ভুয়া সংবাদে সঙ্কটে গণতন্ত্র: যুক্তরাজ্য

গণতান্ত্রিক সঙ্কট তৈরিতে সহায়তা করছে ফেইসবুক আর গুগল, এমন মন্তব্যের মাধ্যমে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা। ভুয়া সংবাদ, নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রচার আর ডেটা অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন আর গণভোটকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য তাদের।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2018, 07:26 AM
Updated : 29 July 2018, 07:31 AM

যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট কমিটি’র দেওয়া এক প্রতিবেদনে দেশটির আইনপ্রণেতারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। কমিটির প্রধান ডেমিয়েন কলিন্স বলেন, “আমরা আমাদের গণতন্ত্রে সঙ্কট ছাড়া আর কিছুর মুখোমুখি হচ্ছি না- ভুল তথ্য আর ঘৃণামূলক বার্তা প্রচারণার মাধ্যমে ও নাগরিকদের অনুমতি ছাড়াই একদম যথাযথভাবে তাদেরকে লক্ষ্য হিসেবে নিতে ডেটার নিয়মতান্ত্রিক অপব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এমনটা হচ্ছে।”

কলিন্স আর একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিয়ে বানানো এই কমিটি ভুয়া সংবাদ নিয়ে তদন্তে গত দেড় বছর ধরে কাজ করেছে। ব্রেক্সিট প্রচারণায় লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভুয়া সংবাদ ছড়ানো আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে ফেইসবুকের বিশাল সংখ্যাক ব্যবহারকারীর ডেটা ফাঁসের মতো ঘটনাগুলো এই তদন্তে বারবার নতুন মোড় দিয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির প্রথম খবর ফাঁসকারী ক্রিস উইলি, ফেইসবুকের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মার্ক স্ক্রোফার এবং ভোট লিভ প্রতিষ্ঠাতা অ্যারন ব্যাংকস-এর মতো ব্যক্তিরা এই তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে স্ক্রোফার ব্রিটিশ এমপিদের কড়া জেরার মুখে পড়েছিলেন।  

বিস্তৃত পরিসরে বানানো এই প্রতিবেদনে ডেটা অপব্যবহার, মিয়ানমারে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর মতো ঘটনা কাতালোনিয়া গণভোটে হস্তক্ষেপ হওয়া নিয়ে রাশিয়ার করা দাবি’র মতো বিভিন্ন বিষয় জায়গা পেয়েছে।

এই প্রতিবেদন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও এই প্রতিবেদন সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের দিকেই নির্দেশ করা হয়েছে, তবুও কলিন্স আর তার দল স্পষ্টত ফেইসবুকের দিকেই তাদের দৃষ্টি রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয় ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন প্রকাশনা বিজনেস ইনসাইডার-এ প্রতিবেদনে।

কমিটির দেওয়া পরামর্শগুলো হচ্ছে-

>> গুগল, ফেইসবুক আর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষক সংস্থা আইসিও’র তহবিল যোগান দিতে চাপ দেওয়া।

>> ইলেকটোরাল কমিশন-এর হাতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করার ক্ষমতা দেওয়া, সর্বোচ্চ ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানার অনুমতি দেওয়া।

>> ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা কনটেন্টের জন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করতে নতুন নীতিমালা বানানো।

>> কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র মূল প্রতিষ্ঠান এসসিএল ইলেকশনস এবং এমারডেটার’র মার্সার পরিবারের সমর্থনে হওয়া নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হওয়া সংশ্লিষ্টতা তদন্তে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-কে আহ্বান জানানো।

>> অনলাইনে চালানো সব রাজনৈতিক প্রচারণার কনটেন্টগুলো পোস্ট করতে কারা অর্থ দিয়েছে আর কারা এটি প্রকাশ করেছে সেই তথ্য জানানো।

>> এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন, পুরো তদন্তে চলতি বছর শরতে শেষ হবে।

ফেইসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ পলিসি বলেন ফেইসবুক যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের আগে বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্য সরকার আর ইলেকটোরাল কমিশন-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি আর আমরা নতুন স্বচ্ছতা টুলগুলো বানিয়েছি।”  

ভুয়া অ্যাকাউন্ট আর ভুল তথ্য দ্রুত সরাতে ফেইসবক মেশিন লার্নিং ব্যবহার করছে বলেও জানান অ্যালেন।