ঘৃণা ঠেকাতে মিয়ানমারে গতি ধীর: ফেইসবুক

মিয়ানমারে ঘৃণামূলক বিবৃতি শনাক্তে ফেইসবুকের গতি “খুবই ধীর”। এই সমস্যা সমাধানে আরও বার্মিজভাষী নিয়োগ ও সমস্যাযুক্ত কনটেন্ট শনাক্তের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি, বৃহস্পতিবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 09:11 AM
Updated : 16 August 2018, 09:11 AM

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিক্ত সমালোচনামূলক পোস্টের স্রোত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে ফেইসবুক- রয়টার্সের করা তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশের একদিন পর এই স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি দিয়েছে ফেইসবুক।

২০১৭ সালে সেনা অভিযানের মধ্যে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এই ঘটনাকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়, এখনও তারা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরেই বসবাস করছে।  

ফেইসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়, “মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতা যন্ত্রণাদায়ক আর আমরা ফেইসবুকে ভুল তথ্য আর ঘৃণামূলক বিবৃতি ঠেকাতে খুবই ধীর গতির।”

এর আগে রয়টার্সের তদন্ত থেকে করা প্রতিবেদনে জানা যায়, মিয়ানমারে ঘৃণামূলক বিবৃতি ঠেকাতে সোশাল জায়ান্টটি কয়েক বছর ধরে যে বিনিয়োগ করছে তা যথেষ্ট নয়। অথচ এটি এমন একটি বাজার যেখানে ফেইসবুকের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আর এই অঞ্চলে বারবার জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

২০১৫ সালের শুরুতে ফেইসবুকে বার্মিজ ভাষায় কথা বলতে পারেন এমন শুধু দুইজন কর্মী সমস্যাযুক্ত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করতেন।

বৃহস্পতিবার অনলাইনে দেওয়া নিজেদের বিবৃতিতে ফেইসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘৃণামূলক বিবৃতি শনাক্তের টুল ব্যবহার করছে আর পোস্ট যাচাইয়ে আরও বার্মিজভাষী নিয়োগ দিচ্ছে। চলতি বছর এপ্রিলে মার্কিন সিনেটরদের সামনে ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। 

ফেইসবুক জানিয়েছে, চলতি বছর জুনে তাদের ‘মিয়ানমার ভাষা বিশেষজ্ঞ’ ছিলেন ৬০ জনেরও বেশি আর চলতি বছর শেষে তারা এই সংখ্যা অন্তত একশ’ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

গেল সপ্তাহে রয়টার্স সামাজিক মাধ্যমটিতে রোহিঙ্গা ও অন্য মুসলিমদের অপমান ও আক্রমণ করে এমন এক হাজারেরও বেশি পোস্ট, কমেন্ট, ছবি ও ভিডিও’র সন্ধান পায়। এর মধ্যে কিছু কনটেন্টে মুসলিমবিরোধী পর্নোগ্রাফিক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, আর এগুলো ফেইসবুকে ছয় বছরের মতো দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছে।

একাধিক পোস্টে রোহিঙ্গা আর অন্য মুসলিমদের কুকুর ও ধর্ষক ডাকা হয়েছে, সেইসঙ্গে তাদেরকে নির্মূল করে দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

বর্তমানে মিয়ানমারে ফেইসবুকের একজন কর্মীও নেই। রয়টার্সের তদন্তে জানা যায়, সমস্যামূলক পোস্ট আর ঘৃণামূলক বিবৃতি পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়া’র কুয়ালা লামপুর থেকে ‘প্রজেক্ট হানি ব্যাজার’ নামের এক প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে।

ফেইসবুকের সিস্টেমের জন্য বার্মিজ ভাষা বোঝা কষ্টসাধ্য। প্রতিষ্ঠানটি ঘৃণামূলক বিবৃতি শনাক্তে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আসা অভিযোগগুলোর উপরই বেশি নির্ভর করছে।

গবেষক আর মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্ম কীভাবে মিয়ানমার ও অন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বিবৃতি ছড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে তা নিয়ে কয়েক বছর ধরে ফেইসবুককে সতর্ক করছেন তারা।  

বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে ফেইসবুক জানায়, তারা ইতোমধ্যে ঘৃণামূলক বিবৃতি ছড়ায় মিয়ানমারের এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ও সংস্থার অ্যাকাউন্ট প্ল্যাটফর্মটিতে নিষিদ্ধ করেছে।