ও মাই সার্ন!

সার্ন দেখার সুযোগ হয়ে হয়েও মিস হয়ে যাচ্ছিল। তবে, এ নিয়ে আমার স্টাডি ভাল ছিল। কোন ট্রাম, কতক্ষণ লাগে এসব তথ্য মুখস্থ। সঙ্গে থাকা মায়ানমারের সতীর্থ বলল, “ওয়াও! তুমি তো এখানে নির্ঘাত ট্যুরিস্ট গাইড হয়ে যেতে পারবে!” আমি হেসে অরেঞ্জ জুসে চুমুক দেই।  ঠিক এই কমপ্লিমেন্ট অনেকবারই শুনেছি!  

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2018, 11:51 AM
Updated : 5 March 2018, 11:52 AM

প্লাটফর্মে অপেক্ষা পর্ব। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ১৮ নম্বর ট্রামের প্লাটফর্মে আসার কাউন্ট ডাউন চলছে। টিকেট লাগে না। পয়সাও দিতে হয় না। এমনকি ট্রামে-বাসে-ট্রেনে (জেনেভা টু এয়ারপোর্ট ট্রেন ছাড়া) কেউ টিকেট চেকও করে না। যদিও বিদেশি হিসেবে ঝামেলা এড়াতে আমাদের সবার কাছে একটা ট্রাভেল কার্ড ছিল।

ট্রামের একেবারে শেষ স্টেশনটা হচ্ছে সার্ন। সাবধান থাকতে বারবার চোখ রাখি ট্রামের ডিসপ্লে মনিটরে আর কান পাতি ভয়েস অ্যালার্টে। এভাবে ১৮-২০টা স্টেশন আর মিনিট ২০ পেরিয়েই সার্ন স্টেশন।

 

নামতেই হিম হিম ঝাপটা। গলায় মাফলারটা মোড়াতে মোড়াতে চোখ আটকে গেল দূরের সাদা তুষার জমা পর্বতে। আমরা হাড় কাঁপানো সুন্দরের মুখোমুখি! কিন্তু সার্ন কোথায়?

ডানে তাকাতেই কাঠের ফ্রেমের গ্লোব! ঠাণ্ডায় গায়ে চিমটি কেটেও বোধ পাচ্ছিলাম না! কেবল চোখটা খোলা রয়ে গেল বাতাস উপেক্ষা করে। আমি তো সার্ন গ্লোবের সামনেই!

সার্ন সীমানা ঘেঁষে তারের বেড়া। সাইকেলপ্রেমিদের জন্য সুখবর হচ্ছে সার্ন সীমানায় ফুটপাতে সারি করে সাইকেল রাখার বরাদ্দ দেয়া আছে। তারের বেড়ার ফোকর দিয়েই দেখা গেল গ্লোবের সামনে স্থাপিত স্টিলের ভাস্কর্য, দেখা গেল এক্সিলারেটিং সায়েন্স টানেল; কেবল সার্ন সীমানায় ঢোকা গেল না! জানলাম ওদের কার্যালয় হয়ে আসতে হবে এবং কার্যালয়টি ঠিক উল্টোপাশেই।

ছবি- আইরিন সুলতানা

অফিসকক্ষে ঢুকে প্রতীক্ষারত পর্যটকদের দেখা গেল। আমাদের মতো অনেকের গলায় ঝুলে আছে জাতিসংঘে আয়োজিত আইজিএফ সম্মেলনের আইডিকার্ড। অভ্যর্থতা ডেস্কে গিয়ে আমরা জানালাম, গ্লোব দেখতে চাই। ডেস্কের তরুণী হাতে থাকা তালিকায় আমাদের পরিচয় মিলিয়ে দেখতে চাইলেন। সতীর্থ আর আমি এবার মুশকিলে!

নাস্তার টেবিলেই সতীর্থ বলেছিল, আগে থেকে নিবন্ধন ছাড়া সার্ন ভ্রমণ করা যাবে কিনা। তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম, যদিও মাসখানেক আগে নিবন্ধন করার একটি পদ্ধতি রয়েছে, তবে হুটহাট করেও সার্ন বেরিয়ে আসা যায়। আমার ভরসাতেই সতীর্থ সার্ন-এ এসে গেল, এখন যদি এই সুইস তরুণী আমাদের সার্নে ঢুকতে না দেন, তবে তো দিনটাই ভেস্তে যাবে!

তরুণীকে রাজি করানোর দায়িত্বটা আমিই নিলাম। বললাম, আমরা আসলে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত আইজিএফ সম্মেলনে এসেছি। বিভিন্ন সেশনের মাঝে একটু সুযোগ করে এসেছি সার্ন দেখতে। আগে থেকে পরিকল্পনা করা কঠিন ছিল। আজ না হলে আর হয়তো সময় হবে না!

ছবি- আইরিন সুলতানা

আমার অকপট সারল্য কাজে দিল। মেয়েটি আমাদের দুজনের নাম কাগজে লিখে নিতে নিতে বললেন একটা টিম আছে, ওরাও একই সম্মেলনে এসেছে। ওদের টিমে যদি দুয়েকজন কম হয় তাহলে আমাদের ওই দলে জুড়ে দেওয়া হবে এবং এটি হবে একটি গাইডেড ট্যুর।

পাঠক চাইলে একটি ভার্চুয়্যাল ট্যুর সেরে নিতে পারেন সার্নের ওয়েব সাইট https://home.cern থেকে। যাদের সামনে জেনেভা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা http://visit.cern/tours/guided-tours লিংকে গিয়ে গাইডেড ট্যুরের অনুরোধ জানিয়ে রাখতে পারেন আগেভাগে।

একটা সময় অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে ডাক আসে। আমরা ওই দলের সঙ্গে যাচ্ছি! একজন তরুণ গাইড হাজির হয় আমাদের মাঝে। নিজের পরিচয় এবং গাইডেড ট্যুরের এজেন্ডা জানিয়ে আমরা সারি ধরে বেরিয়ে পরি। আমরা যাচ্ছি রাস্তার উল্টোপাশে সার্ন গ্লোবে!

ছবি- আইরিন সুলতানা

পদার্থবিজ্ঞান গবেষণায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ গবেষণাগার সার্ন এর পূর্ণাঙ্গ নাম হচ্ছে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ। এর ফরাসি হচ্ছে ‘কনসে ইউরোপিয়া পো লা হোসাশে নিউক্লিয়া’, যা সংক্ষেপে সার্ন। হিগস-বোসন বা গডড্যাম পার্টিকেল নিয়ে বিজ্ঞান-উৎসুকদের মাঝে আগ্রহ জাগিয়ে রেখেছে সার্ন-এর লার্জ হেড্রন কোলাইডার বা এলএইচসি।

ঈশ্বর কণা তত্ত্বটি অনেকের কাছে বিতর্কিত হলেও বিজ্ঞানী হিগস ও ইংলার্ত-কে ২০১৩ সালে নোবেল প্রদান ছিল ঈশ্বর কণার স্বীকৃতি। অন্যদিকে ২০১২ সালে লার্জ হেড্রন কোলাইডারের মাধ্যমে সার্ন দাবি করেছিল এর অস্তিত্ব। ঈশ্বর কণার ইংরেজি নাম গড পার্টিকেল। ১৯৯৩ সালে নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী লেডারম্যান তার কণা পদার্থবিজ্ঞান গ্রন্থের প্রাথমিক নাম দেন ‘দ্য গডড্যাম পার্টিকেল’। প্রকাশকও এই নামের কাটতি বুঝেছিলেন। সামান্য সম্পাদনায় ’দ্য গডড্যাম পার্টিকেল’ হলো ’দ্য গডস পার্টিকেল‘, আর তারপর বইয়ের বিক্রি যেমন হলো তেমনি ঈশ্বর কণার প্রতি সবার নজর থাকলো। তবে এই কণা হিগস-বোসন কণা নামেও সমাদৃত। বিজ্ঞানী হিগস আর বোসন এই নামের পেছনের দুজন ব্যক্তি। বোসনকে নিয়ে বাঙালিরা গর্বিত কারণ তিনি বাঙালি বিজ্ঞানি সত্যেন্দ্রনাথ বসু। হিগস-বোসন কণাই হোক আর ঈশ্বর কণাই হোক, এই কণার আবিষ্কারে বিগ ব্যাংয়ে যা ঘটেছিল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটানো গেছে- ২৭ কিমি টানেল লার্জ হেড্রন কোলাইডারের ভেতরে এটমের সঙ্গে এটমের শক্তিশালী সংঘর্ষে।

ছবি- আইরিন সুলতানা

সেই সার্ন– যা শুনে আসা, পড়ে আসা! সেই সার্ন যা দেখতে চলেছি! এই মুহূর্তটা তো অবশ্যই থ্রিলিং!

সেই সার্নের জনপ্রিয় স্থাপনা সার্ন গ্লোবের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে গাইড একবার গ্লোব এবং কমপাউন্ডে থাকা স্থাপনাগুলো নিয়ে জানান দেন, সঙ্গে দেন ছবি তোলার সুযোগ। গাইড শুরুতেই জানিয়েছেন তিনি প্রথমত ‘টেকি’ বা প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি অবগত নন এবং দ্বিতীয়ত তিনি সদ্য সার্নে গাইড হিসেবে যোগদান করেছেন।

সার্ন গ্লোবের সীমানায় রয়েছে ওয়ান্ডারিং দ্য ইমেজারেবল স্থাপত্য। কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানিটোবা থেকে চারুকলায় প্রশিক্ষিত গেইল হার্মিক ২০০৫ সালে সার্ন গবেষণা সম্পর্কে প্রথমবারের মতো জেনে বিহ্বল হয়েছিলেন।  তারই নকশাকৃত ৭.০৯ মিটার উঁচু এবং ১৫ টন স্টিলের এই স্থাপত্যটি একটি বিশাল রিবনের মোহনীয় বিভঙ্গ তুলে ধরেছে। আর এর প্রতি ভাঁজে বিজ্ঞানের যুগান্তরী আবিষ্কারের কথা লেখা রয়েছে। রিবনের প্রান্ত বাতাসে ভেসে শেষ হয়ে যায় আগামির আবিষ্কার প্রত্যাশায়।

ছবি- আইরিন সুলতানা

গ্লোবের সামনে রয়েছে অ্যাকসেলেরেটিং সায়েন্স লেখা একটি এলএইচসি টানেল। সাধারণ গাইডেড ট্যুরে আন্ডারগ্রাউন্ড গবেষণাগার দেখা সম্ভব নয়, তাই এই টানেল ছুঁয়েই নিজেকে একটি বৃহৎ গবেষণার অংশ মেনে নিতে হবে।

এবার আমরা গ্লোবের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকি। প্রবেশকালে কালো দেয়ালে চোখে পড়বে বিভিন্ন ভাষায় লেখা চিন্তাকর্ষক বাণী– “হোয়্যার ডু উই কাম ফ্রম? হোয়্যার আর উই গোয়িং?” সার্নে আসবেন আর পৃথিবী সৃষ্টি রহস্য নিয়ে ভাববেন না তাতো হয় না! কিন্তু আমি ভিন্নভাবে ওই দুটো প্রশ্নের উত্তর দেই মনে মনে,  আমি সুদূর বাংলাদেশে থেকে এসেছি এবং আমি এখন সার্ন গ্লোবে প্রবেশ করছি!

আমরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে সার্ন গ্লোবেল ভেতরে দাঁড়িয়ে। একে প্রদর্শনী হল বলা যায়। এখানে কিছু ডিম্বাকৃতি বসার চেয়ার আছে। কাঁচ ঘেরা বাক্সে সংরক্ষিত আছে এলএইচসি গবেষণার চিহ্ন। কোনো দ্বিধা না রেখে এখানে ছবি তোলা অনুমিত। তাই ক্যামেরার চোখটাও তৈরি রাখি আলোআঁধারির প্রদর্শনী কক্ষটাকে ধারণে।

ছবি- আইরিন সুলতানা

শুরু হলো ’ইউনিভার্স অফ পার্টিকেলস’ প্রদর্শনী। সে কি ভীষণ নাটকীয় আবহ তখন পুরো হল জুড়ে। দেয়াল যেন হয়ে গেল ডিসপ্লে স্ক্রিন। এমনকি মেঝেতে যে গোলাকার চাকতি স্থাপনা ছিল, সেখানে অ্যানিমেটেড আলোছায়ায় বিগ ব্যাং ঘটে যায়। পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ধরে এগুতে এগুতে আজকের এলএইচসি পর্যন্ত ঠেকে অ্যানিমেশন আর নারী কণ্ঠের উপস্থাপনা।

সতীর্থ পাশ থেকে বললো, আমার কাছে মনে হচ্ছে নাইট ক্লাবে আছি! আমি ভ্রু কুঁচকে হাসি দেই। সতীর্থের কথা আমার বিস্ময়ে ব্যতয় ঘটাতে পারে না। মনোযোগ পুরোটাই সার্নে।

আদি ওয়েবসাইট সার্ভারটির সংরক্ষিত সংস্করণ দেখতে পাওয়া ছিল মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা। ১৯৮৯ সালে ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ-এর জনক টিম বার্নারস লি ছিলেন সার্নে। লি’র নেক্সট কমপিউটার ছিল সেই সার্ভার, যা ২০০৩ সালে রিস্টোরিং দ্য ফার্স্ট ওয়েবসাইট প্রজেক্টের আওতায়  সার্নে সংরক্ষিত হয়েছিল। আগ্রহীরা এই প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে পারবেন http://first-website.web.cern.ch ওয়েবসাইট থেকে।

একটি প্রোটন শেল কাঁচের আবর্তে সংরক্ষিত দেখা গেল। সাধারণভাবে বলতে গেলে প্রোটোন হচ্ছে বোতল ভর্তি হাইড্রোজেন গ্যাস। একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে হাইড্রোজেন এটমের ইলেকট্রন থেকে প্রোটোন উদগিরণ করানো হয়। উৎপন্ন প্রোটোনের স্থানান্তর ঘটানো হয় এলএইচসির দুটো পাইপে। একটি পাইপ ঘড়ির কাঁটার আবর্তে ঘুরতে থাকে, অন্যটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। এরকম একেকটি বৃত্তাকার এলএইচসি রিং প্রোটোনে ভরতে সময় লাগে ৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড।

ছবি- আইরিন সুলতানা

মেঝের গোলাকার চাকতিটি কেবল ডিসপ্লে স্ক্রিন নয়, আমরা আবিষ্কার করলাম সেটা টাচ স্ক্রিনের মত কাজ করে। ওতে দেখা যায় এলএইচসি তথা লার্জ হেড্রন কোলাইডার গবেষণাগারের পুরো নকশা যা ফ্লান্স-সুইজারল্যান্ড জুড়ে বৃত্তাকারে বিস্তৃত। আলোআঁধারিতে ঘুরে আমরা আরো দেখলাম এলএইচসিতে ব্যবহৃত চুম্বকের প্রস্থচ্ছেদ।

গাইড সবাইকে ছবি তুলতে আর ধাতস্থ হতে আরো মিনিট পাঁচেক সময় দিলেন। তারপর দলসহ বাইরে এসে প্রশস্ত একটি মাইক্রোবাসে একে একে উঠে বসলাম আমরা।

মাইক্রোবাসে চলছে ডেটা সেন্টারের দিকে। এই এলাকার নিরাপত্তা চেকপোস্ট দৃশ্যামান। এলাকার ভেতরে বিভিন্ন লেনের নাম কিংবদন্তিদের স্মরণে। আইনস্টাইনের নামেও লেন চোখে পড়ল।

পাঁচ-সাত মিনিটে পৌঁছে গেলাম ডেটা সেন্টারের সামনে। ডেটা সেন্টারের মতো স্পর্শকাতর অংশ ওরা সত্যি সত্যি দেখিয়ে দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহটা পেন্ডুলামের মতো মনের মধ্যে দুলছে। তারপরও বিপুল আগ্রহে অনুসরণ করে চলেছি আমরা গাইডকে।

লিফটে করে উপরের একটি তলায় এলাম আমরা সবাই। ভেতরে সারি করে বসার জায়গা। আর আমাদের সামনে দেয়ালজুড়ে বিশাল ডিসপ্লে স্ক্রিন। ডিসপ্লে স্ক্রিনটিও টাচ স্ক্রিনের মতো। গাইড একটি দুর্দান্ত উপস্থাপনায় জানালো প্রযুক্তিগতভাবে ডেটা সেন্টারের আদি থেকে আধুনিক হয়ে ওঠা।

উপস্থাপনা শেষ হতে গাইড সকলকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে আসতে বললেন। আমরা তো মন্ত্রমুগ্ধই ছিলাম, দু’পা এগুলাম সেই মতো। গাইড বললেন আরও কাছে এগিয়ে আসতে। আরও দু’পা এগুনো হলো সবার। আরো একটু এগুতে বলতে এবার ডিজিটাল ডিসপ্লে আমাদের নাকের সামনে। গাইড বললো এবার ডেটা সেন্টার উন্মোচিত হবে সবার সামনে। বলা মাত্রই সামনে সুবিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনটি এমনভাবে দুম করে গায়েব হয়ে গিয়ে একটা স্বচ্ছ আর সাধারণ কাঁচ হয়ে উঠলো যে আমি হকচকিয়ে গেলাম!

এরচেয়েও বিস্ময় হলো কাঁচের প্রশস্ত জানালা দিয়ে  তাকিয়ে সত্যি সত্যি দেখা যাচ্ছে সার্ন ডাটা সেন্টার। সার্নের সকল গবেষণা, ব্যবস্থাপনা এবং সেবার তথ্যবলি সংরক্ষিত হয় এখানে। গাইড অকপটে ডাটা সেন্টারের কুলিং সিসটেম জটিলতা ও ব্যবস্থাপনার কথাও সবাইকে জানালো।

এলএইচসির কণাগুলো প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ মিলিয়ন বার সংঘর্ষিত হয়। এমন একটি যজ্ঞে একটি ডিটেকটরের মাধ্যমে ধারাবাহিক বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সরবরাহ করে প্রতি কণার তথ্য রাখা হয়। অতপর এই উপাত্ত পাঠানো হয় ডেটা সেন্টারে এর ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য।

এইখানে নিজেকে আটকে রাখা কঠিন, তাই প্রশ্ন করলাম, এ ডেটা সেন্টারে কোনো আনপ্ল্যানড ডাউনটাইম ইনসিডেন্ট ঘটেছে কি? গাইড জানালো পাওয়ার সিসটেম নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল যদিও, তবে তাতে কোনো সার্ভার এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ হয়নি।  আবারও জানতে চাইলাম, এর ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট কোথায়? জানলাম বুদাপেস্টের ডেটা সেন্টারটি সার্ন থেকে একইভাবে পরিচালিত হয়।

আমরা যে কক্ষে ছিলাম, সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল সার্নে ব্যবহৃত সংরক্ষিত প্রযুক্তির অংশ বিশেষ। টেবিলে রাখা ছিল ওরাকল টেপ ড্রাইভ। ১৯৬০-১৯৮০ সালে ব্যবহৃত ১৪ এমবি ট্র্যাক টেপ। ছিল আইবিএম ৩৩৯০ মডেলের ৩৪ জিবি হার্ডডিস্ক।

আজকের সার্ন অবশ্য ৪৫ পেটাবাইট স্টোরেজে কাজ করে। আর ডেটা সেন্টারে প্রসেস হয় প্রতিদিন ১ পেটাবাইট ডাটা। সার্নের ডাটাবেইজে ১ সেকেন্ড ৬০০০ হালনাগাদ সম্পন্ন হয়। টেকি ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই জানেন যে, এক পেটাবাইট অর্থ ১,০০০,০০০ গিগাবাইট অর্থ্যাৎ ১০০০ টেরাবাইট। 

আমাদের সার্ন অভিজ্ঞতার ঝুলি তখন অনেক পরিপূর্ণ কিন্তু  আন্ডারগ্রাউন্ড গবেষণাগার দেখার অতৃপ্তিও এড়ানো যাচ্ছিল না। সেই পূর্ণতা আর অপূর্ণতার দুর্দান্ত মিশ্রণে আমাদের গাইডেড ট্যুর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো। আমাদের পুরো দলটিকে অবশ্য পুনরায় মাইক্রোবাসে করে ঠিক সার্ন গ্লোবের সীমানায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিল।