জাকারবার্গের না আসার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর: ব্রিটিশ এমপি

কোটি কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের তথ্যের অপব্যবহার নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে তলবকারী ব্রিটিশ এমপিদের সামনে সশরীরে হাজির হচ্ছেন না ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2018, 02:54 PM
Updated : 27 March 2018, 05:31 PM

ফেইসবুকের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার ক্রিস কক্সকে পাঠাচ্ছেন তিনি। ইস্টার সানডের বিরতির পর প্রথম সপ্তাহেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে প্রতিবেদন নিয়ে হাজির হবেন কক্স।

ফেইসবুক প্রধানের এই সিদ্ধান্ত ‘বিস্ময়কর’ মন্তব্য করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য জাকারবার্গের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের ডিপার্টমেন্ট ফর কালচার মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান ডেমিয়েন কলিন্স।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে পাঁচ কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগানোর বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। ফেইসবুকের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা রয়েছে এই বিতর্কের কেন্দ্রে।

ওই নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছিল তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।

এই কেলেঙ্কারি খবর প্রকাশের পর ইতোমধ্যে ফেইসবুক গ্রাহকদের ‘আস্থা লঙ্ঘনের’ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন জাকারবার্গ।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত রোববার দুই দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়েও ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। জাকারবার্গ বলেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে লাখ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস ঠেকাতে তারা আরও পদক্ষেপ নিতে পারতেন।

“এটি বিশ্বাসের লঙ্ঘন ছিল। সেজন্য আমি দুঃখিত।”

ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান তদন্ত কমিটি এখন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী ক্রিস্টোফার উইলির বক্তব্য শুনছে। ব্রিটিশ এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ২০১৪ সালে একটি পারসনালিটি কুইজের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ফেইসবুক গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কথা তিনিই প্রকাশ করেছেন।

উইলি বলছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের তৈরি করা একটি অ্যাপের মাধ্যমে চালানো ওই কুইজে অংশ নিয়েছিলেন ২ লাখ ৭০ হাজার ফেইসবুক গ্রাহক। আর তাদের বন্ধুতালিকা থেকে পাঁচ কোটি ফেইসবুক অ্যাকাউন্টধারীর ব্যক্তিগত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল ওই অ্যাপের মাধ্যমে। এই ফেইসবুক গ্রাহকদের অধিকাংশই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।

উইলির দাবি, ওই সব তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে বিক্রি করা হয়। তারপর ফেইসবুক গ্রাহকদের মানসিকতার বিচারে তাদের শ্রেণিবিন্যাস করে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নির্ধারণের রসদ যোগানো হয়।

সাবেক কর্তা কেমব্রিজ অ্যানালিটকার পদচ্যুত প্রধান নির্বাহী অ্যালেকজান্ডার নিক্স রাজনৈতিক বা প্রযুক্তি খাতে কোনো ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ ছাড়াই অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানান উইলি।

শুনানিতে এমপিদের বলা হয়, একবার নিক্স ‘দুই লাখ পাউন্ড দামের ঝাড়বাতি’ কিনতে যাওয়ায় এক অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের দেরি হয়ে যায়।

উইলি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে কমিটির কাছে এক শুনানিতে ফেইসবুক তথ্য ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে নিক্স ‘মিথ্যাচার’ করেছিলেন।

“ফেইসবুক তথ্য এবং আলেকজান্ডার কোগানের ডেটা-সেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এই কোম্পানি ভিত্তি তৈরি হয়।”

পারসোনালটি টেস্টের মাধ্যমে ফেইসবুক গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আলেকজান্ডার কোগান যে ডেটা-সেট তৈরি করেছিলেন, তা নিজেদের সংগ্রহে নিতে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কমপক্ষে ‘১০ লাখ ডলার’ ব্যয় করেছিল বলে জানান উইলি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন ছিলেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিচালকদের একজন।তিনি বিলাসবহুল অফিসে বসার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সে কারণে নিক্স তার জন্য কেমব্রিজে একটি ভুয়া অফিস চালু করেছিলেন বলে জানান উইলি। 

তিনি বলেন, এরপর ব্যানন ট্রাম্পের প্রচারে পরামর্শক হিসেবে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে ডাকেন।

“তিনি (ব্যানন) ভেবেছিলেন, এটা খুবই একাডেমিক কোম্পানি।”

ফেইসবুক গ্রাহকদের তথ্য কেলেঙ্কারির জের ধরে এরইমধ্যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা থেকে বরখাস্ত হয়েছে নিক্স। তাকেও তলব করেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান কমিটি।

জাকারবার্গের বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ডেমিয়েন কলিন্স বলেছেন, ফেইসবুকের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার ক্রিস কক্স সরাসরি জাকারবার্গকে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। তিনি ইস্টার বিরতির পর প্রথম সপ্তাহে তথ্য-উপাত্ত দাখিল করবেন। তবে এখনও তারা জাকারবার্গের হাজির হওয়ার আশা করছেন।

আরও খবর-