দেশে ‘স্পেস সিটি’ গড়ার সংকল্প প্রতিমন্ত্রী পলকের 

মহাকাশ বিজ্ঞান ও গবেষণা নিয়ে জানার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ তৈরিতে দেশে একটি ‘স্পেস সিটি’ গড়ে তোলার ভাবনার কথা জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2019, 04:50 PM
Updated : 20 July 2019, 08:15 AM

শুক্রবার ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ– আইইউবিতে দুই দিনের স্পেস ইনোভেশন সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

পলক বলেন, “কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে একটি বড় জায়গা আছে। ওখানে আমরা কথা বলে দেখি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না, আমি সংকল্প করছি যে আমরা এরকম একটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ করব; একটি স্পেস ল্যাব এবং পাশাপাশি একটি স্পেস সিটি।

“আমাদের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা, ছাত্রছাত্রীরা সরেজমিনে সিমুলেশন সেন্টারে গিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে কীভাবে তারা স্পেসে যেতে পারে, স্পেসে কোন ধরনের রোবট লাগে, কোন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্পেসে প্রয়োজন।”

এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। 

আগামীতে দেশেই স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে পলক বলেন, ”রোবোটিক্স, ব্লকচেইন, ডেটা অ্যানালিটিকসহ যত ধরনের নতুন টেকনোলজি আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটিতে স্পেশালাইজড ল্যাব করছি।

“এবং খুব অল্প দিনের মধ্যে… দুই কোটি, চার কোটি, পাঁচ কোটি- যে টাকাই লাগুক… আমরা বাংলাদেশে প্রথম একটি স্পেশালাইজড স্পেস ল্যাব স্থাপন করব।”

দেশের তরুণদের উদ্ভাবনকে তুলে ধরতে বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গত সপ্তাহে কুইন ম্যাক্সিমা (নেদারল্যান্ডসের 
রানি
) এসেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উনার দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়েছে। উনি চমৎকার একটি আইডিয়া দিয়ে গিয়েছেন; একটা সেন্ট্রাল ইনোভেশন সেন্টার করার জন্য। অর্থ্যাৎ যেখানে শুধু ইনোভেশন নিয়ে চিন্তা হবে, কথা হবে, কাজ হবে।”

আগামী অক্টোবরে একটি ‘ডিজিটাল ইনোভেশন এক্সপো’ আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যত ইনোভেশন আছে, যত ধরনের আবিষ্কার আছে এবং উদ্ভাবন আছে সেগুলো সেখানে শোকেস করব। দেশি-বিদেশি  ইনভেস্টরদের আমরা ইনভাইট করব।”

বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মত স্পেস ইনোভেশন সামিটের আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রথম প্রোগ্রামের একটা অ্যাচিভমেন্ট কিন্তু আমাদের এখানে আসবে। সেটা হচ্ছে এমআইএসটির একটি টিম যারা আমাদের এখানে ওয়ার্কশপ করেছিল; এখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা কাজ শুরু করে এবং আমাদেরই মেন্টর প্যানেল প্রত্যক্ষভাবে সাপোর্ট দিয়েছে।

“তারা নিজেরা একটি ক্যানসেট (স্যাটেলাইট) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অলরেডি সেটা ‍উড্ডয়নও করেছে; গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ডেটাও নিচ্ছে। তারা পুরো ইকুইপমেন্টসহ আসবে।”

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম ও নাসা সায়েন্টিফিক প্রবলেম সলভার বাংলাদেশের যৌথ এই আয়োজনে ১৬টি সেমিনার ও দুটি ওয়ার্কশপ হবে। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এ আয়োজনের ভেন্যু সহযোগী।

চাঁদে অ্যাপোলো-১১ অভিযানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সামিটের শেষ দিন (শনিবার) একটি বিশেষ সেমিনার পরিচালনা করবেন আইইউবি’র ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুর রাজ্জাক।

‘ফিফটি ইয়ারস অফ মুনল্যান্ডিং’ প্রতিপাদ্যে এই সামিট আয়োজিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যদি রকেট বানাতে চাই, তাহলে কিন্তু আমাদের স্পেস সিমুলেশন নিয়ে জানতে হবে। স্টুডেন্টদের মধ্যে আগ্রহটা জন্মানোর জন্যই মূলত এই সামিট।”

খালিদ হাসান পলাশ অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছেন ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স, ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইএসটিটি)।

‘ছোটবেলা’ থেকেই স্পেস ও এয়ারক্রাফট নিয়ে আগ্রহী ছিলেন জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ক্যারিয়ার অ্যাট নাসা সেশনে যোগ দিতেই মূলত এখানে আসা।”   

এবারের স্পেস ইনোভেশন সামিটের কো-কনভেনার শেখ আদিফ ফারহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভেন্টটা খুব সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যারা এখানে অংশগ্রহণ করছে তারা স্পেস টেকনোলজি নিয়ে ধারণা ও জ্ঞান নিতে পারছেন।”

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রায় দেড় হাজার অংশগ্রহণকারী দুই দিনের এই সামিটে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) পরিচালক অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন এবং আইইউবির কোষাধ্যক্ষ খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।