এই দশকে প্রযুক্তি জগতে থেকে শেখা আট শিক্ষা

শেষ হতে চলেছে ২০১৯। সেই সঙ্গে আরেকটি দশকের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে বিশ্ববাসী। এ দশকটি ছিল প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন দেখা মিলেছে অসাধারণ সব নতুন প্রযুক্তির, সেভাবেই আরেক দিকে দেখা মিলেছে প্রযুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের।

আজরাফ আল মূতীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2019, 09:52 AM
Updated : 22 Dec 2019, 09:52 AM

এই দশকেই প্রযুক্তিপ্রেমীরা শিখেছেন অনলাইনে কাকে বিশ্বাস করতে হবে, ইন্টারনেট জগতে কখন কথা বলতে হবে, কীভাবে অন্য দেশে না গিয়ে বা বাইরের টিভি চ্যানেলের সাহায্য না নিয়েই বড় কোনো অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্ট্রিম করে দেখতে হবে। প্রযুক্তি খাতের ক্ষমতাও চোখে পড়েছে এ দশকে।

ভেবে দেখুন, গত দশকের শেষেও আইফোনের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। উবার ও লিফটের মতো সেবার কোনো খোঁজ ছিল না। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিরি, ইন্সটাগ্রামের মতো সেবা এতোটা কাজে দেবে সে ব্যাপারে কল্পনাও করেননি সাধারণ প্রযুক্তিপ্রেমীরা।

অথচ এখন সমানতালে চলছে সেবাগুলো। এগুলো ব্যবহার করে অনেক সময় বাহবা যেমন পাচ্ছেন, ঠিক সেভাবে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়ছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা।

সবমিলিয়ে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের কল্যাণে আমরা শিখেছি অনেক কিছু, সামনের দশকে শিখতে হবে আরও অনেক কিছু।

সিনেটের এক প্রতিবেদনের আলোকে চলুন একবার দেখে নেই কোন বিষয়গুলো শিখেছি আমরা এই দশকে-

১. নিজেকে খুঁজে নিয়ে ছড়িয়ে দিন

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে ‘নিজস্বতা’। ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকের এই যুগে সবাই চেষ্টা করছেন ভিন্ন কিছু দেখাতে ও নতুন কিছু নিয়ে হাজির হতে। কিন্তু আখেরে দেখা যায়, কনটেন্ট নির্মাতাদের ‘নিজস্বতা’কেই বেশি পছন্দ করছেন সবাই।

নিজস্বতা প্রভাব রেখেছে নানাবিধ অনলাইন কর্মকাণ্ডেও। এ দশকে প্রযুক্তিপ্রেমীরা শিখেছেন কীভাবে নিজেকে খুঁজে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হয়, গণআন্দোলন ও সমাজ সংস্কারে শামিল হতে হয়।

২. গোপনতা গোপনতা গোপনতা

গোপনতাই মূল, বাদবাকি সব শুভঙ্করের ফাঁকি- এ শিক্ষাই আমাদেরকে দিয়েছে এই দশক। সামাজিক মাধ্যম ও হরেক রকম ইন্টারনেট সেবার ভিড়ে গোপনতা ঠিক রাখা বড় দায়। অনলাইনে গোপনতা ফাঁসের মাশুল দিতে হয়েছে খ্যাতনামা তারকা থেকে শুরু করে অনেককেই।

পুরোনো সামাজিক মাধ্যম পোস্ট যেমন অনেক সময় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিক সেভাবেই বিপদের হাত থেকেও রক্ষা করেছে অনেককে।

এ দশকে গোপনতা নিয়ে হয়েছে ব্যবসা, বিশ্ব রাজনীতিতে পড়েছে প্রভাব এবং পরিবর্তন হয়েছে গতানুগতিক অনেক ধ্যান ধারণার। সবমিলিয়ে এ দশক আমাদেরকে গোপনতার প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছে।

৩. নতুন বন্ধু ডিজিটাল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট         

বাস্তব দুনিয়ার বন্ধুরা হয়তো আপনার জন্মদিন মনে রাখবে, কিন্তু ডিজিটাল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট আপনার দৈনন্দিন কাজে এমনভাবে সহযোগিতা করতে পারবে, যা আর কারো পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। নির্ভরশীলতার জন্যই এগুলোর কদর প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

আগের দশকে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকলেও তা এতো উন্নত ছিল না। গত দশ বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এসেছে ভয়েস অ্যাসিস্টেন্টে।

এখন গাড়ি থেকে শুরু করে শোবার ঘরে পর্যন্ত দেখা মিলছে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার মতো কাজ থেকে শুরু করে টিভি চালু করে দেওয়া, গাড়ি চালানোর সময় টেক্সট পড়ে শোনানো, আপনার হয়ে অনলাইনে পণ্য অর্ডার করার মতো কাজ করে দিতে পারে।

এ দশকে আমরা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের কার্যকরী ব্যবহার শিখেছি।

৪. আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে

স্বাস্থ্য এখন আক্ষরিক অর্থেই আপনার হাতে। জরুরি সব স্বাস্থ্য ডেটায় এখন চাইলেই নজর বুলিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরে থাকছে হৃৎস্পন্দনের গতিসহ আরও অনেক কিছু।

এ সবই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্মিত নানা জাতের স্মার্টওয়াচের কল্যাণে। গত দশকে এই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। পরে ওই গবেষণার ফলাফল আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এ দশকে আমরা শিখেছি স্বাস্থ্য সম্পর্কে কীভাবে ওয়াকিবহাল হতে হয়, স্বাস্থ্য ডেটা কী কাজে লাগে, এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত ডেটা কীভাবে ক্ষতিসাধন করতে পারে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রযুক্তি কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে।

৫. অনলাইনের বিশ্বাস নেই

অতীতে এমন একটি সময় ছিল যখন মানুষ অনলাইন তথ্যের উপর আস্থা রাখতেন। এখন আর ওই অবস্থা নেই। ইন্টারনেটজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানাবিধ ভুয়া ও ভ্রান্ত তথ্য। এরকম ভুয়া তথ্যের জালে পা দিয়েছেন অনেকেই। বিতর্কিত ঘটনাও ঘটেছে অনেক, ইন্টারনেটের ভুয়া তথ্যেরে কারণে মানুষের প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এই দশকে আমরা শিখেছি অনলাইনের কোনো বিশ্বাস নেই। নির্ভরশীল সূত্র থেকে আসা তথ্যের উপরই শুধু ভরসা রাখা যায়।               

৬. বাস্তবতার রূপ ‘তরল’!

এই দশকে আমরা দেখেছি ভার্চুয়াল জগতে চাইলেই বাস্তবতা নিয়ে খেলা সম্ভব। বদলে দেওয়া সম্ভব নিজের বয়স, লিঙ্গ ও আরও অনেক কিছু। দেখে নেওয়া সম্ভব ঠিক কীরকম লাগবে বুড়িয়ে গেলে বা অন্য লিঙ্গের অধিকারী হলে।

এই দশক আমাদের শিখিয়েছে বাস্তবতার রূপ ‘তরল’। ভার্চুয়াল জগতের সাহায্যে বাসতবতা পুরোপুরি পরিবর্তন না করা গেলেও, নানাভাবে ও নানা ভঙ্গিতে দেখে নেওয়া সম্ভব।

৭. ইন্টারনেট ‘যা খুশি তা নয়’

এই দশকে প্রযুক্তিপ্রেমীরা শিখেছেন ইন্টারনেট চিরস্থায়ী। অতীতের কমেন্ট, পোস্ট, ছবি বয়ে আনতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপত্তি। আগের তুলনায় অনেক সতর্কও হয়েছে প্রযুক্তিপ্রেমীরা। এ প্রযুক্তিপ্রেমীদের তাদের ক্রমাগত সতর্কবার্তাও জানাচ্ছে নানা প্রতিষ্ঠান।

ইন্টারনেটে যা খুশি তা-ই করা যে ঠিক নয়, সে বিষয়টি আমাদের বুঝতে শিখিয়েছে এ দশক।

৮. পা রাখুন মাটিতে, ভরসা রাখুন ক্লাউডে

আমরা এখন কম-বেশি সবাই ক্লাউডের উপর নির্ভরশীল। ভেবে দেখুন তো, শেষ গানটি ডিভাইসের স্টোরেজ থেকে বাজিয়ে শুনেছিলেন না ইউটিউব বা এ জাতীয় কোনো সেবা থেকে। আপনার উত্তর যা-ই হোক না কেন, ঘুরেফিরে কিন্তু ওই ক্লাউডের উপরেই নির্ভরশীল আপনি।

তবে, ক্লাউডে হারিয়ে যাওয়া মানা। সংবেনশীল ও স্পর্শকাতর জিনিসগুলো না হয় মাটিতেই রাখুন। এতে গোপনতাও ঠিক থাকবে, আবার রেহাই মিলবে নানাবিধ ঝামেলার আশঙ্কা থেকেও।      

এই দশক আমাদের শিখিয়েছে মাটিতে পা রেখে ক্লাউডের যথাযথ ব্যবহার করতে।

আগামীতে আমাদের শেখার রয়েছে আরও বহু কিছু। প্রযুক্তির সঙ্গে মিলে নতুন দশকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আসন্ন ২০২০’র জন্য রইল শুভকামনা।