লকডাউনে বেড়েছে প্রতিশোধমূলক পর্নের তাণ্ডব

এ বছর প্রতিশোধমূলক পর্ন অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। লকডাউনের কারণে এ সমস্যা আগের চেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মনে করছেন এ বিষয়ে কাজ করছেন এমন কর্মীরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2020, 10:28 AM
Updated : 17 Sept 2020, 10:28 AM

সম্পর্ক ভেঙে গেলে কেউ যখন প্রতিশোধের লক্ষ্যে সাবেক সঙ্গীর অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করেন বা পোস্ট করার হুমকি দেন, সাধারণভাবে তাকে রিভেঞ্জ পর্ন বলে বা প্রতিশোধমূলক পর্ন বলে। সাধারণত নারীরা এর সবচেয়ে বড় শিকার হয়ে থাকেন।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, যুক্তরাজ্যে এ বছর প্রতিশোধমূলক পর্ন সম্পর্কিত প্রায় দুই হাজার পঞ্চাশটি অভিযোগ এসেছে। হিসেবে গত বছরের তুলনায় অভিযোগ বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করার এ সময়টিতেও কমছে না অভিযোগের সংখ্যা। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে হেল্পলাইন সেবা পরিচালকদের। তাদের আশঙ্কা, এটিই হয়তো হতে চলেছে “নতুন স্বাভাবিক”।

পাঁচ বছর আগেই অবশ্য প্রতিশোধমূলক পর্নকে যুক্তরাজ্য ও ওয়েলসে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গৃহ সহিংসতা বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ‘রিফিউজি’ এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি সাতজন নারীর মধ্যে একজনকে অন্তরঙ্গ ছবি বিনা অনুমতিতে অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

শুধু লকডাউনের সময়টিতেই ‘যুক্তরাজ্য হেল্পলাইনে’ এরই মধ্যে এতো বেশি প্রতিশোধমূলক পর্ন সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এসেছে, যা পুরো ২০১৯ সালেও আসেনি। দুই তৃতীয়াংশ অভিযোগের ঘটনাই নারীদের নিয়ে।

দাতব্য সংস্থা ‘সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিং’ পরিচালনা করছে হেল্পলাইনটি। সংস্থাটি ‘ইউকে সেইফার ইন্টারনেট সেন্টার’ প্রকল্পের অংশ। এ বছর মোট ২২ হাজার ২১৫টি ছবি মুছতে সহযোগিতা করেছে সংস্থাটি, ৯৪ শতাংশ ছবির ব্যাপারেই অভিযোগ এসেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।

অগাস্টে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

নতুন স্বাভাবিক?

ইউকে সেইফার ইন্টারনেট সেন্টারের পরিচালক ডেভিড রাইট বলছেন, “লকডাউনের কারণে তীব্র কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে যা অসংখ্য সমস্যাকে সামনে নিয়ে আসছে।”

“এখানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে ইঙ্গিত করছে আরও দীর্ঘ-মেয়াদী কিছু হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, আমরা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত থাকবো। এটাই না নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠে তা ভেবে চিন্তা হচ্ছে।” – বলেছেন রাইট।

গৃহ সহিংসতা বিষয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা ‘উইমেন’স এইড ফাউন্ডেশন’ জানিয়েছে, উদ্ধার পাওয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশেরও বেশি অভিযুক্ত'র সঙ্গেই থাকতেন, এবং লকডাউনের সময়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠেছিল বলে জানিয়েছেন।

‘উইমেন’স এইড ফাউন্ডেশন’ এর ক্যাম্পেইন ও নীতি ব্যবস্থাপক লুসি হ্যাডলি’র মতে, প্রতিশোধমূলক পর্ন খুবই প্রচলিত হয়রানি।

“ব্যক্তিগত যৌন ছবি ব্যক্তির সম্মতি ছাড়াই প্রকাশ – প্রকাশের হুমকি দেওয়া – খুবই প্রচলিত হয়রানি, এবং বিশেষ করে এটি স্বল্পবয়সী নারীদের ক্ষতি করছে।” –বলেছেন হ্যাডলি।

রিভেঞ্জ পর্নের বিষয়টি সাধারণত অনলাইনে বা ভার্চুয়াল জগতে ঘটলেও হ্যাডলি বলছেন, “ছবি ভিত্তিক কাঠামোর হয়রানিকে – যাকে প্রচলিত ভাষায় প্রতিশোধমূলক পর্ন বলা হয় – অবশ্যই বাস্তব জীবনে হয়রানির মতোই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।”

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য

প্রতিশোধমূলক পর্নের শিকার হয়েছিলেন ফলামি প্রিহেয়। সাবেক সঙ্গী অনলাইনে তার খোলামেলা ছবি ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে সেই সঙ্গীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এবং তাকে হয়রানি ও অশালীন ছবি বিতরণের দায়ে ছয় মাসের স্থগিত সাজা দেওয়া হয়।

প্রিহেয় বর্তমানে ‘ভিক্টিমস অফ দ্য ইন্টারনেট ক্রাইম: স্পিক আউট’ নামে নিজস্ব ওয়েবসাইট চালাচ্ছেন। এ ধরনের সমস্যায় কবলিত ভুক্তভোগীদের মানসিক সাহস যোগাতে কাজ করছে সাইটটি।

প্রিহেয়’র ভাষ্যে, “লকডাউনে এ ধরনের সমস্যা আরও বাড়ার ঘটনাটি অবাক করার মতো কিছু নয়, এখন আরও এবং আরও বেশি মানুষ অনলাইনে সম্পর্ক গড়তে বাধ্য হচ্ছে।”

“সমস্যা আগে থেকেই ছিল, শুধু লকডাউনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে, যৌন শিকার অনুসন্ধানের একটি সহজ জায়গা হয়েছে।” – যোগ করেছে প্রিহেয়।