রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়াতে ফেইসবুকের ভয়ানক ব্যবহার: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে ফেইসবুকের ভয়ানক ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 01:37 PM
Updated : 13 March 2018, 06:08 PM

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা নিয়ে তদন্তে থাকা জাতিসংঘের এই তদন্ত কমিটির ভাষ্যে ফেইসবুকের যে ব্যবহার হয়েছে তাতে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘জান্তব’ চেহারায় নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে, যা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না।

গত বছর ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনা ঘাঁটি ও পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গা দমন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন অন মিয়ানমার সোমবার তাদের তদন্তের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এক সংবাদ সম্মেলনে মিশনের চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসম্যান বলেন, বিস্তৃত পরিসরের মানুষের মাঝে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তিক্ত মনোভাব তৈরিতে এই সোশাল মিডিয়া বাস্তবিক অর্থে ভূমিকা রেখেছে।

“বিদ্বেষমূলক বক্তব্য তো ছিলই, অবশ্যই, এটা ছিল এর একটি অংশ।”

“মিয়ানমার পরিস্থিতি যতটা উদ্বেগজনক, সেখানে সামাজিক মাধ্যম মানেই ফেইসবুক আর ফেইসবুকই সামাজিক মাধ্যম।”

এর আগে দেশটিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানো ঠেকাতে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছিল ফেইসবুক।

এখন ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে ‘বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের কোনো স্থান নেই।”

প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “আমরা এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেই। আর নিরাপত্তা ও পাল্টা বিবৃতিমূলক প্রচারণা নিয়ে মিয়ানমারে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে কাজ করছি।

“এই কাজের মধ্যে আলাদাভাবে একটি সেইফটি পেইজ ফর মিয়ানমার খোলা, স্থানীয় বিষয়গুলো ভেবে আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড-এর একটি বিশেষায়িত রূপ বানানো আর নাগরিক সমাজ ও দেশটিজুড়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গ্রুপকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের মতো কার্যক্রম রয়েছে।”

“অবশ্যই সব সময়ই আমরা আরও বেশি কিছু করতে পারি আর আমাদের সম্প্রদায়কে নিরাপদ রাখতে সহায়তার জন্য আমরা স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।”

মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেন, “আমরা জানি অতি-জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের নিজস্ব ফেইসবুক রয়েছে আর তারা সত্যিই এতে রোহিঙ্গা বা অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগুলোর বিরুদ্ধে প্রচুর সহিংসতা ও ঘৃণা ছড়াচ্ছে।

“আমি ভীত যে ফেইসবুক এখন পশুতে পরিণত হয়েছে, তার যে উদ্দেশ্য ছিল তা আর নেই।”

মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া ছয় শতাধিক রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের এই তদন্ত দল।

এর সঙ্গে স্যাটেলাইট থেকে সংগ্রহীত মিয়ানমারের ছবি আর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণা করেছে তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “মানুষ নির্বিচার গুলিতে আর গুলির জখম নিয়ে মারা গেছে। কাউকে তাদের বাড়িতেই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, অনেক সময় তাদের মধ্যে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী আর শিশুরাও ছিল। অনেককে কুপিয়ে মারা হয়েছে।”