হুয়াওয়ের সঙ্গে ‘সাময়িক মিটমাট’ হতে পারে দুই সপ্তাহেই

পুনরায় হুয়াওয়ের সঙ্গে কেনাবেচা শুরু করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও লাইসেন্স দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এটি দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2019, 09:27 AM
Updated : 15 July 2019, 09:27 AM

সম্প্রতি হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার এই উদ্যোগ আরও দ্রুত কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক জেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তা।

গত মে মাসে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তালিকায় যোগ করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগে যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের নাম। এই তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো পণ্য সরবরাহ বা সেবা দিতে পারে না মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এর জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়, যার আবেদন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নাকচ করা হয়।

জুন মাসের শেষ দিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, হুয়াওয়ের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রী উইলবার রসও বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তায় কোনো হুমকি না থাকলে লাইসেন্স দেওয়া হবে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বদল এবং বাণিজ্য বিভাগের দ্রুত কার্যকরিতার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, চিপ খাত থেকে তদবির (লবিয়িং) এবং চীনা রাজনৈতিক চাপের ফলেই হুয়াওয়ের কাছে আবারও মার্কিন প্রযুক্তি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

হুয়াওয়েকে চিপ সরবরাহকারী দুই মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্প্রতি রয়টার্সকে বলা হয়, রসের মন্তব্যের পর তারা আরও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। তবে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তারা।

২০১৮ সালে যন্ত্রাংশ কিনতে মোট সাত হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছে হুয়াওয়ে। এর মধ্যে ১১০০ কোটি ডলার গেছে কোয়ালকম, ইনটেল এবং মাইক্রোন টেকনোলজি’র মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

“যেহেতু ক্ষতি কিছু নেই তাই প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই নীতিমালা মেনে আবেদন করবে,” বলেন বাণিজ্য বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক আইনজীবী কেভিন উলফ।

হুয়াওয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাময়িক লাইসেন্স না দিয়ে পুরো নিষেধাজ্ঞা একবারে তুলে নেওয়া উচিত। কোনো অবৈধ কাজের জন্য হুয়াওয়েকে দোষী পাওয়া যায়নি এবং প্রতিষ্ঠানটি কোনো দেশের সাইবার নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়। তাই এই নিষেধাজ্ঞার কোনো ভিত্তিও নেই।”

বর্তমান নেটওয়ার্কগুলো সচল রাখতেই এখন হুয়াওয়ের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া ইতোমধ্যেই বাজারে এসেছে এমন হুয়াওয়ে স্মার্টফোনগুলোতেও সফটওয়্যার আপডেট দেওয়া হচ্ছে। তবে, হুয়াওয়ের নতুন কোনো পণ্যে মার্কিন পণ্য বা প্রযুক্তি যোগ করায় নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়েছে।

হুয়াওয়ের কাছে পণ্য বিক্রি করতে সব মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন নিতে হবে বিষয়টি এমনও নয়। মার্কিন কিছু চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো দেশটির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষের নাগালের  বাইরে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পণ্য উৎপাদন করে থাকে যেসব প্রতিষ্ঠান।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নতুন নীতিমালা স্পষ্ট করে আসছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সংবেদনশীল নয় এমন প্রযুক্তি যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, সেগুলো এমনিতে বিদেশে বিক্রি করা হবে। তবে হুয়াওয়ে এখনও বাণিজ্য বিভাগের তালিকাভূক্ত থাকবে এবং ছাড় সাময়িকভাবে দেওয়া হবে।

কী ধরনের পণ্যের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট করে বলা হয়নি। চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য বিভাগের সম্মেলনে এগুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে বেশ কিছু মার্কিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।

নীতিমালার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, “বর্তমানে সংস্থাটি সব লাইসেন্স যাচাই করছে এবং শনাক্ত করছে কোনগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংশ্লিষ্ট।”

হুয়াওয়ে মার্কিন মেধাসত্ত্ব সম্পত্তি চুরি করেছে এমন দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এনিয়ে মামলাও ঝুলে রয়েছে। ৫জি  নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা থেকে হুয়াওয়েকে বাদ দিতেও সহযোগী দেশগুলোকে তদবির করছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অভিযোগ বারবারই নাকচ করে আসছে হুয়াওয়ে।