করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে অ্যাপল-গুগল জোট

হাতের মোবাইল ফোনটির মালিক নিজের অজান্তেই সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পথ খুললো সম্প্রতি অ্যাপল ও গুগলের হাত মেলানোর মাধ্যমে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2020, 09:08 PM
Updated : 11 April 2020, 08:41 AM

পরষ্পরের প্রতিদ্বন্দী এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের এমন ঐক্য বিরল। 

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, প্রাথমিকভাবে অ্যাপল ও গুগল এমন সমঝোতায় পৌঁছেছে যার ফলে তৃতীয় পক্ষের কোনো অ্যাপ ডেভেলপার যদি এ লক্ষ্যে অ্যাপ তৈরি করতে চান, আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন সেজন্য দরকরি তথ্য ওই অ্যাপকে দেবে।

পুরো বিষয়টিই মনিটর করা হবে ফোনের ব্লুটুথে জমা থাকা তথ্য ব্যবহার করে। আর এতে যেসব গ্রাহক স্বেচ্ছায় অংশ নেবেন এই প্রযুক্তিতে শুধু তাদের ডেটাই ব্যবহার করা হবে। এতে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে একমত হয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

প্রতিটি স্মার্টফোনই ব্লুটুথ সংযোগের তথ্য জমা রাখে। পরে আবার সংযোগ পাওয়ার বেলায় ওই তথ্য ব্যবহার করে ফোনগুলো। অ্যাপল ও গুগলের এই সমঝোতার ফলে স্মার্টফোনগুলো সবসময় নজর রাখবে তারা কোন কোন ফোনের ব্লুটুথের কাছাকাছি দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেছেন যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট। এই ধারাবাহিক তথ্যাবলীর মধ্যে কোনো ফোনের মালিক যদি কোয়ারেন্টিনে যান বা তার দেহে সংক্রমণ ধরা পরে, তাহলে ফোনের ব্লুটুথে থাকা সংযোগের তথ্য ব্যবহার করে সম্ভাব্য ঝুঁকিতে থাকা অন্য ফোনের মালিকদের সতর্ক করা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে একটি সতর্কবার্তা চলে যাবে প্রথম ফোনটিতেও।

এই প্রযুক্তি কাজ করার পূর্বশর্ত অবশ্য কোয়ারেন্টিনে থাকা বা সংক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তির তথ্য শেয়ার করার ওপর নির্ভর করবে। উদ্যোগটি সফল হলে বিশ্বের প্রায় তিনশ' কোটি স্মার্টফোন ব্যবহাকারী এর আওতায় আসবেন।

অ্যাপল এবং গুগল গত দুই সপ্তাহ ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও শুক্রবারের আগে কেউই এটি প্রকাশ করেনি।

"গোপনতা, স্বচ্ছতা এবং সম্মতি হচ্ছে এই উদ্যোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই এই কৌশল কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী"- এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানদুটি।

এই প্রযুক্তি কাজ করার জন্য ফোনে রাখা যেসব তথ্যের পারষ্পরিক আদানপ্রদান প্রয়োজন, ব্যবসায়ীক কৌশলের অংশ হিসেবেই এতোদিন প্রতিষ্ঠান দুটি তা বন্ধ রেখেছিল। 

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলের আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড মিলে শতকরা একশ' ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে, দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ অংশগ্রহন এই উদ্যোগে জরুরী ছিল। সাম্প্রতিক ঘোষণা সেই বিষয়টিই নিশ্চিত করলো।

প্রতিষ্ঠানদুটি একমত হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় কোনো জিপিএস বা অবস্থানমূলক ডেটা বা ফোনের মালিককে শনাক্ত করা যায় এমন কোনো তথ্য ব্যবহার করা হবে না। একক কোনো সার্ভারেও জমা হবে না এ বিষয়ক তথ্য। মে মাসের মাঝামাঝিতে এ বিষয়ে অ্যাপ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্যাকেজ যা এপিআই নামে পরিচিত, তা উন্মুক্ত করবে অ্যাপল ও গুগল।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগকে সমর্থন দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপরেটিং সিস্টেমের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্যাকেজ যোগ করা হবে যার ফলে আলাদা কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। "এরপরও কেউ যদি তৃতীয় পক্ষীয় অ্যাপ ব্যবহার করতে চান সে পথও খোলা থাকবে।" - প্রতিষ্ঠানদুটির বরাতে বিবিসি বলেছে তাদের প্রতিবেদনে। 

অ্যাপল ও গুগল আশা করছে এই প্রকল্পে যে স্বচ্ছতা থাকবে তা প্রাইভেসি সমর্থকদের আস্বস্ত করবে।

প্রতিষ্ঠান দু’টির ধারণা, তাদের সমাধানে স্মার্টফোনের ব্যাটারি খরচ এ ধরনের অন্যান্য অ্যাপের চেয়ে কম হবে। মহামারী শেষ হলে অঞ্চল ভিত্তিতে সহজে যাতে ফিচারটি বন্ধ করা যায় সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

প্রকল্পটি সফলভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে তা লকডাউন এবং বর্ডারে কড়াকড়ি শিথিল করার বেলায় সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।