ইউনিলিভারে কর্মী নিয়োগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তবে...

নিয়োগকর্তার ভূমিকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম ব্যবহার করে প্রতিবছর লাখো ডলার বাঁচাচ্ছে ব্রিটিশ-ডাচ বহুজাগতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ওই এআই সিস্টেমটি চাকরিপ্রার্থীদের ‘ভিডিও ইন্টারভিউ’ বিশ্লেষণ করে রায় দেয়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2019, 03:47 PM
Updated : 28 Oct 2019, 03:47 PM

শুধু গত এক বছরেই এক লাখ ঘণ্টার সেবা দিয়েছে এআই সিস্টেমটি। ইউনিলিভারের ওই সিস্টেমটি মূলত স্নাতক সম্পন্ন করা চাকরিপ্রার্থীদের মুখের অভিব্যক্তি, শরীরের ভাষা ও শব্দ চয়ন স্ক্যান করে থাকে এবং চাকরিতে সফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য আছে কিনা জানতে পরীক্ষা নেয়, পরে এর বিচারে নিজ মতামত জানায়। ইউনিলিভার বাদেও নিয়োগের কাজে এ ধরনের এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ভোডাফোন, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং মার্কিন চিপ জায়ান্ট ইনটেল --- বলছে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন।

পুরো বিষয়টি চমৎকার মনে হলেও রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টসের করা জরিপ ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। ওই জরিপে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যের ৬০ শতাংশ নাগরিক নিয়োগ এবং অপরাধ বিচারের কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক এআই সিস্টেম ব্যবহার করার বিপক্ষে। অন্যদিকে, ইউগভ-এর এক জরিপে জানা গেছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিষয়টি জানেন মাত্র ৩২ শতাংশ নাগরিক, এর মধ্যে নিয়োগের কাজে এআই ব্যবহারের বিষয়টি জানেন ১৪ শতাংশ, আর অপরাধ বিচারের কাজে এআই ব্যবহারের বিষয়ে অবগত মাত্র ৯ শতাংশ।

সিদ্ধান্তের কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত জুরি বোর্ডকে। রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টসের আহবানে একত্রিত হন ওই জুরি বোর্ড। বিচার বিশ্লেষণের পরে তারা রায় দেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক পরীক্ষাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে’। তারা আরও বলেন, ‘সিস্টেম ডিজাইনের কাজে মানবকর্মীর বদলে এভাবে এআই ব্যবহার করতে থাকলে জনসাধারণ খেপে উঠতে পারে।’

নিয়োগের কাজে ইউনিলিভারের ব্যবহার করা এআই সিস্টেমটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান হায়ারভিউ। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে প্রথমবারের মতো নিজেদের এআই সফটওয়্যার পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটি। সে সময় হায়ারভিউ জানিয়েছিল, চাকরিপ্রার্থীর গলার স্বর, কথা বলার দ্রুততা, কীভাবে কথা বলছেন সে হিসেবগুলোর ভিত্তিতে কাজ করবে সিস্টেমটি।

এআই সফটওয়্যার ব্যবহার প্রসঙ্গে ইউনিলিভারের এক মুখপাত্র বলেছেন, “বৈশ্বিকভাবে সিস্টেমটি এক বছরে সময়ের হিসেবে এক লাখ ঘণ্টা এবং অর্থের হিসেবে দশ লাখ ডলার বাঁচাতে সাহায্য করেছে আমাদের। স্নাতক সম্পন্ন চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের জন্য আমাদের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটির একটি অংশ মাত্র এই সিস্টেম।”

ইউনিলিভারের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এআই ভিডিও ইন্টারভিউয়ের বিষয়টি ঐচ্ছিক। চাকরিপ্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত-গ্রহণ করা হবে এমন ইন্টারভিউয়ে অংশ নিতে তিনি আগ্রহী কিনা। এ ধরনের ইন্টারভিউয়ের আগেই তাকে প্রস্তুতির জন্য সব ধরনের তথ্য দেওয়া হয়। চাইলে এআইয়ের বদলে ‘মেধা উপদেষ্টা’র সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি।’

গার্ডিয়ান উল্লেখ করেছে, বর্তমানে ইউনিলিভারের পুরো স্নাতক নিয়োগ কর্মসূচীতেই ব্যবহার করা হচ্ছে ওই এআই সিস্টেম। এর নির্মাতা হায়ারভিউ-এর দাবি, সিস্টেমটি আরও উন্নত জাতিবৈষম্যহীন এবং লিঙ্গবৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে সাহায্য করছে। ইউনিলিভার বলছে, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে হায়ারভিউয়ের কাছে প্রার্থীদের লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় গোপন রাখা হত। এতে করে প্রতিনিধিত্বমূলক ডেটা দিতে পারত না সফটওয়্যারটি।’