প্রতিষ্ঠাতাদের প্রস্থান: অ্যালফাবেট নেতৃত্বে সুন্দার পিচাই

গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট পরিচালনার দায়িত্বে ইতি টানছেন প্রতিষ্ঠাতাদ্বয় ল্যারি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 05:36 AM
Updated : 4 Dec 2019, 05:36 AM

পদ ছাড়লেও প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য থাকবেন পেইজ ও ব্রিন। নতুন কাঠামোয় গুগলের পাশাপাশি অ্যালফাবেট প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বও নেবেন সুন্দার পিচাই-- খবর বিবিসি’র।

মঙ্গলবার হঠাৎই অ্যালফাবেট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই দুই প্রযুক্তি মোড়ল। উভয়ের বয়সই এখন ৪৬।

এর আগে, গুগলের বাণিজ্যিক কাঠামো পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে তৈরি করা হয় অ্যালফাবেট। আর, একেবারে শুরুতে ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার প্রকল্প হিসেবে গুগলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পেইজ এবং ব্রিন।

মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যালফাবেটের লক্ষ্য ছিলো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আরও “পরিচ্ছন্ন এবং হিসাবের” মধ্যে রাখা। ইন্টারনেট সার্চ থেকে শুরু করে স্বচালিত গাড়ির মতো অন্যান্য খাতেও পরিধি বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

গুগলের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতার যৌথ চিঠিতে বলা হয়, “বোর্ড সদস্য, শেয়ারধারী এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এখনও সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে” তাদের, তবে “আমাদের ব্যবস্থাপনা কাঠামো আরও সহজ করার এটাই সময়।”

“আমরা কখনোই অমন ছিলাম না যারা প্রতিষ্ঠান চালানোর ভালো উপায় থাকার পরও কেবল পদ ধরে রাখাতে চায়। আর অ্যালফাবেট এবং গুগলের এখন দুই প্রধান নির্বাহী এবং একজন প্রেসিডেন্ট দরকার নেই।”

পেইজ এবং ব্রিন আরও বলেন, "প্রতিদিনের ছোটখাট বিষয়াদি নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করার চেয়ে এখন বরং সময় হয়েছে গর্বিত বাবা-মা'র ভূমিকায় কাজ করার। আর প্রতিষ্ঠানটিকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মি. পিচাইয়ের চেয়ে ভালো আর কেউ নেই।"

৪৭ বছর বয়সী পিচাইয়ের জন্ম ভারতে, সেখানেই প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভেনিয়ায় পড়াশোনা শেষ করে ২০০৪ সালে গুগলে যোগ দেন তিনি।

এক বিবৃতিতে পিচাই বলেন, পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে তিনি “রোমাঞ্চিত”। পেইজ ও ব্রিনকে শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন তিনি।

“বিশ্বে প্রভাব রাখতে প্রতিষ্ঠাতারা আমাদের দারুন একটি সুযোগ দিয়েছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ যে, একটি নিরন্তর কর্মযজ্ঞ, স্থায়ী মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতি এবং অন্বেষণের মধ্যে রয়েছি যার কারণে প্রতিদিন কাজে আসার বিষয়টি আমাদের কাছে আরও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে।” যোগ করেন পিচাই।

গুগল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে এবারই প্রথম সাড়া জাগানোর মতো পরিবর্তন এলো। এবারই প্রথম ব্রিন এবং পেইজ তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা পদে আর থাকছেন না।

বেশ কিছুদিন ধরেই পরিস্থিতি অবশ্য এদিকেই যাচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হিসেবে দিনদিন পিচাই আরও সামনে এগিয়ে আসছিলেন। তার সঙ্গে, হয়তো একটু ক্ষদ্র পরিসরেই বলা যায়, ছিলেন ইউটিউব প্রধান সুসান ওজসিকি। তবে, আজকের ঘোষণাটি একেবারেই পরিষ্কার করে দিল যে, পেইজ-ব্রিন আর প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন না।

তবে, ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছাড়লেও প্রতিষ্ঠানে তাদের ক্ষমতা কোনোভাবেই কমছে না। অ্যালফাবেট বোর্ডের ৫১ শতাংশ ভোটাধিকার এখনও থাকছে তাদের দখলেই। প্রকৃত অর্থেই প্রতিষ্ঠানের “গর্বিত বাবা-মার” দায়িত্বই নিচ্ছেন পেইজ এবং ব্রিন।

তারপরও প্রয়োজন মনে করলে পিচাইয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারবেন দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেদিক থেকে এটা সম্ভবত পরিণত সন্তানের মা-বাবা'র দায়িত্বের চেয়ে অনেকটাই বেশি। আর অমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত ঠেকাতে পেইজ-ব্রিনের কেবল এইটুকুই বলা যথেষ্ট- "কারণ, আমরা সেটাই চাইছি"।