পাকিস্তানে বিদ্বেষ রুখতে অ্যাপ

এখন থেকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই উগ্রবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্যদাতার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন পাকিস্তানের জনগণ।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2018, 02:40 PM
Updated : 28 March 2018, 04:49 PM

ভয়েস অফ আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চউকাস’ নামের এই মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে পাকিস্তানের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম অথরিটি (এনএসিটিএ)।  দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল এ মাসেই ইসলামাবাদে এনএসিটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে এই অ্যাপের উদ্বোধন করেন।

অ্যাপটিকে পাকিস্তানের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অংশ জানিয়ে এনআইসিটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘সে নো টু এক্সট্রিমিজম’ বা ‘জঙ্গিবাদকে না বলুন’ স্লোগান নিয়ে বানানো এই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পরিচয় গোপন রেখে যে কেউ তার চারপাশ ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে পারে এমন যে কোনো ব্যানার, পুস্তিকা, বক্তব্য এবং সভার ওয়েব লিংক, অডিও ক্লিপ, ছবি ও ভিডিও এতে দেওয়া যাবে।

এনআইসিটিএ’র পরিচালক এহসান ঘানি বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবাইকে সচেতন করা, অনলাইনে ও চারপাশে সজাগ দৃষ্টি রাখা।”

তবে এই অ্যাপের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ কতোটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান দেশটির সাইবার বিশেষজ্ঞ নিঘাত দাদ।

তিনি বলছেন, পাকিস্তানে ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত বিদ্বেষকে পুঁজি করেই মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের মতবাদ প্রচার করে থাকে। 

দাদ বলেন, “অ্যাপটিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সংজ্ঞা দেওয়া নেই। কোনটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য তা আসলে বিশাল আলোচনা, এটি একইসঙ্গে অস্পষ্ট এবং অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও।

“অ্যাপে নাগরিকের দেওয়া তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু আসলে কোন ধরনের তথ্য পাঠানো হবে সে সম্পর্কে অ্যাপটিতে কিছু বলা নেই।”

ভয়েস অফ আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে সাইবার অপরাধ আইন থাকার পরও জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীরা অবাধে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

ইংরেজি দৈনিক ডনের ২০১৭ সালের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ৬৪টি দলের মধ্যে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, জামাত-উল-আহরার, সিপাহ-ই-সাহাবা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতসহ ৪১টি দলই অনলাইনে অবাধে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ অনুসারী নিয়ে উর্দু ভাষায় পরিচালিত এদের শতাধিক সোশাল মিডিয়া পেইজে নিয়মিত অডিও-ভিডিও আপলোড করা হয়।

চউকাসে তথ্যদাতার পরিচয় গোপনের আশ্বাস কর্তৃপক্ষ দিলেও বাস্তবে তা হবে কি না সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ নিঘাত দাদ।

তিনি বলেন, “অ্যাপটিতে কোনো রকম তথ্য নিরাপত্তা নেই। ডেটাবেইস থেকে নিজের তথ্য মুছে দেওয়ার কোনো সুবিধা পাবেন না ব্যবহারকারী। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, যে কেউ ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে তার ফোন নম্বর দিয়েই।”

পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও নিঘাত দাদের উদ্বেগকে সমর্থন করছেন। তবে এ ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক আচরণ শনাক্তে পাকিস্তানি নাগরিকদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাসুল বখশ রইস বলেন, একটি অ্যাপ দিয়ে রাতারাতি পরিস্থিতির বদল সম্ভব নয়।

“অনেক সময় মানুষ না বুঝেই জঙ্গিবাদী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বিপথে যায়। এই উদ্যোগ নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।”

পাকিস্তানের ১৯ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করে। এদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি।

এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে রসুল বখশ বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস নির্মূলে নাগরিকদের সতর্ক করতে এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে অ্যাপটির মতো একটি মাধ্যম থাকা জরুরি হয়ে উঠেছে।”