দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ২৪ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাবনা

মোবাইল ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার বদৌলতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ইন্টারনেট অর্থনীতিতে ই-কমার্স আর রাইড হেইলিংয়ের মতো খাতগুলোতে দ্রুত উন্নতি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ইন্টারনেট অর্থনীতি ২৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 06:22 PM
Updated : 20 Nov 2018, 06:22 PM

মার্কিন ওয়েব জায়ান্ট গুগল আর সিঙ্গাপুরের টেমাসেক হোল্ডিংস মিলে সোমবার এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আর সেখানেই মিলেছে এমন সম্ভাবনার বাণী। ২০১৬ সালে এই দুই প্রতিষ্ঠান মিলে এমন আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, ওই প্রতিবেদনের তুলনায় এবারের আশার অংক চার হাজার কোটি ডলার বেশি। সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স- এই ছয় দেশকে ভিত্তি করে এই জরিপ করা হয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত ছিল চারটি প্রধান খাত- রাইড হেইলিং, ই-কমার্স, অনলাইন মিডিয়া, অনলাইন ভ্রমণ। এগুলোর সঙ্গে অনলাইন খাবার সরবরাহ, মিউজিক সাবস্ক্রিপশন ও অন ডিমান্ড ভিডিও সেবার মতো নতুন খাতও যোগ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনীতি ৭২০০ কোটি ডলার হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে, অংকটা ঠিক এক বছর আগের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনীতির দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি ১০ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে বলেই প্রত্যাশা।  

সহজলভ্য মোবাইল ইন্টারনেট আর সংযোগ উন্নত করার ফলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি ওয়েব ব্যবহারে তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

এই গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ওই ছয় দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ কোটি, ২০১৫ সালে যা ছিল ২৬ কোটি। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে এই অঞ্চল অন্যতম।

সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-কে গুগলের ভারত ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজান আনান্দান বলেন, “আমরা প্রতি মাসে মোট ৩০ লাখ নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যোগ করছি। তারা ইন্টারনেটের প্রায় পুরোটাই একটি মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহার করছে।”

আনান্দান-এর মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট আরও অনেক সহজলভ্য হয়েছে; প্রতি গিগাবাইট ডেটা ব্যবহারের জন্য খরচ শেষ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, “ডেটা আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠায়,তারা আরও বেশি বেশি সময় দিচ্ছে, আর অনেক কিছু করছে, এটিই ই-কমার্স, রাইড-হেইলিং আর আমাদের গবেষণার অন্যান্য দিকগুলো এগিয়ে নিচ্ছে।”   

দ্রুত আগাচ্ছে ই-কমার্স

ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত আগাচ্ছে ই-কমার্স। ২০১৮ সালের মধ্যে এই বাজার ২৩০০ কোটি ডলার ছাড়াবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এমন অগ্রগতির ক্ষেত্রে তিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন আনান্দান। তিনি বলেন, “এই বছর ই-কমার্স খাত আগের বছরের তুলনায় শতভাগ বেড়েছে আর আমাদের ১২ কোটি গ্রাহক আছেন যারা তিনটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন-  শপি, টোকোপিডিয়া এবং লাজাডা’র দখলে এখন বাজারের ৭০ শতাংশ।

এই গবেষণা প্রতিবেদন মতে ২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স বাজার ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই অগ্রগতিতে শীর্ষে থাকবে ইন্দোনেশিয়া। এই অঞ্চলে ই-কমার্স খাতে ব্যয় হওয়া প্রতি দুই ডলারের মধ্যে এক ডলারই এ দেশ থেকে হয়।

রাইড-হেইলিং খাত

অনলাইনে পরিবহন সেবার বুকিং দেওয়া আর অনলাইন পণ্য সরবরাহকেও ধরা হয়েছে এই খাতে। ২০১৮ সালে এই বাজার ৭৭০ কোটি ডলার হয়েছে। গ্র্যাব আর গো-জ্যাক এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ শতাধিক শহরে এখন রাইড-হেইলিং সেবা বিদ্যমান। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে তিন হাজার কোটি ডলারের বাজার তৈরির প্রত্যাশা করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে।

বেড়েছে অর্থায়ন

২০১৬ সালে যখন এই গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথম সংস্করণ আসে সে সময় প্রাথমিক উদ্বেগের যে বিষয়টি ছিল তা হছে এ অঞ্চলের প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা বুঝতে যথেষ্ট অর্থ থাকবে না, এমনটাই বলেছেন টেমাসেক-এর যুগ্ম প্রধান রোহিত সিপাহিমালানি। মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলেন, “কিন্তু এখন এই তিন বছরে, আপনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছেন, যা সামনের ১০ বছরের সম্ভাবনাকে স্পর্শ করতে যে অর্থ দরকার আমরা ভেবেছিলাম তার প্রায় অর্ধেক।”

এই অঞ্চলে সংগৃহীত অর্থের অধিকাংশই গিয়েছে নয় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের তহবিলে। এই নয় প্রতিষ্ঠানই মূলত স্টার্ট-আপ যেগুলোর বাজারমূল্য শতকোটি ডলার বা তার কিছু বেশি।

অর্থ সংগ্রহ করেছে কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানও। গ্র্যাব জানিয়েছে তারা চলতি বছরের মধ্যে তিনশ’ কোটি ডলার সংগ্রহের দিকে আছে; এর ইন্দোনেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী গো-জ্যাক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেড়শ’ কোটি  ডলার সংগ্রহ করেছে। ওদিকে আবার লাজাডা চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট মার্চে আলিবাবার কাছ থেকে দুইশ’ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে।