মানবাধিকারে সাইবার নিরাপত্তা যোগ করার ‘এখনই সময়’

ক্রমেই সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে সাইবার হামলা, পাশাপাশি হয়ে উঠছে আধুনিক এবং গুরুতর। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে কোটি কোটি মানুষ যখন অনলাইনে বেশি সময় কাটাচ্ছেন, তখন সাইবার নিরাপত্তাকে মানবাধিকারের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার সময় এসেছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2020, 12:27 PM
Updated : 29 May 2020, 12:27 PM

নিরাপত্তা পরিষদ এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনানুষ্ঠানিক সভায় মিলিত হয় এবং আলোচনায় স্থান করে নেয় সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, সমাজের জন্য একটি স্থীর এবং নিরাপদ ইন্টারনেট দরকার বলে মত প্রকাশ করেছে সদস্য দেশগুলো।

এস্তোনিয়ার নেতৃত্বে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে শুক্রবার দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক সভাটি করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় সাইবার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে সভায়। তবে, আলোচনায় এসেছে মানবাধিকারের বিষয়টিও।

প্রতিবেদনের দাবি, রাষ্ট্র যখন কোনো সাইবার হামলায় অংশ নেয় তখনই মৌলিক অধিকার ঝুঁকির মুখে পড়ে। যেমন, রাশিয়া যখন ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলো, ২০১৬ সালে ক্রিমিয়া এবং ২০১৮ সালে ইংগুশেটিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলো দেশটি অথবা রাষ্ট্র যখন কোনো ভিন্নমতাবলন্বী বা সাংবাদিকের ফোনে আড়িপাতে, যেমনটা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বারবারই করেছে।

ইন্টারনেট বন্ধ করায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নাগাল পান না গ্রাহক। নিজের মত প্রকাশ, কাজ, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক সেবার সুযোগও বেহাত হয়। রাষ্ট্রীয় হ্যাকিং গোপনতা লঙ্ঘন করার পাশাপাশি অন্যান্য অধিকার অমান্য করতে পারে, বিশেষভাবে মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের বেলায়।

রাষ্ট্রীয় সমর্থনে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করে আমিরাতের অধিকার কর্মী আহমেদ মানসুরকে কারাদণ্ড এবং সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজিকে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে উদাহরণ টেনেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এবং অন্যান্য অধিকার সীমিত করতে চীন এবং ভিয়েতনামের মতো রাষ্ট্র সাইবার নিরাপত্তাকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে বলে দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদনের।

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে এবারের সভায় মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন অন্তত এক ডজন দেশের প্রতিনিধিরা।

“উন্মুক্ত, স্বাধীন এবং স্থিতিশীল সাইবারস্পেস যেখানে আইনি নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো হয় এমন ব্যবস্থার সমর্থন দিয়ে” বক্তব্য দিয়েছে এস্তোনিয়া।

এই অবস্থানের সমর্থন দিয়েছে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, জাপান, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ।

মানবাধিকার বিষয়ে চুপ ছিলো সাইবার খাতে দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র, আর সভায় অংশ নেয়নি রাশিয়া

“নতুন প্রযুক্তি প্রায়ই অধিকার লঙ্ঘন করছে” বলে সম্প্রতি সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। প্রায়ই এই ঘটনা ঘটে সাইবার নিরাপত্তার অভাবে বা সাইবার নিরাপত্তাকে অজুহাত বানিয়ে। সাইবার নিরাপত্তা মানবাধিকারের একটি বিষয়। এটিকে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা শুরু করার আরও বেশি রাষ্ট্রের এটাই সময়- মন্তব্য এসেছে প্রতিবেদনটিতে।