মোস্তাফা জব্বারের দেখা আরেক জামিলুর রেজা চৌধুরী

"প্রকৌশলী হিসেবে তার যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সেটি কম্পিউটার বিষয়ক নয়। কিন্তু কম্পিউটার বিষয়ে তিনি যে পরিমাণ আগ্রহী ছিলেন তা সেই সময়ে কদাচিৎ দুই একজনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেত।"

হাসান বিপুলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2020, 11:15 AM
Updated : 28 April 2020, 03:11 PM

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে অনেক স্মৃতির কথা ফিরিয়ে আনার ফাঁকে এভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে তার গভীর আগ্রহের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টাস্কফোর্সের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী। ওই টাস্ক ফোর্সের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক ও কর মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত প্রথম সরকার।

নবগঠিত বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির তৎকালীন সভাপতি হিসেবে আনন্দ কম্পিউটার্সের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা জব্বারও সেই টাস্ক ফোর্সের সদস্য ছিলেন।

‘রিপোর্ট অন এক্সপোর্ট অফ কম্পিউটার সফটওয়্যার ফ্রম বাংলাদেশ: প্রবলেমস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’ শিরোনমে যে প্রতিবেদন ওই টাস্কফোর্স দিয়েছিল, পরে তা পরিচিতি পায় জেআরসি কমিটি রিপোর্ট নামে।

জব্বার বলেন, "ওই রিপোর্টে আমরা মোট ৪৫টি সুপারিশ করি। এই ৪৫টি সুপারিশ আমরা জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রীর কাছে নিজেরা উপস্থিত হয়ে পেশ করি।

"বাণিজ্যমন্ত্রী এটি জাস্ট দেখে আমাদেরকে এটি বলেন যে, ‘আমরা আপনাদের সুপারিশগুলো গ্রহণ করলাম এবং এগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব’।"

সে সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।

ওই প্রতিবেদনের মোট ২৮টি প্রস্তাব সে সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আমদানি করা কম্পিউটার এবং এর যন্ত্রাংশের ওপর যাবতীয় শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করতে হবে।

পরের অর্থবছরের বাজেটে সেই প্রস্তাবের প্রতিফলন ঘটে এবং যন্ত্রাংশ আমদানি করে দেশে সংযোজিত পার্সোনাল কম্পিউটার বা ক্লোন পিসি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা চৌধুরী সে সময় বুয়েটের অধ্যাপক। নিজের কাজের বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতার কারণে সরকারের সব বড় অবকাঠামো প্রকল্পেই তার ডাক পড়ে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাস ক্ষমতায় ছিল, তাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বও তাকে পালন করতে হয়েছে।

পুরকৌশলের মানুষ হয়েও অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশে কাম্পউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে যুক্ত থেকেছেন নানাভাবে।

১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক ছিলেন। ওই কম্পিউটার সেন্টার পরে বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজিতে পরিণত হয়।

১৯৯৯ সালে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা করার জন্য যে কমিটি করেছিল, জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন তার আহ্বায়ক। ২০০১ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর আইটি টাস্কফোর্সের সদস্য করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটিতেও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি কৌশল নির্ধারণী বিভিন্ন কমিটিতে একসঙ্গে কাজ করার বাইরেও অধ্যাপক জামিলুর রেজার সঙ্গে মোস্তাফা জব্বারের ব্যক্তিগত সখ্য তৈরি হয়েছিল অন্য কারণে।

এই অধ্যাপকের এলিফেন্ট রোডের বাসার দোতলায় একসময় ভাড়া থাকতেন তিনি।

“সংগত কারণেই নিচতলা এবং দোতলার মধ্যে সম্পর্কটা একেবারে আন্তরিক হয়ে গিয়েছিল, পারিবারিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল।"

গাজীপুরে মাত্র ১৩ জন ছাত্র নিয়ে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল চালু করতে গিয়ে কীভাবে জামিলুর রেজা চৌধুরীর সহযোগিতা পেয়েছিলেন, সে কথাও বলেন আজকের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

“সেই স্কুলটার উদ্বোধন করার জন্য গিয়েছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সেলিনা মল্লিক। এই দুজন গিয়ে কম্পিউটার দিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে অথবা শিশুদেরকে যে কম্পিউটার শেখানো দরকার এই বিষয়টা মেনে নিয়ে অসাধারণভাবে সহায়তা করেন।”

মোস্তাফা জব্বার বলেন, "আমি তার কাছে চিরদিন ঋণী থাকব।"