যে কোনো উপায়ে ব্যবহারকারী বাড়ানোয় জোর ফেইসবুকের?

সব কিছুর উপরে আরও বেশি ব্যবহারকারী যোগ করা দরকার- ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এক বিবৃতিতে কর্মীদের এমন বার্তা পাঠিয়েছিলেন ফেইসবুকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2018, 09:32 AM
Updated : 30 March 2018, 09:32 AM

বৃহস্পতিবার ফেইসবুকের ওই অভ্যন্তরীণ বার্তা নিয়ে খবর প্রকাশ করে বাজফিড নিউজ।

অ্যান্ড্রু বোজওয়ার্থ নামে ফেইসবুকের এক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওই বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তিনি ‘বজ’ নামে পরিচিত। ফেইসবুক কীভাবে ২১০ কোটি ব্যবহারকারীর প্ল্যাটফর্মে উন্নত হলো তার কৌশল আর ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমটি কীভাবে ব্যবহার করে তা নিয়ে কোনো অনুসন্ধানে আগে এই বার্তার খবর প্রকাশ পায়নি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনার মুখে নতুন মোড় জন্ম দিয়েছে ‘দ্য আগলি’ শিরোনামে বজ-এর দেওয়া ওই বার্তা। 

কী ছিল এতে? বজ-এর ওই বার্তার পুরো অনুবাদ এই রকম-

আমরা প্রায়ই আমাদের কাজের ভালো বা খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করি। আমি নোংরা দিকটা নিয়েই কথা বলতে চাই।

আমরা মানুষকে সংযুক্ত করি।

যদি তারা একে ইতিবাচক করে তোলে তবে এটি ভালো হতে পারে। হয়তো কেউ এখানে ভালোবাসা খুঁজে পাবেন। হয়তো এটি কাউকে আত্মহত্যা থেকে সরিয়ে জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।

তাই আমরা আরও মানুষকে সংযুক্ত করি।

তারা যদি এটিকে নেতিবাচক করে তোলে তবে এটি খারাপ হতে পারে। হয়তো এ কারণে কেউ হয়রানির শিকার হয়ে কারও জীবন চলে যেতে পারে। হয়তো আমাদের টুলগুলো ব্যবহার করে করা কোনো সন্ত্রাসী হামলায় কারও মৃত্যু হতে পারে।”

আর তারপরও আমরা মানুষ সংযুক্ত করি। 

বাজে একটি সত্য হচ্ছে আমরা মানুষকে সংযুক্ত করাতে এত গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদেরকে আরও বেশি মানুষকে সংযুক্ত করতে দেয় এমন সবকিছু অধিকাংশ সময়ই আমাদের জন্য ভালো। এটিই আসলে একমাত্র জায়গা যেখানে আমরা যতোটা উদ্বিগ্ন ততটা পর্যন্ত বাস্তব অবস্থাটা পরিমাপ করা যায়।

এটি এমন কিছু নয় যা আমরা আমাদের জন্য করছি। বা আমাদের শেয়ারমূল্যের জন্য করছি (তাই নাকি!)। এটি আসলেই আমরা যা করি তাই। আমরা মানুষকে সংযুক্ত করি। ব্যাস।

এ কারণেই আমাদের উন্নতির জন্য আমরা যা করি সবই সমর্থনযোগ্য। কনটাক্টের তথ্য সংগ্রহের সব প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিগুলো। বন্ধুদের কাছে কাউকে সন্ধানযোগ্য রাখতে মানুষকে সহায়তা করে এমন সব সূক্ষ ভাষা। আরও যোগাযোগ আনতে আমরা যত সব কাজ করছি তা। একদিন চীনের সঙ্গে আমাদের হয়তো যেসব কাজ করতে হবে। এগুলো সবই (সমর্থনযোগ্য)।

বিশ্বের স্বাভাবিক অবস্থা সংযুক্ত নয়, এটি একত্রিত নয়। এটি সীমানা, ভাষা, আর বাড়তে থাকা ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের মাধ্যমে ভাগ হয়ে আছে। সবচেয়ে ভালো পণ্যটি জেতে না। সবাই যা ব্যবহার করে সেটিই জিতে।

আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা এটি শুনতে চাইবে না। ভোক্তারা ভালোবাসে এমন পণ্য তৈরির উষ্ণ আভা নিয়ে কাজ করার সুযোগ আমাদের সবার আছে। কিন্তু কোনো ভুল করবেন না, উন্নতির কৌশলগুলো আমাদের আজকে এখানে নিয়ে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানে আপনার যোগ দেওয়ার কারণ যদি হয় আমরা ভালো কাজ করছি, তবে এ কারণেই আমরা ভালো কাজ করছি। আমাদের চমৎকার পণ্য আছে কিন্তু উন্নতির দিকে ধাক্কা না দিলে আমরা এর অর্ধেকও থাকতাম না। আপনার বন্ধুদের এখানে পাওয়ার চেয়ে অন্য কিছু ফেইসবুককে এত দামি করে তোলে না, আর কোনো পণ্যের সিদ্ধান্তেই এত বন্ধু পাওয়া যায় না যতোটা না উন্নতিতে থাকা পণ্যটির সঙ্গে পাওয়া যায়। ফটো ট্যাগিং নয়, নিউজ ফিড নয়। মেসেঞ্জার নয়। কিছুই না।

আমাদের প্রায় সবগুলো কাজেই, আমরা যা বিশ্বাস করি তা নিয়ে কঠিন প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে হয়। আমাদেরকে পরিমাপের তথ্য প্রমাণ করতে হয় আর এটিও নিশ্চিত করতে হয় যে বড় কোনো বাস্তবতায় আমরা হেরে যাচ্ছি না। কিন্তু মানুষকে সংযুক্ত করছি। এটাই আমাদের কাজের দায়িত্ব। কারণ এটাই আমরা করি। আমরা মানুষকে সংযুক্ত করি।  

এদিকে, এই বার্তায় কী লেখা ছিল তার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল না বলে জানালেও বোজওয়ার্থ-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন ফেইসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। তিনি বলেন, “বজ একজন মেধাবী নেতা যিনি অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেন। এটি এমন একটি যার সঙ্গে আমিসহ ফেইসবুকের অধিকাংশ কর্মীই জোর অসস্মতি প্রকাশ করে। শেষ ফলাফল মাধ্যমটাকে সমর্থনযোগ্য করে দেয়, এমনটা আমরা কখনোই বিশ্বাস করি না। আমরা স্বীকার করি মানুষকে সংযুক্ত করাটাই শুধু যথেষ্ট নয়। মানুষকে আরও কাছে আনতেও আমাদের কাজ করা দরকার। আমরা আমাদের পুরো উদ্দেশ্য বদলেছি আর গত বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সেদিকে নজর দিচ্ছে।”

নিজের দেওয়া ওই বার্তার সঙ্গে এখন আর সম্মতি প্রকাশ করেন না বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন বজ। “এমনকি আমি যখন এটি লিখেছিলাম তখনও এটি বিশ্বাস করতাম না”- মন্তব্য তার।

বজ আরও বলেন, “এই ধরনের কঠিন বিষয় নিয়ে তর্ক করা আমাদের প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আর এটি কার্যকরীভাবে করতে আমাদেরকে বাজে ধারণাগুলো বিবেচনা করতেও সমর্থ হতে হবে, যদি শুধু সেগুলো দূর করার জন্য হয়।”

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফেইসবুকের পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর ডেটা অপব্যবহার করেছিল ডেটা বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এ নিয়ে ব্যবহারকারী, বিজ্ঞাপনদাতা, বিনিয়োগকারী আর নীতিনির্ধারকদের চাপের মুখে আছে ফেইসবুক। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে জাকারবার্গ ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে গ্রাহকদের ডেটা সুরক্ষায় তার প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ যথেষ্ট কিনা তা ব্যাখ্যায় তাকে কংগ্রেস আর ব্রিটিশ এমপিদের সামনে হাজির হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ এমপিদের নিজে সশরীরে হাজির না হয়ে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি। আর এপ্রিলে কংগ্রেসের সামনে তার হাজির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।