৩২ কিলোমিটার দূরে বসে অস্ত্রপাচার!

রোগী হাসপাতালে আর তার ডাক্তার বসে আছেন ৩২ কিলোমিটার দূরের এক মন্দিরে। সেখান থেকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ আর রোবোটিক প্রযুক্তিতে সম্পন্ন হলো হৃদযন্ত্রে অস্ত্রপাচার!

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 08:41 PM
Updated : 6 Dec 2018, 10:09 PM

সাড়া জাগানো এই অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে কার্ডিওভাসকুলার সার্জারির ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন ভারতের ড. তেজাস প্যাটেল। বিশ্বে এমন সার্জারি এটাই প্রথম বলে দাবি করা হয়েছে।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত তেজাস প্যাটেল। দূর থেকে এক নারীর কার্ডিওভাসকুলার স্টেন্ট সার্জারি করেছেন তিনি।

অস্ত্রপাচার দেখার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন গুজরাতের প্রধানমন্ত্রী বিজয় রুপানি। তিনি বলেন, “মূল্যবান জীবন বাঁচাতে এই প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা চিন্তা করবে গুজরাত সরকার। তেজাস প্যাটেলের মতো বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমরা সামনে এগোবো।”

মেডিকেলের ভাষায় এই অস্ত্রপাচারকে বলা হয় ‘ইন-হিউম্যান টেলিরোবোটিক করোনারি ইনটারভেনশন’। ধমনীতে স্টেন্ট বসানো হিসেবেই বেশি পরিচিত এটি।

প্রথাগত অস্ত্রপাচারের চেয়ে এখানে পার্থক্য হলো নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গান্ধিনগর আকশারধাম মন্দিরে বসে অস্ত্রপাচার করেছেন সার্জন। আর রোগী ভর্তি ছিলেন ৩২ কিলোমিটার দূরে আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে-- খবর আইএএনএস-এর।

পেটেন্টেড প্রযুক্তি ‘করপাথ’-এর মাধ্যমে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সার্জারি করা হয়। প্রযুক্তিটি বানিয়েছে মার্কিন করিনডাস ভাসকুলার রোবোটিকস। প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট গতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় এই প্রযুক্তিতে।

১৯৮৬ সালে প্রথমবার এ ধরনের স্টেন্ট সার্জারি করা হয়। ৩২ বছর পর আবারও এ ধরনের সার্জারি করা হলো। তবে এবার নতুন প্রযুক্তিতে।

এ ধরনের অস্ত্রপাচারে স্বেচ্ছায় রাজি হন কলোল নামের ওই নারী।

ড. তেজাস প্যাটেল বলেন, “সম্প্রতি ওই নারীর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তার একটি ধমনীতে আগেই অস্ত্রপাচার করা হয়েছে। আজ আমরা দ্বিতীয় ধমনীতে স্টেন্ট বসিয়েছি, যা বন্ধ ছিল।”

নতুন এই প্রযুক্তি হৃদপিণ্ডের জটিল অস্ত্রপাচারে দারুন পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে রোগীকে ডাক্তারের কাছে থাকতে হবে না। দূর থেকেই তার অস্ত্রপাচার করা যাবে।

“বর্তমানে এই প্রযুক্তি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রথাগত অস্ত্রপাচারের চেয়ে এর খরচ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি বেশি। কিন্তু ব্যবহার বাড়লে এর খরচ কমে আসবে,” বলেন প্যাটেল।

করিনডাস প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট মার্ক টোল্যান্ড বলেন, “আমাদের পেটেন্ট করা প্রযুক্তি প্রথাগত অপারেশন থিয়েটারেও ব্যবহার করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের ধারণা, যেকোনো জায়গায় যেকোনো রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে এই প্রযুক্তি হৃদরোগের চিকিৎসায় বিপ্লব আনবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদিও এই অস্ত্রপাচারে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট গতির নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যবহার করা হয়েছে, এখানে প্রতি সেকেন্ডে ২০ মেগাবিট গতিই যথেষ্ট।