হ্যাকাররা কেন জেলে- প্রশ্ন তরুণদের

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের একটি পর্বে হ্যাকিংয়ের আদ্যোপান্ত জেনে বাংলাদেশে হ্যাকারদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খড়গের বিরুদ্ধে শোর তুলেছেন একদল তরুণ।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 11:40 AM
Updated : 7 Dec 2017, 11:40 AM

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের বৃহত্তম উৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকালে ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইথিকাল হ্যাকিং’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।

এতে ভারতের প্রিস্টন ইনফো সলিউশনের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা রিজওয়ান শেখ মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন।

তিনি শুরুতেই বলেন, ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে জানতে হবে হ্যাকিং বিষয়টা কী? আমরা হ্যাকিং-হ্যাকিং বলে চিৎকার করি ঠিক, কিন্তু কজন সঠিকভাবে জানি ব্যাপারটা?”

নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য তরুণদের হ্যাকিংয়ে সম্পৃক্ত করার উপর মত দেন তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল থেকে রিজওয়ান জানান, প্রতি ৭৫ জন হ্যাকারদের মধ্যে মাত্র ১ জন ‘ইথিকাল ওয়েতে’ হ্যাকিং করে।

“এই যদি হয় হ্যাকারদের অবস্থা, তাহলে সামনে কিন্তু ভয়াবহ দিন। তরুণদের বলব, তোমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতেই হ্যাকিংটা শেখ। এতে নিজেদের জন্য কাজ করা হবে, দেশের সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করো না তোমরা।”

সাইবার নিরাপত্তায় আইনগুলো সঠিকভাবে জানা-বোঝারও গুরুত্ব দেন তিনি।

পরে তিনি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে দেখান, বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কতটা সহজে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো হ্যাক করা যায়। পাসওয়ার্ড চুরি করার নানা প্রক্রিয়া তিনি যখন দেখাচ্ছিলেন তরুণদের, তখন  একের পর এক প্রশ্ন আসতে থাকে দর্শক সারি থেকে।

হ্যাকিং টুলস, সফটওয়্যারের কথা বলতে গিয়ে ভারতের এই তরুণ প্রযুক্তিবিদ তরুণদের বলেন, “নিজেদের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে হবে।  কমপক্ষে ১৬ ডিজিটের আলফা-নিউমেরিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে, আর তা প্রতি মাসে একবার করে পরিবর্তন করতে হবে।”

তার মূল প্রবন্ধ শেষ হতেই উপস্থিত তরুণরা শোর তোলেন- “হ্যাকিং নিয়ে তরুণরা কাজ করবে কী করে? কেউ হ্যাকিং করা শুরু করেছে শুনলেই সরকার তাদের জেলে ঢোকায়।”

ইওয়াই ল্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারজানা রহমানের সঞ্চালনায় এই পর্বে আলোচনায় যোগ দেন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ের শিক্ষক কে এম সালাউদ্দিন, ঢাকা ব্যাংকের সিইও এ এম এম মঈনুদ্দিন, ম্যাশ টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল সোহানি।

শিক্ষক সালাউদ্দিন তরুণদের কথায় সায় দিয়ে বলেন, “তরুণরা যখন হ্যাকিং নিয়ে কাজ করা শুরু করছে, তখন সরকারকে এই তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে হবে। সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্কসহ তথ্যপ্রযুক্তির নানা প্রকল্পে কিন্তু সরকার এই তরুণদের নিয়োগ দিতে পারে। একইসঙ্গে অনার্স, মাস্টার্স পর্যায়ে হ্যাকিং শেখাতে হবে তরুণদের।

“তরুণদের উচিৎ,  ইথিকাল ওয়েতে হ্যাকিং করা। অন্যের ক্ষতি নয়, দেশের কল্যাণেই তাদের মনোনিবেশ করা উচিৎ।”

সাইবার ক্রাইম ইউনিট কীভাবে আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে হ্যাকারদের শনাক্ত করে, কীভাবে তাদের শাস্তি দেয়, শাস্তির বিধানগুলো কী, এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা ওঠে।

আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরিতে সুইফট অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার ঘটনা নিয়েও।

ঢাকা ব্যাংকের সিইও মঈনুদ্দীন বলেন, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলেও ‘টাইম শিডিউলিং’ ইস্যুতে তারা সমস্যায় পড়ছেন।

“এখন যদি আরও বেশি সিকিউরড করতে যাই, তবে টাইম শিডিউল আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে আমাদের ব্যাংকিং সেবা নিতে চাইবে না। দুটি বিষয় মাথায় রেখে, আমরা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাচ্ছি। “আমরা মনে করি, বাইরের হ্যাকাররা যত না করছে, ভেতরের হ্যাকাররা কিন্তু করছে। ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের অনেকে এই হ্যাকিং ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।”