২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে রিপাবলিকান ভোটারদের টার্গেট করতে এই কোম্পানি ওই পাঁচ কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছিল বলে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার অপকর্মের তথ্য ফাঁস করা ক্রিস্টোফার উইলি জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী উইলি সোমবার লন্ডনে বলেন, ভোটারদের প্রোফাইল তৈরির জন্য ‘রিপন’ নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিল অ্যাগ্রেগেটেল আইকিউ (এআইকিউ)।
২০১৪ সালে একটি পারসোনালিটি কুইজের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে ট্রাম্পের প্রচারণায় কাজে লাগায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।
উইলির দাবি, ওই সব তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে বিক্রি করা হয়। তারপর ফেইসবুক গ্রাহকদের মানসিকতার বিচারে তাদের শ্রেণিবিন্যাস করে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নির্ধারণের রসদ যোগানো হয়।
এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গকে তলব করেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটি। তবে জাকারবার্গ বলেছেন, তিনি নিজে আসছেন না। ইস্টার সানডের বিরতির পর পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হলে প্রথম সপ্তাহেই তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য নিয়ে হাজির হবেন ফেইসবুকের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার ক্রিস কক্স।
জাকারবার্গের এই সিদ্ধান্তকে ‘বিস্ময়কর’ মন্তব্য করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের ডিপার্টমেন্ট ফর কালচার মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান ডেমিয়েন কলিন্স।
তবে জাকারবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট সদস্যদের সামনে হাজির হতে চেয়েছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, “পাবলিক ডোমেইনে এখনও স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে, এআইকিউ প্রকৃতপক্ষে ‘রিপন’ তৈরি করেছিল, যে সফটওয়্যার ফেইসবুক ডেটা থেকে প্রণীত অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছিল।”
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের শহর রিপন-এ ১৮৫৪ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে এই নামে তৈরি করা সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ভোটার ডেটাবেইজ, নির্দিষ্ট ভোটারদের টানতে কর্মকৌশল, প্রচার কার্যক্রম, তহবিল সংগ্রহ এবং সমীক্ষা পরিচালনার কাজ করে ট্রাম্প শিবির।
ফেইসবুক গ্রাহকদের তথ্য ব্যবহার নিয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে অ্যাগ্রেগেটেল আইকিইউয়ের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে এর আগে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে রয়টার্সকে বলা হয়, তারা কখনও এমনটা করেনি, তারা কখনও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার অংশ নয়, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো সংশ্রবও ছিল না।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাও এই কোম্পানির সঙ্গে ফেইসবুক প্রোফাইল ডেটা শেয়ারের কথা অস্বীকার করেছে।
কোটি কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের অপব্যবহারের কথা উইলি প্রকাশ করার পর ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম এই সোশ্যাল মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিরা।
ভুল স্বীকার করে গত সপ্তাহে ফেইসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়েছেন জাকারবার্গ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার দুই দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়েও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। জাকারবার্গ বলেছেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে লাখ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস ঠেকাতে তারা আরও পদক্ষেপ নিতে পারতেন।
“এটি বিশ্বাসের লঙ্ঘন ছিল। সেজন্য আমি দুঃখিত।”
ভবিষ্যতে ফেইসবুক গ্রাহকদের তথ্যে তৃতীয়পক্ষের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাকারবার্গ।
তারপরেও ফেইসবুকের শেয়ারের দর অব্যাহতভাবে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির বাজার মূলধন গত সপ্তাহেই ৫৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে।