হলেও, দেশটিকে প্রায়ই প্রয়োজনীয় সিলিকন চিপ বাইরে থেকে আনতে হয়।

চীনের নেতা শি জিনপিং চীনকে সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য আরও অনেক প্রযুক্তিতে স্বাবলম্বী করে তুলতে চাইছেন, এ লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপও নিয়েছে তার প্রশাসন।  

এসএমআইসি চীনের শীর্ষ চিপ নির্মাতা হলেও, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ও ‘তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির’ তুলনায় অনেক বছর পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানের সর্বাধুনিক চাহিদার অ্যাপের জন্য যে চিপ প্রয়োজন, তা তৈরির সক্ষমতা এখনও এসএমআইসি’র নেই বলেই জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

অপেক্ষাকৃত সহজ মানের চিপ তৈরিতেও প্রতিষ্ঠানটিকে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ও যন্ত্রের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। বিনিয়োগ ব্যাংক জেফ্রিসের বিশ্লেষকরা বলছেন, এসএমআইসি উপাদানের অর্ধেকই আসে মার্কিন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে। অংশীদাররা যদি সেবা না দেয়, এবং প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন উপকরণ হাল আমলের করে না দেয়, তাহলে ব্যবসা করে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে এসএমআইসি’র জন্য।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, এরই মধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে এসএমআইসি’র ব্যবসায়। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রির প্রায় এক পঞ্চমাংশ-ই হয়েছে হুয়াওয়ের কাছে। হুয়াওয়েকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চিপ কেনা প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে ব্যবসা কমেছে এসএমআইসি’র।