অনলাইনে হয়রানিতে পরিচিতরাই বেশি: জরিপ

বিশ্বব্যাপী মানুষের ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পৃক্ততা ও অনলাইন ঝুঁকির আশঙ্কা কমার কথা থাকলেও দেখা গেছে অনলাইনে হয়রানি ঘটে পরিবার ও আশপাশের মানুষদের কাছ থেকেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2018, 12:22 PM
Updated : 15 Feb 2018, 02:32 PM

আন্তর্জাতিক নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালিত এক জরিপে উল্লিখিত বিষয়টিসহ বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। ‘সিভিলিটি, সেফটি অ্যান্ড ইন্টার‌্যাকশনস অনলাইন-২০১৭’ শীর্ষক ওই ডিজিটাল জরিপ পরিচালনা করেছে সফটওয়্রার জায়ান্ট মাইক্রোসফট।

কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্করা অনলাইনে কী ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হন এবং অনলাইনে তাদের সম্পৃক্ততা ব্যক্তিগত জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে জানার উদ্দেশ্যে এ জরিপটি করা হয়। অনলাইনে হয়রানি নিয়ে অনেক আশ্চর্যজনক তথ্য উঠে এসেছে জরিপের প্রতিবেদনে।

২০১৬ সালের জরিপকৃত ১৬টি দেশসহ এবার ২৩টি দেশে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে কিশোর (১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের (১৮ থেকে ৭৪ বছর বয়সী) অনলাইনে নাগরিকত্বের অবস্থা নিয়ে `ধারণা ও উপলব্ধি’র কথা জানতে চাওয়া হয়। উত্তরদাতাদের জীবনের মোট ২০টি পৃথক অনলাইন ঝুঁকি নিয়ে জানার চেষ্টা করে মাইক্রোসফট। আগের বছরের চেয়ে এ বছর চারটি বিভাগে তিনটি বিষয় বেশি ছিল। বিভাগগুলো হচ্ছে- আচরণগত, মনস্তত্বগত, যৌনাচরণগত ও ব্যক্তিগত।

সাম্প্রতিক এ জরিপ অনুযায়ী, তিনজনের মধ্যে প্রায় দুজন (৬১ শতাংশ) উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাদের অনলাইনে হয়রানিকারীর ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। এক তৃতীয়াংশের বেশি (৩৬ শতাংশ) জানিয়েছেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে হয়রানিকারীকে চেনেন। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, হয়রানিকারীরা তাদের বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্য।

পাঁচজনের মধ্যে একজন (১৯ শতাংশ) উত্তরদাতা জানিয়েছেন, হয়রানিকারী তাদের পূর্ব পরিচিত ছিল। জরিপকৃত এক চতুর্থাংশ জানিয়েছেন, হয়রানিকারীকে তারা অনলাইনের মাধ্যমেই চিনতেন। ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন, অনলাইনে তাদের ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে আগন্তুকের কাছ থেকে এসেছে। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা বেশিরভাগ অনলাইন হয়রানির ক্ষেত্রে দায়ী বলে জানিয়েছেন হয়রানির শিকার (৪১ শতাংশ) উত্তরদাতারা।

এছাড়াও, জরিপের প্রতিবেদনে যেসব বিষয়ে উঠে এসেছে:

-- গত বছরের মতোই, অর্ধেকের বেশি (৫৩ শতাংশ) মানুষ জানিয়েছেন, ব্যক্তিজীবনে হয়রানিকারীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছে। জরিপকৃত এ অংশে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছেন, অনলাইনে হয়রানি ঘটার আগে থেকেই তারা হয়রানিকারীকে চিনতেন।

-- দশ জনের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, তারা হয়রানিকারীকে সরাসরি প্রত্যুত্তর করেছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ কম যেখানে প্রত্যুত্তর দেওয়ার সংখ্যা পূর্বের ১৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

-- এর বাইরে ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, ৬৬ শতাংশ সম্পূর্ণরূপে অথবা কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করেছেন। বিপরীতে, যাদের হয়রানির বোধ হয়েছে (১২ শতাংশ) তারা অনলাইন ঝুঁকির ক্ষেত্রেই বেশি অনিরাপদ বোধ করেছেন।

-- মাইক্রোসফট ডিজিটাল সিভিলিটি চ্যালেঞ্জে অনলাইন ঝুঁকির ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলোর কথা বলা হয়, জরিপে এমন তিনটি পদক্ষেপ উঠে এসেছে। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- ‘অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, ‘প্রত্যুত্তর দেওয়ার আগে চিন্তা করা’ এবং ‘অনলাইন সুরক্ষায় অন্যের পাশে দাঁড়ানো’। এ তিনটি পদক্ষেপ অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধে ডিজিটাল সিভিলিটি চ্যালেঞ্জে যে দশটি প্রধান প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে সেখানে উঠে এসেছে।

ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় বছরের মতো, অপ্রত্যাশিত কন্টাক্টস অনলাইন ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন অনলাইনে তাদের সঙ্গে এমন কিছু মানুষ যোগাযোগ করেছেন যা তারা চাননি। এটা গত বছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশের চেয়ে দুই শতাংশ কম। এরপর অনলাইনে সবচেয়ে ঝুঁকি হচ্ছে ঠগ, প্রতারণা ও জালিয়াতি। সামগ্রিকভাবে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা জরিপে এটা জানিয়েছেন। এ বছরই প্রথম এ ঝুঁকি জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জরিপে ডিজিটাল সভ্যতার ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সহানুভূতি ও উদারতার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করা এবং অনলাইনে সবাইকে মর্যাদা ও সম্মান দেয়া। পার্থক্যের ক্ষেত্রে, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও আমাদের সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ এবং আলাদা সব বিষয়কেই সম্মান জানানো উচিৎ এমনকি মতবিরোধ থাকলেও।

যোগাযোগ কিংবা সম্পৃক্ততার পূর্বে ভেবে নেওয়া উচিৎ এবং গালিগালাজ ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এ ছাড়াও, আমাদের উচিৎ কোনো বিষয় বা মতানৈক্যের ক্ষেত্রে প্রত্যুত্তরের পূর্বে ভালোভাবে ভেবে নেওয়া এবং অনলাইনে এমন কিছু পোস্ট করা কিংবা পাঠানো থেকে বিরত থাকা যা কোনো ব্যক্তিকে আঘাত করতে পারে, তার সম্মানহানি ঘটাতে পারে কিংবা কেউ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি বোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হয়রানির বিরুদ্ধে নিজেদের এবং অন্যদের জন্য রুখে দাঁড়ানো এবং সবাইকে সহায়তা করা অনলাইনে হয়রানির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। পাশাপাশি হয়রানির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট করা এবং অনিরাপদ আচরণের প্রমাণ রেখে দেওয়া।