‘রাজনীতিবিদরা কী বলছেন তা জনসাধারণের জানা প্রয়োজন অথবা সংবাদ মূল্যের জন্যই ওইসব পোস্ট সরানো উচিৎ হবে না, এই ধরনের নানা যুক্তি দিচ্ছিলেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। এই প্রশ্ন সামনে এসেছিল যখন টুইটার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশ্নবিদ্ধ পোস্টগুলোয় লেবেল সাঁটানো শুরু করে। যুক্তিসংগত প্রশ্ন ছিলো, ফেইসবুকও এমন পদক্ষেপ নেবে কি না। শেষ পর্যন্ত গতকাল এক লাইভস্ট্রিমে সিদ্ধান্ত টানলেন তিনি।
জাকারবার্গ জানিয়েছেন, শুধু লেবেল নয়, কোনো বিজ্ঞাপনে বিদ্বেষমূলক বার্তা যাতে না ছড়ায়, সেজন্যও ব্যবস্থা নেবে মার্কিন এ সোশাল জায়ান্ট। সহিংসতায় ইন্ধন যোগাচ্ছে বা সহিংসতাকে মহিমান্বিত করছে এমন পোস্ট মুছে দেবে ফেইসবুক। এমনকি রাজনীতিবিদদের পোস্টও নিয়ম ভাঙলে রেহাই পাবে না। -- খবর প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেটের।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বর্ণবাদ এবং বিভ্রান্তিকর ভোটার তথ্যের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচারের প্রতিবাদে ফেইসবুকে জুলাই মাসে বিজ্ঞাপন প্রচার করবে না বড় বড় খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হন্ডা, বিএমডব্লিউ, অ্যাডোবির মতো ব্র্যান্ড। ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হচ্ছে “#StopHateforProfit” নামে।
কিছুদিন আগেই ছয়টি সংস্থার এক গ্রুপ জুলাই মাসে বিজ্ঞাপন দাতাদের সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানায়। ওই ছয় গ্রুপের মধ্যে অ্যান্টিডিফেমেশন লিগ, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল, স্লিপিং জায়ান্টস এবং কালার অফ চেঞ্জের মতো সংস্থা রয়েছে। বড় ব্র্যান্ডগুলো যে “নিরাপত্তার চেয়ে মুনাফাকে বড় করে দেখা প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করবে না”, সে বিষয়টিই দেখানোর জন্য এ ধরনের আহবান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞাপন দাতারা সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরপরই লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আসেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ, সবাইকে জানান ফেইসবুকের নতুন কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে। জাকারবার্গ বলেছেন, “বিভেদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এমন বিভাজনমূলক এবং উত্তপ্ত বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে আরও বেশি কিছু করতে চাই আমরা”।
অথচ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এক বিতর্কিত পোস্ট প্রশ্নে জাকারবার্গ বলেছিলেন, “আমি মনে করি না সামাজিক মাধ্যমের উচিত সত্যের বিচার করা। রাজনীতিবিদরা কী বলছেন তা মানুষের দেখা উচিত। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন একজন ব্যক্তির কাজের মূল্যায়ন তখনই হওয়া সম্ভব যখন তাদের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনার সুযোগ থাকে।”
ফেইসবুকের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারেননি “#StopHateforProfit” ক্যাম্পেইন সদস্যরা। ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখা এক বিবৃতিতে তারা লিখে রেখেছেন, “ফেইসবুকের সঙ্গে এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। তারা অতীতেও ক্ষমা চেয়েছে। প্ল্যাটফর্মটি জড়িত এমন প্রতিটি দূর্ঘটনার পর দুর্বল পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি এখন শেষ হওয়া প্রয়োজন।”
জাকারবার্গের ঘোষণা আসার পরেও বিজ্ঞাপন বয়কট কর্মসূচী চলছেই। শুক্রবারের ওই লাইভস্ট্রিমের পর অন্তত ৩০ দিনের জন্য সব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোমল পানীয় ব্র্যান্ড কোকা-কোলা।