স্যামসাং ‘রাজপুত্র’ খালাস

স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকার লি জি ইয়ং-কে মুক্তির রায় দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এক আপিল আদালত। সোমবার আদালত ইয়ংয়ের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে দেয়। এর ফলে এক বছর সাজা খাটার পর খালাস পেলেন তিনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2018, 08:30 AM
Updated : 5 Feb 2018, 08:32 AM

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল-এর উচ্চ আদালত লি-কে আগের রায়ের সাজা অর্ধেক করে দিয়ে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে থাকা ঘুষ আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে। নতুন এই রায়ের ফলে ইয়ং-কে এখন আর কারাগারে থাকতে হচ্ছে না, তবে তিনি চার বছর নজরদারিতে থাকবেন। এর মানে হচ্ছে এই চার বছর তাকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হবে, যদি তিনি এর মধ্যে কোনো শর্ত লঙ্ঘন করেন তবেই ওই সাজা কার্যকর হবে। 

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী ছিলেন বিশ্বের অন্যতম বড় করপোরেট সাম্রাজ্যের এই ৪৯ বছর বয়সী উত্তরাধিকার, বলা হয়েছে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে। 

স্যামসাংয়ের কর্ণধার লি কুন হি ২০১৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কার্যত অবসরে যাওয়ার পর থেকে তার ছেলে লিই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই কোম্পানির দেখভাল করে আসছিলেন। তার চেয়ারম্যান হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল স্যামসাং গ্রুপ।

ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার আর বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণচেষ্টার অভিযোগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আটক করা হয় ইয়ং-কে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী চোই সুন সিল পরিচালিত কয়েকটি ফাউন্ডেশনে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ওই বছর মার্চে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা হয় পার্ক জিউন হাই-কে। 

সে বছর অগাস্টে নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়, লি কখনোই সরাসরি পার্ক-এর সহায়তা চাননি। কিন্তু ২০১৫ সালে স্যামসাংয়ের দুইটি শাখা একত্রিত হওয়ায় স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস-এ লি-এর নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানে নিজের ক্ষমতা আরও মজবুত করতেই প্রেসিডেন্ট-এর সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি।

অক্টোবরে এই মামলার আপিল কার্যক্রম শুরু হয়। মামলার শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন ৪৯ বছর বয়সী লি। আপিলেও তা অস্বীকার করেন তিনি। আপিলে লি’র পক্ষে মজবুত যুক্তি তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। 

আপিল আদালতের রায়ে বলা হয়, স্যামসাং-কে পার্ক-এর বান্ধবী চোই সুন-লি আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে চোই-এর মেয়ের ক্যারিয়ারে উন্নতির উদ্দেশ্যে ৭২০ কোটি ওন বা ৬৪ লাখ ডলার ঘুষও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের আর্থিক সমর্থনের জন্য লি-এর সম্পৃক্ততাকে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহারে নিষ্ক্রিয় সম্মতি প্রদান’ হিসেবে সোমবার আখ্যা দিয়েছেন বিচারক চেওং হিউং-সিক। 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আর স্যামসাং তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। রায় ঘোষণার সময় লি-এর চেহারা বিবর্ণ দেখা গেলেও তিনি কোনো আবেগ প্রকাশ করেননি- বলা হয়েছে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে। 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা লি-এর ১৪ বছরের কারাদণ্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালতের রায় নিজেদের পক্ষে না যাওয়ায় তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা।

আরও খবর-