ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড: সাইবার নিরাপত্তায় অবকাঠামো উন্নয়নে জোর

সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কড়াকড়ি আইন প্রণয়নের চেয়ে ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2017, 11:12 AM
Updated : 8 Dec 2017, 11:12 AM

সাইবার নিরাপত্তা প্রণীত খসড়া নীতিমালাটিও দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

তথ্যপ্রযুক্তি আসর ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ এর তৃতীয় দিনের সকালে ‘সাইবার সিকিউরিটি ফর পাবলিক সার্ভিস’ শিরোনামে এই সেমিনারে তরুণ হ্যাকারদের খুঁজে এনে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে কাজে লাগাতেও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এটুআই প্রকল্পের আইটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আরফি এলাহীর সঞ্চালনায় শুক্রবারের সকালের এই সেমিনারে অংশ নেন বাংলাদেশের ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায়, বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল হারুন অর রশিদ, সিটিও ফোরামের প্রেসিডেন্ট তপন কান্তি সরকার, সিলন কমার্শিয়াল ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান ইজাজুল হক। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের হুজটন কোম্পানির সিনিয়র আইটি এক্সিকিউটিভ আজাদুল হক।

তিনি বলেন, “হ্যাকাররা প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষায় থাকে কখন গোটা একটা দেশের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। যত আইন করুন না কেন, কড়াকড়ি প্রয়োগ করুন- কোনো কাজ হবে না। হ্যাকাররা অতটা বোকা নয়, ওরাও যথেষ্ট মেধা নিয়ে কাজ করে।

“তাদের ঠেকাতে হলে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তার অবকাঠামোগুলো আরো বেশি উন্নত করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তার আইনি কাঠামোতেও আনতে হবে পরিবর্তন।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও টেক জায়ান্টগুলো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যান ‘ফায়ার আই সাইবার থ্রেট ম্যাপ’ এর মাধ্যমে সেমিনারে তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই বাঙালি প্রকৌশলী।

আজাদুল জানান, হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু দুই বিলিয়ন খরচ করেছে, অন্যদিকে উবার তাদের সাইট হ্যাক হওয়া ঠেকাতে ব্যয় করেছে এক লাখ ডলার।

“আমরা সাধারণত যে ফিশিং, ম্যালওয়ারগুলো দেখতে পাই, তা মাত্র ৩ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ হল ডার্কওয়েভ। এই ডার্কওয়েভ নিয়েই হ্যাকারদের যত কাজ। ইন্টারনাল আর এক্সটারনাল হ্যাকারদের মধ্যে আমি বলব, ইন্টারনাল হ্যাকাররাই ভয়ঙ্কর। তারাই ডার্কওয়েভের সুযোগটা বেশি করে নেয়,” বলেন তিনি।

‘সোফিটিকেটেড’ হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যারের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহকদের তাদের কম্পিউটার সিস্টেম নিয়মিত ‘ক্লিন’ করার পরামর্শ দেন আজাদুল।

তিনি বলেন, “বাজারে নানা ধরনের অ্যান্টিভাইরাস কিনতে পাওয়া যায়, যেগুলো আমাদের টাকা দিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু ভাইরাস, ম্যালওয়ার মোকাবেলায় আমাদের এখন নিজস্ব সিস্টেম থাকা উচিৎ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সেই সিস্টেমটি যেন বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে, তা নিয়ে ভাবা উচিৎ।

“প্যাচওয়ার্ক কখনো সঠিক সমাধান নয়। আমি বলব, প্রতিনিয়ত পেনিট্রেশন টেস্ট করা উচিৎ, মাল্টিলেয়ার সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম থাকা উচিৎ। তবেই আমরা সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারি।”

কেন্দ্রীয়ভাবে ‘সাইবার অ্যালার্ট সিস্টেম’ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে এই কম্পিউটার প্রকৌশলী বলেন, “এই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান, সরকার ও রেগুলেটরি কমিশনগুলোকেও এই সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে, যেন কোনো সাইবার অ্যাটাকের হুমকি পেলেই তৎক্ষণাৎ একটি অ্যাকশন নেওয়া যায়।”

সাইবার এক্সপার্টদের একটি গ্রুপ তৈরি করে সিস্টেম মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার ‘সাইবার হাইজিন’ চর্চার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল গুহ বলেন, ৮০ শতাংশ হ্যাকিং হয় গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে। এই গ্রাহকদের অনেকেই অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করলেও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না।  

ভুলের মাশুল হিসেবে তারা আইনি জটিলতার মুখেও পড়তে পারেন বলে সতর্ক করে দেন তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী তপন কান্তি সরকার হ্যাকারদের প্রতি কঠোর না হয়ে তাদের মেধাকে সঠিকপথে কাজে লাগাতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তাদের মাধ্যমে সরকার বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারবে।

বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল হারুন অর রশিদ জানান, বিশ্ব জুড়ে ট্রান্স-নেশন সাইবার ক্রাইম মোকাবেলায় আইনি কার্যক্রম নিতে গেলে নানা দেশের আইনি জটিলতার মুখে পুলিশ অনেক সময়ই সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আইনের ফাঁকফোকড় গলে পার পেয়ে যায় হ্যাকার।

বাস্তবায়নের পথে থাকা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের সঙ্গে জড়িত এই পুলিশ কর্মকর্তা পরে জানান, আইনটি বাস্তবায়ন হলে দেশের সাইবার ক্রাইম মোকাবেলায় আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে পুলিশ।