প্রচারণায় ব্যবহৃত ভারতীয় ‘ভুয়া সাইটের খনি’ আবিষ্কার!

রাজনৈতিক সুবিধা লাভ ও প্রচারণার উদ্দেশ্যে বানানো কয়েকশ’ ভারতীয় ভুয়া ওয়েবসাইটের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, ইউরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যেই পরিচালিত হত ওই সাইটগুলো।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2019, 08:22 AM
Updated : 17 Dec 2019, 08:22 AM

ব্রাসেলসভিত্তিক এনজিও ইইউ ডিসইনফো ল্যাব তাদের প্রতিবেদনে বলেছে ওই ‘কো-অর্ডিনেটেড নেটওয়ার্কের’ ২৬৫টি সাইট পরিচালিত হতো বিশ্বের ৬৫টি দেশে। ওয়েবসাইটগুলোর সঙ্গে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘শ্রিভাস্তাভ গ্রুপের’ সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। -- খবর বিবিসি’র।

ইউরোপে পাকিস্তান বিরোধী লবিংয়ের ঘটনার সঙ্গেও নেটওয়ার্কটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে, ওই নেটওয়ার্কটির সঙ্গে ভারত সরকারের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

গবেষকদের ধারণা, নেটওয়ার্কটির মূল উদ্দেশ্যে ছিল ভারতের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। এ প্রসঙ্গে ইউ ডিসইনফো ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক আলেক্সান্ড্রে আলাফিলিপ্পে বলেছেন, “ভুয়া গণমাধ্যমের হিসেবের বাইরেও ভুয়া এনজিও’র একটি সমন্বয় চোখে পড়েছে যা বেশ উদ্বেগজনক।”

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইপি টুডে’ নামের এক ওয়েবসাইটের ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে নেটওয়ার্কটির খোঁজ পান গবেষকরা। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অনলাইন ম্যাগাজিন হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিত ইপি টুডে সাইটটি।

পরে অক্টোবরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভ্রান্ততথ্যবিষয়ক টাস্ক ফোর্স জানায়, সরাসরি রাশিয়া টুডে ও ভয়েস অফ আমেরিকার পুরোনো খবর নতুন করে প্রকাশ করছে ‘ইপি টুডে’ সাইটটি। শুরুতে ইপি টুডের পেছনের কলকাঠি চালকের সন্দেহের তালিকায় রাশিয়ার নাম থাকলেও পরে ওই ধারণা পাল্টে যায়।

ব্রাসেলসের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইইউ ডিসইনফো ল্যাব জানায়, ওয়েবসাইটটির সার্ভারের হদিস খুঁজতে গিয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘শ্রিভাস্তাভ গ্রুপের’ সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন তারা। পরে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে ইংরেজি ভাষায় আরও অনেক ভুয়া সাইট। ওই সাইটগুলো ভারতের লবিংস্বার্থে সহযোগিতা করছিল বলেও উল্লেখ করেছে বিবিসি।

খুঁজে পাওয়া সাইটগুলোর অধিকাংশকেই ‘জোম্বি’ সাইট আখ্যা দিয়েছে ইইউ ডিসইনফো ল্যাব। কারণ পুরোনো এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া গণমাধ্যমের নামে চালানো হচ্ছিল ওই সাইটগুলো।

বিবিসি উল্লেখ করেছে, এরকমই একটি জোম্বি সাইটের উদাহরণ হচ্ছে ‘ম্যানচেস্টার টাইমস’। ওই সাইটের ‘অ্যাবাউট আস’ অংশটিতে যা লেখা রয়েছে তা সরাসরি উইকিপিডিয়া থেকে কপি করে উঠিয়ে দেওয়া। ‘ম্যানচেস্টার টাইমস’র সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২২ সালের ২২ জুলাই। জোম্বি সাইটটিতে শুধু ওই তথ্যটি মুছে দেওয়া হয়েছে।

এরকম আরও ছয়টি সাইটের খোঁজ পাওয়া গেছে। নির্ভরশীল সাইটের খোলস পড়াতে ওই ভুয়া সাইটগুলোতে সংবাদ সংস্থার ‘সিন্ডিকেটেড কনটেন্ট’ কপি করে রাখা হয়েছে।

নেটওয়ার্কটিতে ‘দ্য টাইমস অফ জেনেভা’ নামের একটি সাইট পাওয়া গেছে। ওই সাইটটি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের লক্ষ্য করে কনটেন্ট প্রকাশ করত। যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশেই ছিল ভিডিও কনটেন্ট। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর আপডেট করা হয়েছে ওয়েবসাইটটি।

ইইউ ডিসইনফো ল্যাব ভুয়া নেটওয়ার্কটির ব্যাপারে জানানোর কয়েক দিন পর থেকেই ওয়েবসাইটটি আর আপডেট করা হয়নি। সাইটে দিয়ে রাখা ফোন নম্বরটিতে কল দিয়েছিল বিবিসি, ওই নম্বরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে সাইটটির ইউটিউব চ্যানেল ‘ডিসঅ্যাবল’ ও টু্ইটার অ্যাকাউন্ট ‘সাসপেন্ড’ করা অবস্থায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে বিবিসি।

ইউ ডিসইনফো ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক আলেক্সান্ড্রে আলাফিলিপ্পের ধারণা, নেটওয়ার্কটি তৈরিই করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রভাবিত করতে। এ প্রসঙ্গে আলাফিলিপ্পে বলছেন, “আমরা ধারণা করছি, ব্রাসেলস ও জেনেভা’র নীতি নির্ধারকদের নাগাল পাওয়াটাই ছিল মূল লক্ষ্য।”

আলাফিলিপ্পে আরও বলেন, “ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা সরাসরি নেটওয়ার্কটিতে নানাবিধি মাত্রায় যুক্তও হয়েছিলেন। কেউ হয়তো নিজেদের মাধ্যমের জন্য মতামত লিখেছেন, কেউ সফর এবং সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, আবার কেউ সাইটগুলোতে আসা ঘটনা নিয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখেছেন।”