তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে কণ্ঠ মিলয়ে তারা শপথ নিল- “আমি ইন্টারনেট নিরাপদে ব্যবহার করব। ইন্টারনেট ব্যবহারে সর্তক হব।”
‘শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটারে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ও ফেইসবুক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এএম শাকিল ফয়জুল্লাহ তাদের সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যারা ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এই শিশু-কিশোররা ইন্টারনেটের নিরাপত্তা নিয়ে কী জানে, কী ভাবে তা বোঝাই ছিল তাদের জরিপের উদ্দেশ্য।
# জরিপের ৫.১ শতাংশ উত্তরদাতা অনুমতি ছাড়া অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি প্রকাশের কথা স্বীকার করেছে। ৩.৩ শতাংশ বলেছে, অনুমতি নেওয়া অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। সোশাল মিডিয়ায় হয়রানি বা উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ার কথা বলেছে ১৩ শতাংশ শিশু।
# ১৩.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে, অপরিচিত কেউ সোশাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত ছবি বা পারিবারিক তথ্য চাইলে, তাকে সামান্য তথ্য দিলে কোনো ক্ষতি হবে বলে তারা মনে করে না। আর ৫২ শতাংশ বলেছে, অপরিচিতি কেউ অনলাইনে বন্ধু হতে চাইলে তাতে তাদের আপত্তি নেই।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রশ্ন আর উত্তরের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নেওয়া বক্তব্যে শিশুদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেন যে, ইন্টারনেটে যে যাই করছে বা দেখছে, সে কাজে সবারই সতর্ক থাকা দরকার।
“আমাদের খেয়াল করতে হবে যে আমরা অনলাইনে, ফেইসবুকে যা দেখছি সব কিছুই সত্য নয়। যে ছবি দেখছি, যে ইনফরমেশন পাচ্ছি সেটা অনেক সময় ফেইক (ভুয়া) হতে পারে, সেটা আমাদের সাবধান থাকতে হবে।”
উদাহরণ দিতে গিয়ে পলক বলেন, “ধর ফেইসবুকে দিল তুমি হালকা-পাতলা একটা বাচ্চা তুমি মোটা হতে চাও তুমি প্রতিদিন সকালে এটা খাও। তুমি খাবে? কেউ বলল ভুঁড়ি কমানো জন্য এটা খাও, সেটা খাওয়া যাবে না।
“ফেইসবুকে যাই দেখ বা অনলাইনে যাই শোনো সেটাকে সত্যি মনে করবে না। তোমার বাবা-মা, শিক্ষক বা বড়দের জিজ্ঞেস করবে, সেটা সত্যি কি না।”
ফেইসবুকের একজন ব্যবহারকারী ছেলে না মেয়ে, তার বয়স কত- তা প্রোফাইল পিকচার দেখে যে সব সময় যাচাই করা যায় না, সে বিষয়ে শিশুদের সতর্ক করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, না দেখে কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা যাবে না। অনলাইনে অপরিচিত কারো সাথে চ্যাট করা যাবে না। গেইম খেলা বা অচেনা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
“যদি কেউ সাইবার স্পেসে বুলিং করে বা ব্ল্যাকমেইল করে তুমি কি ভয়ে চুপ করে থাকবা? কোনো কিছুকে ব্রিবতকর বিষয় বলে মনে হলে বাবা-মা, শিক্ষক বা বড়দের বলবা, কখনোই নীরবে সব কিছু সহ্য করবা না।”
ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেহেতু বন্ধ করা যাবে না, সেহেতু ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে শিশুদের সেই শপথ করান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ফেইসবুক দিয়ে শুধু ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা আর ইউটিউবে শুধু গান বা মুভি দেখা না, এর বাইরেও অনেক প্রোডাক্টিভ কাজ করা যায়।”
কিন্তু ইউটিউবে থাকা সব কনটেন্টই যে শিশুদের জন্য উপযুক্ত না, সে কথাও তিনি বলেন।
“বাচ্চাদের জন্য, বড়দের জন্য আলাদা আলাদা কনটেন্ট আছে, বড়দের কনটেন্ট ছোটদের দেখা উচিত না। ইন্টারনেটে যত কিছু আছে সব কিছুই আমরা না দেখে, না শুনে, না বুঝে ব্যবহার করতে পারি না।
“জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পার। তবে সেই ইন্টারনেট যদি তোমাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয় তখন কিন্তু তোমাদের সাবধান হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আসা অভিভাবক আর শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন পলক।
“আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হয়ত একজন নির্ভরযোগ্য আত্মীয় বা কারো কাছে বাচ্চাকে রেখে গেলাম, দরজায় তালা দিয়ে গেলাম কিন্তু একবারও চিন্তা করি না যে দরজার তালা দেওয়া আছে কিন্তু ইন্টারনেটের দুনিয়া বাচ্চাদের আছে খোলা আছে। সে কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চলে যেতে পারে, যে কোনো ছবি ভিডিও সে দেখতে পারে বা শেয়ার করে দিতে পারে। এজন্য বাবা-মাদের সব চেয়ে বেশি সতর্ক হতে হবে।”
অন্যদের মধ্যে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার, ফেইসবুকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার পলিসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার শ্রুতি মঘি এবং বিটিআরসির কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এ অনুষ্ঠানে পলক ডিজিটাল দুনিয়ার বিপদ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা এবং নিরাপদ অনলাইন কনটেন্ট ব্যবহারের বিষয়ে ইউনিসেফ ও ফেইসবুকের উদ্যোগে বছরব্যাপী সচেতনামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
তিনি জানান, এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে সচেতনাতামূল কনটেন্ট পৌঁছে দেওয়া হবে।