অবৈধভাবে শিশুদের তথ্য নেওয়ায় অভিযুক্ত ইউটিউব

শিশুদের তথ্য সংগ্রহ ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের শিশু রক্ষা আইন মেনে চলতে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় এবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে গুগলের নামে।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2018, 10:41 AM
Updated : 13 April 2018, 10:41 AM

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অভিযোগকারীদের বক্তব্য।

২৩ জন শিশু পরামর্শক, গ্রাহক ও গোপনীয়তা বিষয়ক সংগঠন মিলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনে অভিযোগ করেছেন- শিশু রক্ষা আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ওই তথ্য ব্যবহার করে ১৩ বছরের নীচের শিশুদের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে গুগল।

গুগল যতোই দাবি করে থাকুক ইউটিউব শুধু ১৩ থেকে ঊর্ধ্ব বয়সীদের জন্য, তারা অবশ্যই জানে যে এর চেয়ে কম বয়সীরাও ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে, এমন অভিযোগ করেছে কমার্শিয়াল-ফ্রি চাইল্ডহুড, দ্য সেন্টার ফর ডিজিটাল ডেমোক্রেসি ও আরো ২১টি সংগঠন। 

গুগল যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের জন্য তৈরি চিলড্রেন’স অনলাইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন অ্যাক্ট বা কোপা মানছে না জানিয়ে অভিযোগকারী সংগঠনগুলো বলছে, অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই ১৩ বছরের নীচের শিশুদের ক্ষেত্রে গুগল তাদের স্থান, ডিভাইসের ধরন, ফোন নাম্বার এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাদের ঘোরাফেরা অনুসরণ করে থাকে।

সংগঠনগুলো গুগলের বিরুদ্ধে তাদের এই অভিযোগকে আমলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে তদন্তের দাবি জানায়।

সিসিএফসির নির্বাহী পরিচালক জশ গলিন বলেন, “শিশুদের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার করে গুগল আর্থিকভাবে বিশাল লাভ করছে। এ প্রতিষ্ঠানটির অবশ্যই কোপা আইন মেনে চলা উচিৎ।”

“অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ফেডারেল ট্রেড কমিশনের উচিৎ এখনই গুগলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা”, গলিন বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের কাছে ইউটিউব অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনলাইন মাধ্যম। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ইউটিউব ব্যবহার করে থাকে।

এদিকে শিশুদের অনুপযোগী সহিংস ও শিশু নির্যাতনমূলক ভিডিও প্রচার নিয়ে কড়া সমালোচনার পর ইউটিউবের কনটেন্ট পর্যবেক্ষণে হাজার হাজার মডারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তবে এতে সন্তষ্ট নন অভিযোগকারীরা। সেন্টার ফর ডিজিটাল ডেমোক্রেসির জেফ চেস্টার বলেন, “গুগল দ্বিমুখী আচরণ করেছে। একদিকে তারা দাবি করে থাকে ইউটিউব ১৩ বছরের উপরের শিশুদের জন্য। অন্যদিকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এর চেয়ে কম বয়সীদের প্রলুব্ধ করে থাকে বিজ্ঞাপন দেখতে।”

“ফেইসবুকের মত ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার চেয়ে আর্থিক লাভের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে গুগল।”

কনজিউমার ইউনিয়নের নীতিনির্ধারক কেটি ম্যাকইনিস বলেন, “ইউটিউব জানে শিশুরা তাদের সাইটে ভিডিও দেখে। শিশুদের উদ্দেশ্য করেই তারা ভিডিও চ্যানেলের কনটেন্ট তৈরি করে থাকে, কিন্তু শিশুদের তথ্য সংগ্রহের সময় অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়া হয় না।”

“গুগলকে কোপা আইন মেনে চলতে হবে এবং শিশুরা যেন নিরাপদে ভিডিওগুলো দেখতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে”, তিনি বলেন। 

গুগলকে উদ্দেশ্য করে কমন সেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমস পি স্টেয়ার বলেন: “শিশুদের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষায় নীতিমালা তৈরিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার এখনই উপযুক্ত সময়।”

“আমরা আশা করি, গুগল আইনজীবীদের সাথে বসবে। অভিভাবকরা কোন ধরনের কনটেন্ট তাদের শিশুদের দেখতে দিতে চান তা নিয়েও অভিভাবকের সাথে বসতে হবে গুগলকে।”

এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগপত্র নিয়ে অবগত নয় জানিয়ে ইউটিউবের একজন মুখপত্র বলেন, “শিশু ও পরিবারের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষাকে আমরা সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমরা অভিযোগপত্রটি বিস্তারিত পড়ে দেখব যদি কোনো মানোন্নয়নের সুযোগ থাকে।

২০১৫ সালে শিশুদের জন্য ইউটিউব কিডস নামে একটি অ্যাপ বানায় গুগল। অ্যাপটি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের উপযোগী কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপন দেখানো। অ্যাপ নিয়ে ইউটিউবের ওই মুখপত্র বলেন, “ইউটিউব শিশুদের জন্য নয়। আমরা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ইউটিউব কিডস অ্যাপ বানিয়েছি।”