দ্বিতীয় যে ডিজরাপ্টারের নাম উচ্চারিত হয় সেটি এয়ারবিএনবি। একে বলা যেতে পারে উবারের হোটেল সংস্করণ। অবশ্য উলোটাই বলা ভালো। কারণ, এয়ারবিএনবি বাজারে এসেছে উবারের আগেই। আপনি কোনো অপরিচিত শহরে গেলে সেখানে হোটেলে যাওয়ার আগে খুঁজে দেখতে পারেন এয়ারবিএনবিতে আপনার বাজেটের মধ্যে কেউ তার বাসার ঘরটি দিন হিসেবে ভাড়া দিতে চান কিনা।
পরিচিত এইসব অ্যাপের পাশাপাশি এমন অ্যাপও আসছে যারা প্রথগত ব্যবসার প্রতিদ্বন্দী না হয়ে বরং সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। যেমন ধরা যাক বাংলাদেশে উবারের সম্প্রতি চালু হওয়া নতুন সেবা- উবারইটস। এরা প্রথাগত কোনো রেস্তোঁরাকে চ্যালেঞ্জ করছে না বরং ওই রেস্তোঁরার খাবার পৌঁছে দিচ্ছে আপনার কাছে। দেশি প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি অথবা জার্মান প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডার দেশি কার্যক্রম এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে।
সম্প্রতি এইরকম সেবাসহায়ক অ্যাপ এসেছে বেশ কয়েকটি। আসুন চোখ বুলিয়ে নেই অ্যাপগুলোতে-
হেভি গাড়ি
উবার যেখানে পেশাদার ট্যাক্সির বিকল্প হিসেবে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি নিয়ে আসছে, সেখানে হেভি গাড়ি নামের অ্যাপটি নতুন কোনো গড়ির উৎসে আপনাকে নিয়ে যাবে না, বরং ওই একই গাড়ি আপনি ভাড়া করতে পারবেন ঘরে বসে, হাতের স্মার্টফোনটির মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি- “এটি বাংলাদেশের একমাত্র কমার্শিয়াল যানবাহন ভাড়ার অনলাইন প্লাটফর্ম।”
হেভি গাড়ির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আকরাম বললেন, “উবারের মত নির্দিষ্ট গন্তব্য দিয়ে গাড়ির সিলেক্ট করলেই কত টাকা ভাড়া আসবে সেটি দেখিয়ে দেবে। হেভি গাড়ির প্ল্যাটফর্মে আছে রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং সুবিধাসহ স্বচ্ছ মূল্য নীতি।”
বর্তমানে হেভি গাড়ি প্লাটফর্মে কর্মাশিয়াল গাড়ি হিসেবে ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে ভারী যানবাহন। যেমন: বাস, ট্রাক, পিকআপ। রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স আর মাইক্রোবাসও।
আপাতত কেবল ঢাকা আর চট্টগ্রামে পাওয়া যাবে এই অ্যাপের সুবিধা।
টেকনিশিয়ান অ্যাপ
অ্যাপের নাম থেকেই ধারণা করা যায় এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই ”পণ্যের মেরামত, ক্রয়-বিক্রয় সুবিধা ও হোম সার্ভিস গ্রহণ করতে পারবেন”। এতে অবশ্য আপাতত ১৫ ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য সারাইয়ের কাজ করানো যাবে। পাশাপাশি অ্যাপটি পণ্য কেনাবেচায়ও সহায়তা করবে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপনের অ্যাপ ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচার সুবিধা অবশ্য নতুন কিছু নয়।
অ্যাপটির নির্মাতারা অবশ্য বড় মুখ করে বলছেন- এই অ্যাপ “বেকার যুবসমাজকে কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ টেকনিশিয়ান হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে ও কর্ম সংস্থান তৈরীতে সহায়ক ভুমিকার পালন করবে।”
একটি অ্যাপের মাধ্যমে এমন লক্ষ্য অর্জন কতোটা বাস্তবসম্মত সেটা সময়ই বলে দেবে।
ইজিয়ার অ্যাপে অ্যাম্বুলেন্স
জরুরী কোনো মুহূর্তে ছুটাছুটির বদলে অ্যাপ দিয়েই দরকারি কাজটি করা গেলে তা অনেক সময় বিশাল সুবিধা হিসেবে দেখা যেতে পারে- যেমন ধারা যাক অ্যাম্বুলেন্স ডাকার বিষয়টি।
বিশেষায়িত এই সেবাটি পাওয়া যাবে ইজিয়ার অ্যাপে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপটি কার এবং মোটরসাইকেলভিত্তিক শেয়ারিং সেবা দিয়ে থাকে। এই অ্যপে এখন আছে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার সুযোগও। মূল অ্যাপের মধ্যেই লাল ডটের মধ্যে অ্যাম্বুল্সে আইকনে ট্যাপ করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা যাবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স নয়, সদ্য সমাপ্ত সফটএক্সপোতে প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপের মাধ্যমেই হেলিকপ্টার চার্টার সেবা দেওয়ার ঘোষণাও দেয়। অবশ্য সে ঘোষণাটি কতোটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশে যে কয়টি ব্যক্তিমালিকানাধীন কপ্টার আছে, সেগুলোর কোনোটিই কি স্রেফ অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে চার্টার করা বা ভাড়া নেওয়া সম্ভব?
বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান শুরুতে অনেক স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেন। অনেক সময়ই দেখা যায়, পরে অনেক সেবাই আর দেওয়া সম্ভব হয় না।
অ্যাপটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে।
‘ইয়েস পার্কিং’
ইয়েস পার্কিং অ্যাপটি মূলত ডিজিটাল পার্কিং প্লেস হিসেবে সেবা দেবে যার মাধ্যমে মানুষকে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য উন্মুক্ত স্পেস খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এবং মালিকরা তাদের পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
এই অ্যাপের কাঠামো অনেকটা উবারের মতো হলেও যেহেতু পার্কিং স্পেস বা গ্যারেজের জন্য অন্য কোনো প্রচলিত প্ল্যাটফর্ম নেই, ফলে একে সম্ভবত ডিজরাপ্টার বলা যাচ্ছে না।
বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করি এবং সচেতনতার সাথে তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো (যেমন: নেভিগেশন ও পার্কিং স্পেস খুঁজে পেতে) সমাধান করতে পরিকল্পনা করি।
তিনি অবশ্য নিজে থেকেই স্বীকার করেছেন যে, “এসব বিষয়ে আরও অগ্রগতি হতে পারে এবং আমরা এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এখন পাকিং স্পেস কোনো সমস্যাই না।’
‘ইয়েস পার্কিং অ্যাপটি প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।