বিক্রির তালিকায় ফেইসবুকে ৮১ হাজার ব্যক্তির আলাপ!

অন্তত ৮১ হাজার ফেইসবুক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেওয়া ব্যক্তিগত মেসেজ হ্যাকাররা বিক্রির জন্য প্রকাশ করেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2018, 12:04 PM
Updated : 2 Nov 2018, 12:04 PM

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র রুশ বিভাগ বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিস-কে হ্যাকারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কাছে মোট ১২ কোটি অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এগুলো তারা বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে। তবে এই অংক নিয়ে সন্দেহ করারও কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে।   

অন্যদিকে, নিজেদের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি বলে দাবি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের। আর এই ডেটা ক্ষতিকর ব্রাউজার এক্সটেনশনের মাধ্যমে বেহাত হয়ে থাকতে পারে।

এরপর আর কোনো অ্যাকাউন্ট আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ফেইসবুক। 

বিবিসি’র ভাষ্যমতে, বিস্তারিত তথ্য ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হওয়া অনেক ব্যবহারকারীই ইউক্রেইন আর রাশিয়ার। যদিও কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও অন্যান্য স্থানের।

প্রতিটি অ্যাকাউন্ট বিক্রির জন্য হ্যাকাররা ১০ সেন্ট করে দাম চেয়েছে। তবে পরবর্তীতে তাদের বিজ্ঞাপনটি অফলাইন করে দেওয়া হয়। 

ফেইসবুকের পদক্ষেপ

ফেইসবুক কর্মকর্তা গাই রোজেন বলেন, “ক্ষতিকর এক্সটেনশনগুলো যাতে তাদের স্টোর থেকে ডাউনলোডের জন্য আর না পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে আমরা ব্রাউজার নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।”

“সেইসঙ্গে ফেইসবুক অ্যাকাউন্টগুলো থেকে নেওয়া তথ্য প্রদর্শনকারী ওয়েবসাইটগুলো সরাতে আমরা আইন প্রণয়নকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করেছি।”

চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম এই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়। সে সময় ‘এফবিসেইলার’ ছদ্মনামে এক ব্যবহারকারী ইংরেজি ভাষার একটি ইন্টারনেট ফোরামে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি বলেন, “আমরা ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করি। আমাদের ডেটাবেইসে ১২ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।” 

বিবিসি’র যোগাযোগ করা পাঁচ ব্যবহারকারী ছবি- বিবিসি

হ্যাকারদের এমন দাবি নিয়ে পরীক্ষা করেছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল শ্যাডোজ। ব্যক্তিগত মেসেজ থাকা অ্যাকাউন্টগুলোর নমুনা হিসেবে ৮১ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পোস্ট করার খবরটি নিশ্চিত করেছে তারা। 

এ ছাড়াও আরও ১,৭৬,০০০ অ্যাকাউন্টের ডেটা পাওয়া গিয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু অ্যাকাউন্টের শুধু ফোন নাম্বার আর ইমেইল অ্যাড্রেসই রয়েছে। যেসব ব্যবহারকারী এগুলো লুকানো বা ‘হিডেন’ অবস্থায় রাখেননি তাদের থেকে সেগুলো হাতিয়ে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।

হ্যাকারদের পোস্ট করা প্রোফাইলগুলোর মধ্যে রয়েছে এমন পাঁচ ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিস। হ্যাকারদের প্রকাশ করা প্রোফাইলে দেখানো পোস্টগুলো ওই ব্যবহারকারীদেরই দেওয়া বলে নিশ্চিত করেছেন তারা। 

এই পোস্টগুলোর মধ্যে একটি ছিল সাম্প্রতিক একটি ছুটির দিনের ছবি, অন্য একটিতে ছিল ব্রিটিশ ব্যান্ড ডেপেশে মোড-এর একটি কনসার্ট নিয়ে হওয়া চ্যাটিং এবং আরেকটিতে ছিল কন্যার জামাই সম্পর্কে নালিশ করা হচ্ছে এমন আলাপচারিতা। এছাড়াও এক যুগলের মধ্যে হওয়া অন্তরঙ্গ আলাপও ছিল এগুলোর মধ্যে।

এই ডেটা প্রকাশ করা হয়েছে এমন ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে একটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে বানানো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করেছে সাইবারক্রাইম ট্র্যাকার সার্ভিস। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘লকিনট ট্রোজান’ নামের একটি ভাইরাস ছড়াতে এই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড পাওয়ার সুযোগ করে দেয় এই ভাইরাস।

দায় কার?

ক্রোম,অপেরা আর ফায়ারফক্স-এর মতো ব্রাউজারগুলোতে ব্যক্তিগত শপিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, বুকমার্কিং অ্যাপ্লিকেশন বা এমনকি ছোট পাজল গেইমগুলো থার্ড-পার্টি এক্সটেনশন হিসেবে অফার করা হয়। এই এক্সটেনশনগুলোর ছোট আইকন ব্যবহারকারীদের ইউআরএল অ্যাড্রেস বারে দেখা যায় যাতে কখনও ব্যবহারকারীরা এগুলোতে ক্লিক করেন।

ফেইসবুকের দেওয়া তথ্যমতে, এটি এমন একটি এক্সটেনশন ছিল চুপচাপ ওই ব্রাউজার বা প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করত আর ব্যক্তিগত আলাপচারিতা হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দিত। 

কোন এক্সটেনশন এতে জড়িত ছিল তা ফেইসবুকের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ডেটা কেলেঙ্কারি নিয়ে একের পর এক চাপের মুখে থাকা সোশাল জায়ান্টটির বিশ্বাস এবারের এই ফাঁসে  দায় তাদের নয়।

এখানেই শেষ নয়…

বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিস হ্যাকড বিস্তারিত তথ্যের পাশে দেওয়া অ্যাড্রেসে ইমেইল করেছে। সংবাদমাধ্যমটি এক্ষেত্রে ২০ লাখ অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্যের আগ্রহী ক্রেতার বেশে ইমেইল করে।

বিজ্ঞাপনদাতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই আক্রান্ত অ্যাকাউন্টগুলোই কী কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বা এরপর সেপ্টেম্বরে খবর পাওয়া নিরাপত্তা লঙ্ঘনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল কিনা। নিজেকে জন স্মিথ নামে পরিচয় দেওয়া একজন ইংরেজিতে এর জবাব দেন। এই তথ্যের সঙ্গে ওই তথ্য ফাঁসের ঘটনাগুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি। সেইসঙ্গে তার গ্রুপ ১২ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য দিতে পারবে বলে দাবি করেন তিনি, যার মধ্যে আবার ২৭ লাখ রুশ ব্যবহারকারী বলেও উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে, ফেইসবুক এমন বড় ডেটা নিরাপত্তা লঙ্ঘনের খবর পায়নি তা অনেকটা অসম্ভব-- এমন ধারণা পোষণ করে হ্যাকারদের এই দাবি সন্দেহজনক বলে বিবিসিকে মত দিয়েছে ডিজিটাল শ্যাডোজ।

নিজের ডেটা বিক্রির এই ব্যবসায় নিয়ে কেন আরও বিস্তৃত পরিসরে বিজ্ঞাপন প্রচার করলেন তা সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি জন স্মিথ। এই ফাঁসের সঙ্গে রাশিয়া বা ক্রেমলিনের সঙ্গে যুক্ত হ্যাকারদের দল ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি’র কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সরাসরি জবাব দেন- “না।”