জাকারবার্গের সিদ্ধান্ত ‘বাতিল’ করতে পারবেন যারা

ফেইসবুকের নতুন কনটেন্ট ওভারসাইট বোর্ডের প্রথম বিশ সদস্যের মধ্যে থাকবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, নোবেল শান্তি পদক জয়ী একজন, কয়েকজন সংবিধান আইন বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার সমর্থক – বুধবার জানিয়েছে ফেইসবুক।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2020, 10:40 AM
Updated : 7 May 2020, 10:40 AM

স্বাধীন ওই বোর্ডটিকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ফেইসবুকের “সুপ্রিম কোর্ট” হিসেবে। প্রয়োজনে কনটেন্ট ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে থাকবে কিনা সে বিষয়ে প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রায় দিয়ে তা কার্যকর করতে পারবে নতুন এই বোর্ড। -- প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

বেশ অনেকবার কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রশ্নে ফেইসবুককে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনও সাময়িকভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ছবি যেটিতে নাপাম আক্রমণ থেকে বাঁচতে পলায়নরত নগ্ন শিশুকে দেখা গেছে তা সরিয়ে, আবার কখনও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিমদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অপপ্রচার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে মার্কিন সোশাল জায়ান্টটি।

ওভারসাইট বোর্ড অবশ্য এতো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না। শুধু বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হয়রানি যা মানুষের নিরাপত্তায় আঘাত হানতে পারে তার ছোট একটি অংশে মনোনিবেশ করবে।

ফেইসবুক জানিয়েছে বোর্ড সদস্যরা ২৭টি দেশে বসবাস করেছেন এবং অন্তত ২৯টি ভাষায় কথা বলতে পারেন, যদিও গ্রুপের এক চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্রের এবং চারজন কো-চেয়ারের দুইজন মার্কিনী।     

ফেইসবুকের সঙ্গে মিলে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের বাছাই করেছেন কো-চেয়াররা। ওই চার কো-চেয়ারের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন ফেডারেল বিচারক এবং ধর্ম স্বাধীনতা বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যাকোনেল, সংবিধান আইন বিশেষজ্ঞ জামাল গ্রিন, কলম্বিয়ান আইনজীবি ক্যাটালিনা বোটেরো-মারিনো এবং সাবেক ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী হেলে থর্নিং স্মিড।

অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপিয়ান আদালতে সাবেক মানবাধিকার বিচারক আন্দ্রাস সাজো, ইন্টারনেট সঁ ফ্রন্টিয়ারস প্রধান নির্বাহী জুলি ওওনো, ইয়েমেনি অ্যাক্টিভিস্ট এবং নোবেল শান্তি পদক জয়ী তাওয়াক্কোল কারমান, অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ গবেষক নিকোলাস সুজর, গার্ডিয়ানের সাবেক প্রধান সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজ এবং পাকিস্তানি ডিজিটাল অধিকার সমর্থক নিঘাট ড্যাড।

ফেইসবুকের বৈশ্বিক জনসংযোগের প্রধান নিক ক্লেগ বলেছেন, “আমি আশা করি না যে মানুষ বলবে, ‘ওহ, এরা তো খুব ভালো মানুষ, এটি বেশ সফল হবে’ -  এমন কোনো কারণ নেই যাতে মনে হতে পারে এতে বড় মাপের সফলতা আসবে, যতক্ষণ না সামনের মাস ও বছরগুলোতে কঠিন শুনানি শোনা শুরু হচ্ছে।

বোর্ডটি বেশ দ্রুত কাজ শুরু করবে এবং ক্লেগ জানিয়েছেন, এই গ্রীষ্ম থেকেই সমস্যা শোনা শুরু হবে। সবমিলিয়ে বোর্ডে থাকবেন প্রায় ৪০ জন সদস্য। অন্তত ছয় বছর যাতে চলতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য বোর্ডকে ১৩ কোটি ডলারের তহবিলও তৈরি করে দিয়েছে ফেইসবুক। নিজেদের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানাবে বোর্ড এবং ফেইসবুকের গতানুগতিক আপিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে এমন বিতর্কিত সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।

চাইলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজও বোর্ডের উপর চাপাতে পারবে ফেইসবুক। ফেইসবুক গ্রুপের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়েও সিদ্ধান্ত দিতে পারবে এই বোর্ড।  

“আমরা ইন্টারনেট পুলিশ নই, আমাদেরকে দেখে এটিও মনে করবেন না যে, খুব তাড়াতাড়ি কোনো সমস্যা হাতে নিয়েই তার সমাধান দিয়ে দেবো” – বলেছেন কো-চেয়ার ম্যাকনেল।    

কোনো ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে এবং প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে ফেইসবুকের কাছে অতিরিক্ত ৩০ দিনের সময় চাইতে পারবে বোর্ড।

মত প্রকাশ ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বোর্ডের প্রথম সদস্যদের মধ্যে নানা ধরনের মানুষ রয়েছেন  এবং দেখে ভালো মনে হয়। তারপরও, বোর্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সদস্য বেশি থাকায় উদ্বেগ রয়েই যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজেদের কঠিনতম মুহুর্তগুলো পার করেছে ফেইসবুক।

এদিকে, বোর্ড কতটুকু কার্যকর হবে তা কাজ শুরুর পর বোঝা যাবে জানিয়ে জাতিসংঘের মতামত এবং প্রকাশ স্বাধীনতার বিশেষ দূত ডেভিড কায়ে বলেছেন, “হাজার হোক এটি এমন একটি আদালত যা ফেইসবুকের ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলবে, সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো, তারা কী এমন কোনো প্রশ্ন নেবে যা সিদ্ধান্ত বা রায়ে পরিণত হবে?”