‘ডিভাইস স্বল্পতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এআর-ভিআরের কাজ’

অগমেন্টেড রিয়ালিটি-এআর ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি-ভিআর প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডিভাইস আর্থিক সঙ্কটের কারণে এখনো সহজলভ্য না হওয়ায় বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এ খাতের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিদরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2017, 02:42 PM
Updated : 9 Dec 2017, 02:42 PM

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উৎসব ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর সমাপনী দিন শনিবার বিকালে ‘এআর-ভিআর: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের এক সেমিনারে উঠে আসে গেইমিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপসে এআর-ভিআর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার নানা দিক।

বাস্তবের মতো কৃত্রিমভাবে ত্রিমাত্রিক পরিবেশ তৈরির প্রক্রিয়া হল ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। আর অগমেন্টেড রিয়ালিটির মাধ্যমে সরাসরি বাস্তবের কোনো বস্তু বা দৃশ্যকে ধারণ করে তার সঙ্গে শব্দ বা গ্রাফিক্স জুড়ে দেওয়া যায়।

এআর-ভিআরের এসব কাজে ‘মেটা-২’ ও ‘হলো লেন্সের’ মতো কিছু প্রযুক্তিপণ্যের প্রয়োজন হয়, যেসবের দাম তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে স্ট্রার্টআপ শুরু করা অনেকের সাধ্যের বাইরে।

ফেইসবুক, গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফটসহ টেক জায়ান্টরা যখন এআর-ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের নানা সেবা দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে এআর-ভিআর নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কেউ ইতিহাসভিত্তিক অ্যাপস বানাচ্ছে, কেউ বা বানাচ্ছে গেইমিং অ্যাপস।

সেমিনারের সঞ্চালক ‘রাইজ আপ ল্যাবসের’ সিইও এরশাদুল হক বলেন, “আগামী বছরের মধ্যে ২০০ বিলিয়নেরও বেশি মুদ্রা যখন এআর ও ভিআর প্রকল্পগুলো থেকে আয় করা সম্ভব, তখন শুধুমাত্র ডিভাইসের স্বল্পতায় আমাদের তরুণরা দারুণ সম্ভাবনাময় এ খাতে কাজ করতে পারছে না।”

“আর্থিক কারণে তরুণদের অনেকে এই ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে পারছেন না। তাই বলে কিন্তু বসে নেই ওরা, দেশে তরুণরা কিন্তু এআর ও ভিআর নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করে দিয়েছে।”

পরে সেমিনারের প্রশ্নোত্তর পর্বে অগমেন্টেড রিয়ালিটিতে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানানোর অ্যাপ তৈরি করা এরশাদুল এক তরুণের প্রশ্নর জবাবে বলেন, “ইনগেজ ও অকোলাসের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছে, তখন দেশে রয়ে গেছে আর্থিক সঙ্কট।

“সহসা এই আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারলেও কিন্তু বসে থাকা যাবে না। ছোট ছোট অ্যাপসের মাধ্যমেই হোক না শুরু।  ডিভাইস আজকে আসছে না, একদিন আসবে। একদিন আমাদের সামর্থ্য হবে।”

গুগলের ট্রান্সলেট অ্যাপস, গগলস, স্কাই ম্যাপ, পোকেমন গেম, অ্যাপল-১০ মোবাইলগুলোতে এআর প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা তুলে ধরেন ব্যাটারি ল ইন্টারঅ্যাকটিভের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিনহাজ উজ সালেকীন ফাহমি।

উইন্ডোজ ফোনের পরে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের মোবাইল ফোনের চ্যাটিং, ক্যামেরা অ্যাপস নিয়ে কাজ করার সুযোগের কথাও তরুণদের জানান তিনি।

স্লাইড প্রেজেন্টেশনের ফাঁকে ড্রিমার্জ ল্যাবের সিইও তানভির হোসেন খান ভিআর প্রযুক্তি নিয়ে বলেন, “ভিআর প্রযুক্তি নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারি, ডিফেন্স ও মেডিকেল সায়েন্স ইস্যুতে। বাস্তবে প্রশিক্ষণের সময় কিন্তু অনেক বেশি সময়, অর্থ ব্যয় হয়, থাকে জীবনের ঝুঁকি।

“ভিআর প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের নানা দিকগুলো তাদের ডিভাইসে নিয়ে আসতে পারে। তখন খরচ আরো অনেক কমে যাবে। একইসঙ্গে শিল্পখাতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।”

ফাহমি জানান, প্রযুক্তিবিদরা ২০২১ সালের মধ্যে এআর খাতে ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছেন। চার বছর পর এই প্রযুক্তি থেকে গোটা বিশ্ব বছরে ৪৪ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।

ইন্টারঅ্যাকটিভ আর্টিফ্যাক্টের সিইও নুসরাত জাহান জানান, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে। এআর ও ভিআর প্রযুক্তি মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে, উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা।

তিনি বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীরা তখন আর ল্যাবের এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পাবে না। ওরা এআর ও ভিআর- এ এসে নিজেদের ইচ্ছামতো এক্সপেরিমেন্ট করতে পারবে। তাতে কোনো ঝুঁকিরও আশঙ্কা থাকছে না।”

আইসিটি ডিভিশন এআর-ভিআর খাতে একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে বলে আলোচনার শেষ দিকে বক্তব্যে দিতে এসে জানান আইসিটি বিভাগের ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনের’ প্রকল্প পরিচালক কে এম আব্দুল ওয়াদুদ।