ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এতো সহজে হবে না

সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পুরোনো আইন বাতিল বা বদলে দিতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এতো সহজে সেটি সম্ভবত সম্ভব হবে না।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 03:11 PM
Updated : 2 June 2020, 03:11 PM

গত সপ্তাহে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। ওই নির্বাহী আদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ফেডারেল ট্রেড কমিশনের কাছে আবেদন বা পিটিশন করতে বলা হয়েছে, যেন ফেডারেল ট্রেড কমিশন ১৯৯৬ সালের ‘কমিউনিকেশনস ডিসেন্সি অ্যাক্ট’-এর ধারা ২৩০ সংশোধন করে দেয়। অর্থাৎ এ ধরার বদৌলতে সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো যে আইনি সুরক্ষা পায়, সে নিয়মাবলী সংশোধন করতে বলা হয়েছে।   

এ প্রস্তাবে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এফসিসি চেয়ারম্যান অজিত পাই।  -- খবর রয়টার্সের।

মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন বা এফসিসি অনেক আগেও একবার জানিয়েছিল, ইন্টারনেট সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান করতে পারেন না তারা।

এবার লিখিত এক বিবৃতিতে অজিত পাই বলছেন, “এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিতর্ক” এবং এফসিসি “কোনো আইন প্রণয়নের জন্য পিটিশন এলে তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করবে”।

এর আগে ২০১৮ সালের অগাস্টে পাই জানিয়েছিলেন, সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো বাক স্বাধীনতাকে আপন করে নেবে বলে তিনি আশা করেন এবং এফসিসি’র দিক থেকে ফেইসবুক, গুগল এবং টুইটারের মতো ওয়েবসাইটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

“মুক্ত বক্তব্যের দোহাই দিয়ে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। সরকার এখানে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে আসেনি। আমাদের তা করার কোনো এখতিয়ার নেই”। - এক ফোরামে বলেছিলেন পাই।           

ট্রাম্প গঠিত কমিশনের পাঁচ সদস্যের একজন মাইক ও’রাইলি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। “উদারপন্থী প্রযুক্তি নেতারা যেভাবে কণ্ঠ রোধ করছেন একজন রক্ষণশীল হিসাবে তাতে আমি বিচলিত। কিন্তু একইসঙ্গে, আমি গভীরভাবে প্রথম সংশোধনীর প্রতিও বিস্বস্ত, যার সংশ্লিষ্টতা এখানে সবচেয়ে বেশি।” - এক টুইটে লিখেছেন ও’রাইলি।

উল্লেখ্য, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বা ‘ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট’ বাক স্বাধীনতা ‍নিশ্চিত করেছে।

রিপাবলিকান ও সাবেক এফসিসি কমিশনার রবার্ট ম্যাকডাওয়েল এক টুইটে লিখেছেন, পর্যালোচনার পুরো বিষয়টিই “প্ল্যাটফর্মের রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যবস্থাপনা নির্ভর। এর মধ্যে অনেক অংশই সরকারের ঠেলে দেওয়া। এটা কীভাবে টিকে থাকবে তা-ই আমি বুঝতে পারছি না”।

বস্টন কলেজের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড্যানিয়েল লিয়নস মনে করছেন, পিটিশন নিয়ে এফসিসি’র পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। “বিশেষ করে যেখানে সংস্থাটি যখন বরাবরই প্রথম সংশোধনীর সমর্থনেই ক্রমাগত কাজ করেছে আর এই অনুরোধ বলছে তার উল্টোটা করতে।"

টুইটার বলছে, ট্রাম্পের এই আদেশ আদতে যুগান্তকারী এক আইনের প্রতি তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের প্রকাশ যার লক্ষ্য হচ্ছে একতরফাভাবে ইন্টারনেট এবং অনলাইনের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলা।

‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড টেকনোলজি’-এর প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্দ্রা গিভেনস বলেছেন, নির্বাহী আদেশটি “শুধু সংবিধান লঙ্ঘন করছে যে তা-ই নয়, এটি ২০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত আইনও উপেক্ষা করছে। নির্বাহী আদেশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাঁধা দেবে, ভোটারদের চাপে রাখবে, এবং সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবায় সহিংসতার ইন্ধন যোগাবে”।   

এফসিসি কমিশনার জেসিকা রসেনওরসেল, যিনি একজন ডেমোক্রেট, তিনি বলছেন, এফসিসি’কে “প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের রক্ষাকর্তা বানানো কোনো সমাধান নয়। প্রথম সংশোধনীর পক্ষে ওয়াশিংটনের কথা বলার এটাই সময়”।

আরও খবর-