কর্মঘণ্টার পর কাজ সংক্রান্ত কোনো ইমেইল না পেলে বা উত্তর না দিতে পারলে হতাশাগ্রস্থ হয়ে উঠতে পারেন কর্মীরা। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স-এর গবেষকদের করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য --- খবর বিবিসি’র।
‘অফিস সময়ের পর ইমেইল পাঠানো বন্ধ রাখলে কিছু সংখ্যক কর্মী হয়তো এর সুফল পান, কিন্তু অধিকাংশের জন্য বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব বয়ে নিয়ে আসে। এতে অফিসে নিজ লক্ষ্য পূরণে বাঁধা সৃষ্টির পাশাপাশি মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে।’- বলা হয়েছে গবেষণায় পাওয়া ফলাফলে।
এদিকে, কর্মীদের কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে এবং তারা যেন মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেটি নিশ্চিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কয়েক বছর ধরেই অফিস সময়ের পর কর্মীদের মেইল পাঠানো বন্ধ করার রেওয়াজটি চালু করেছে। গাড়ি নির্মাতা ফেক্সভাগেনও রয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের তালিকায়। আর ব্রাজিল তো ২০১২ সালে আইনই করেছে যে, অফিসের কর্মঘণ্টার পরে যদি কোনো কর্মীকে অফিসের কাজে ফোন করা হয় বা ইমেইল পাঠানো হয়, সেটা ওভারটাইম বলে হিসাব করতে হবে।
একই ধরনের আইনে আরও কড়া বার্তা দিয়েছে ফ্রান্স। ২০১৭ সালে করা ওই আইনে বলা আছে, অফিস কর্মীর সংখ্যা ৫০-এর বেশি হলেই প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট করে সময়সীমা ঠিক করে দিতে হবে যে সময়ে কাজ সংক্রান্ত কোনো ইমেইল পাঠানো বা উত্তর দেওয়া যাবে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা যেন বিশাল এক প্রশ্ন তুলল আপাতদৃষ্টিতে কর্মীবান্ধব এইসব আইন আর রেওয়াজের প্রতি। গবেষণা ফলাফলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বাঁধাধরা নিয়মের ব্যাপারে। বলা হয়েছে, বাঁধাধরা নিয়ম করে দিলে সেটিও উচ্চ মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্সের ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. এমা রাসেল বলেছেন, “সবার জন্য ঢালাওভাবে এক নিয়ম করে দিলে হবে না।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “কর্মচারীদের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের ভিত্তিতে নিয়ম নমনীয় হতে হবে। যিনি লক্ষ্য পূরণের জন্য মেইল চাইবেন, তিনি যেন তা পান। যিনি পছন্দ করছেন না, তিনি বন্ধ রাখবেন।”
মোদ্দা কথা ড. রাসেল যেটা বলছেন তা হলো, “সবমিলিয়ে কর্মীরা যাতে অনুভব করতে পারেন যে, কাজের চাপ তারা নিজের মতো করে সামাল দিতে পারছেন।”
গবেষকদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন বেন উইলমট। মানবসম্পদ বিষয়ক সংস্থা চার্টার্ড ইন্সটিটিউট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিআইপিডি)’র জননীতি বিভাগের এই প্রধান বলছেন, “শুধু কর্মঘণ্টার পর ইমেইল পাঠানো বন্ধ করে দিলেই হবে না। অনেকের জন্যই বিষয়টি নেতিবাচক। কারণ, তারা হয়তো ঢিলেঢালাভাবে নিজের মতো করে কাজের সময়টি ঠিক করে নিতে চায় এবং এভাবে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।”
বেন উইলমট আরও বলেছেন, “নিয়োগকারীদের উচিত কর্মীদের দূর থেকে কাজ করার ব্যাপারে পরিষ্কার একটি নির্দেশনা দেওয়া। কর্মী নিজ ইচ্ছায় অফিস সময়ের পরে ইমেইল বা অন্য কোনো ডিজিটাল যোগাযোগ প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে চাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করা।”