‘মানব কম্পিউটার’ ক্যাথরিন জনসনের জীবনাবসান

১৯৬২ সালে মার্কিন নভোচারি জন গ্লেন প্রথম মার্কিনী হিসেবে মহাকাশে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। যাত্রা শুরুর ঠিক আগে বেঁকে বসেন এই নভোচারি। “মেয়েটি কোথায়?” বলেন জন গ্লেন। “সে যদি বলে যে হিসেব ঠিকঠাক আছে কেবল তাহলেই আমি রওনা দেব।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 11:44 AM
Updated : 25 Feb 2020, 11:44 AM

সেই ‘মেয়েটি’ ছিলেন ক্যথরিন জনসন। গণিতে, বিশেষ করে নভোযানের কক্ষপথ হিসেব করায় তার খ্যাতি তখন এতোটাই ছিলো যে তাকে বলা হচ্ছিল মানব কম্পিউটার। নাসার প্রথম দিককার অনেকগুলো মহাকাশ অভিযানে ফ্লাইট পাথ বা নভোযানের যাত্রাপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১০১ বছর বয়সে ২৪ ফেব্রুয়ারি জীবনাবসান হয়েছে তার।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে জনসন অর্জন করেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম।

১৯৫৯ সালে ক্যাথরিন জনসন একটি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যার শিরোনাম ছিল “পৃথিবী সাপেক্ষে নির্দিষ্ট কোনো অবস্থানে উপগ্রহ বসানোর জন্য অ্যাজিমুথ কোণ নির্ধারণ প্রক্রিয়া”। ওই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই নাসার প্রথমদিকের অভিযানগুলোর পথ নির্ধারিত হয়েছিল। ১৯৬১ সালে মহাকাশে প্রথম মার্কিন নভোচারি অ্যালান শেপার্ডকে পাঠানোর অভিযান থেকে শুরু করে প্রায় ৩৩ বছর ধরে জনসনের কাজ মহাকাশ গবেষণার নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

নিজ কাজের জন্য কাজের গণ্ডিতে পরিচিতি দ্রুতই পেয়েছেন জনসন, তবে তারকা খ্যাতি মিলতে লেগেছে চার দশক। শুরুতে, ১৯৫৩ সালে ‘ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিক্স (এনএসিএ)- যোগদান করেন তিনি। এনএসিএ নামের ওই সংস্থাটিই পরে নাম বদলে হয় ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস এজেন্সি বা নাসা।

কর্মক্ষেত্রে শুরুতেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল তাকে। অন্যান্য কৃষ্ণাঙ্গ নারী গণিতবিদদের জন্য ওই সময়ে পৃথক শাখায় বসতে হতো জনসনকে। কিন্তু তার কাজের জন্য তিনি হয়ে উঠছিলেন সুপরিচিত।

সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে নাসা পরিচালক জিম ব্যাডেনস্টাইন বলেছেন, “মহাকাশের জন্য আমাদের দেশের পথ সুগম করতে ভূমিকা রেখেছেন জনসন, নারী ও অন্যান্য বর্ণের মানুষের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। তার প্রয়াস ও দক্ষতা মানুষকে চাঁদে যেতে সাহায্য করেছে এবং তারও আগে মহাকাশে যেতে সাহায্য করেছে। সামনে, ওই একই ধারাবাহিকতায় মানুষ মঙ্গলেও পা রাখবে।”

২০১৫ সালে নিজ অবদানের জন্য ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ পেয়েছিলেন জনসন। ওই পদকটি অসামরিক মার্কিন নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। এরপর, ২০১৭ সালে তাকে সম্মান জানিয়ে নিজেদের একটি ভবনের নাম জনসনের নামে রেখেছে নাসা।

একবার এক সাক্ষাৎকারে তরুণ নাসা প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্য করে জনসন বলেছিলেন, “তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করো, কিন্তু কাজকে পছন্দ করো। তোমার লজ্জা হওয়া উচিত যদি তুমি কাজ পছন্দ না করো। আমি কাজ পছন্দ করি। পছন্দ করি নক্ষত্র এবং যে গল্পগুলো আমরা বলি।”

জনসন প্রসঙ্গে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’-এ সম্মানিত করার সময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, “বর্ণ ও লিঙ্গের সীমানা ভেঙে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে গণিত ও বিজ্ঞানে চাইলেই ভালো করা সম্ভব এবং সাফল্য অর্জন করা সম্ভব তা শিখিয়েছিলেন পথিকৃৎ ক্যাথরিন।”