মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান হোসের ম্যাকইনারি কনভেনশন সেন্টারে শুরু হওয়া ফেইসবুকের বার্ষিক এই সম্মেলন চলবে বুধবার পর্যন্ত।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে ফেইসবুকের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। তাছাড়া অংশগ্রহণকারী ডেভেলপাররা সিনিয়রদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগের পাশাপাশি প্রভাবশালী এই প্ল্যাটফর্ম থেকে কীভাবে লাভবান হওয়া যায় সে বিষয়েও ধারণা পাবেন।
ফেইসবুকের এবারের বার্ষিক এফ৮ ডেভেলপার সম্মেলনের ঘোষণায় এ বিষয়গুলোর ওপরই আলোকপাত করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কয়েক কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের তথ্যের অপব্যবহারের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর নানামুখী চাপের মুখে আছেন ফেইসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকারবার্গ।
ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে তাকে তলব করেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটি। সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়ে না গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে তাকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। ওই খবর প্রকাশের পর পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে ফেইসবুকের শেয়ারের।
এছাড়া তথ্যের গোপনীয়তা লংঘনের অভিযোগ নিয়ে ফেইসবুকেরই প্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপের সহপ্রতিষ্ঠাতার পদত্যাগের ঘোষণাও এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে অনলাইনে ফেইসবুক ডেভেলপার ফোরামে দেখা যাচ্ছে অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ।
“ওহে বালক, এখন কিছুই কাজ করছে না,” লিখেছেন একজন। আরেকজন বলেছেন, “এটাই কি ফেইসবুকের শেষের শুরু? আপনারা এই প্ল্যাটফর্মকে ধ্বংস করেছেন।”
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে ফেইসবুকের জেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দিকেও, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় যে ধরনের সুরক্ষার দরকার তারা তা করেননি বলে অভিযোগ।
বিবিসির প্রতিবেদক বলছেন, স্যান ফ্রান্সিসকোয় উদ্যোক্তা বেন পারের অফিসে গিয়ে তিনি খুব ভালো চিত্র পাননি। তার স্টার্ট আপ অক্টেন এআই রিটেইলারদের ফেইসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে।
এক শব্দে ডেভেলপারদের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উদ্বিগ্ন।”
তবে পার এও মনে করেন, ফেইসবুক ডেভেলপারদের নিয়ে গোলযোগ চায় না। ‘শিগগির’ সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি দাবি করছেন, ফেইসবুকের কাছে এটা প্রমাণিত যে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানকে বাসের নিচে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল।
ফেইসবুকে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে রাশিয়া, ডেভেলপার ও বিজ্ঞাপনদাতাসহ অন্যদের উপর দোষ চাপাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি মনে করেন, হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে ফেইসবুককে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে তাদের ওপর বাইরের হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
অ্যাকাউন্টধারী ও ডেভেলপারদের পক্ষে আনা ছাড়াও বড় বড় করপোরেট গ্রাহকরা ফেইসবুকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সোশাল মিডিয়া পরামর্শক শ্যারন ও’ডেয়া বলেন, “অনেকেই ফেইসবুকের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা এবং এই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে তাদের অর্থ ব্যয় নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছেন।
“তারা ফেইসবুকের ব্যবসায়িক মডেল, এর ভবিষ্যৎ, এর বিনিয়োগ এবং নতুন প্রযুক্তিতে তাদের বিনিয়োগ সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে চায় বলে আমি মনে করি।”
এবার এফ৮ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরাও মার্ক জাকারবার্গের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করছে।
অনেকের কাছে হঠাৎ করেই যেন আনন্দহীন হয়ে উঠেছে মার্ক জাকারবার্গের কর্মকাণ্ড।
(বিবিসি অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আইরিন সুলতানা)