১৩ বছরের কমবয়সী হয়েও ফেইসবুক ব্যবহার করছেন এমন ব্যবহারকারীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, সংখ্যায় দুই কোটিরও বেশি হবে।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার কমবয়সীদের জন্য লক্ষ্য করেই নতুন এক অ্যাপ এনেছে ফেইসবুক। শিশুদের জন্য আনা এই অ্যাপের ফিড বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করা হবে না বলে ফেইসবুকের পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করা হয়েছে। তবে, এই অ্যাপ ব্যবহারের আগেও শিশুদেরকে মা-বাবার অনুমোদন নেওয়ার দরকার হবে।
মেসেঞ্জার কিডস নামের অ্যাপটি মূলত ফেইসবুক মালিকানাধীন মেসেজিং অ্যাপ মেসেঞ্জার-এর একটি সহজ ও বদ্ধ সংস্করণ, এমনটাই বলা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
মেসেঞ্জার কিডস-এর পণ্য ব্যবস্থাপক লরেন চেং বলেন, “শিশুদেরকে ট্যাবলেট আর স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেওয়া ম-বাবার সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু শিশুরা এগুলো কীভাবে ব্যবহার করছে আর কোন অ্যাপগুলো তাদের জন্য উপযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন আর উদ্বেগ প্রায়ই দেখা যায়।”
কীভাবে ব্যবহৃত হবে শিশুদের এই মেসেঞ্জার?
প্রচলিত মেসেঞ্জার অ্যাপে কেউ অন্য কাউকে বন্ধুত্বের অনুরোধ জানালে অন্য জন্য সে অনুরোধ গ্রহণ করলেই হয়ে যায়। কিন্তু শিশুদের এই মেসেঞ্জারে দরকার হবে দুই শিশুরই মা-বাবার অনুমতি। একবার তা নিরাপদ হিসেবে বললে বা মা-বাবার অনুমোদন পাওয়ার পর, বন্ধু হওয়া দুই শিশু তাদের মধ্যে সরাসরি ভিডিও চ্যাট আর বার্তা ও ছবি আদান-প্রদান করতে পারবে। শিশুদের জন্য থাকবে আলাদা লাইব্রেরিও যেখানে “শিশুদের জন্য উপযুক্ত জিফ, ফ্রেইম, স্টিকার, মাস্ক আর ছবি আঁকার টুল পাওয়া যাবে, যা দিয়ে তারা নিজেদের কনটেন্ট সাজাতে পারবে ও তাদের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হবে।”
এই অ্যাপ দিয়ে শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন বড়রাও, তবে এক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। যদিও এই যোগাযোগে বড়রা তাদের বার্তা তাদের মেসেঞ্জারেই পাবেন।
সবই হলো, কিন্তু শিশুর প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা?
মেসেঞ্জারের মতো মেসেঞ্জার কিডস-এও ডেটা সংগ্রহ করা হবে। এই ডেটার মধ্যে থাকছে শিশুর নাম, মেসেজে আদান-প্রদান করা কনটেন্ট আর অ্যাপটি কীভাবে কতোটা ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে করা প্রচলিত প্রতিবেদন।
এই ডেটা মূল ফেইসবুকের সুবিধার জন্য কখনও ব্যবহৃত হবে না বলেও অঙ্গীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই অ্যাপ থেকে ফেইসবুকের ব্যবসায়িক লাভ তাহলে কীভাবে আসবে? হয়তো ফেইসবুক শিশুরা কী বিষয়ে কথা বলছে তা নিয়ে জেনে মা-বাবাদের বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেবে। আবার হয়তো মেসেঞ্জার কিডস থেকে যে শিশু কিছুদিন পর মূল ফেইসবুকের আসতে যাচ্ছে তার আলোচনার বিষয় আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখছে যাতে পরে তাকে ওই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখাও যায়। কিন্তু না, এর কোনোটাই হবে না বলে দাবি করেছে সোশাল জায়ান্টটি।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এই অ্যাপ ব্যবহারকারী শিশুরা কোন বয়সে সাই আপ করছে কখনোই তা জানতে পারবে না। তাই কোনো ব্যবহারকারীর বয়স ১৩ বছর হওয়ার পর তাকে মূল ফেইসবুকে আসতে বলারও সুযোগ থাকবে না। কোনো শিশু বয়স হওয়ার পর মূল ফেইসবুকে আসতে চাইলে, তাকে পুরোপুরি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এর সঙ্গে মেসেঞ্জার কিডস-থেকে কোনো ডেটা শেয়ার করা হবে না।
বিবিসির ভাষ্যমতে, এক্ষেত্রে ফেইসবুকের কৌশলত লক্ষ্য হচ্ছে- কমবয়সীদের মনযোগ আকর্ষণ করা যার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও সামাজিক মাধ্যম হিসেবে একে পছন্দের তালিকায় তালিকায় রাখা যাবে। ফেইসবুক যদি ছয় থেকে ১২ বছর বয়সীদের মনযোগটা স্ন্যাপচ্যাট বা অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের আগেই কেড়ে নিতে পারে, তাহলেও ওই একই শিশুরা ১৩ বছর হওয়ার পর মূল ফেইসবুকে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
উচিৎ নাকি উচিৎ নয়?
কমবয়সীদের নিয়ে ফেইসবুকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নানা সময় নানা আলোচন হয়েছে। এমনকি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শন পার্কারও।
কিন্তু শিশুদের জন্য ফেইসবুকের এই পদক্ষেপ নেওয়ার প্রসঙ্গে সমর্থন যুগিয়েছে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা কমন সেন্স মিডিয়া। ‘শিশুদের জীবনধারা ও পরিবার উন্নয়নে’ কাজ করা এই সংস্থার প্রধান জেমস স্টেয়ার বলেন, “১৩ বছরের কমবয়সী শিশুদের জন্য মেসেঞ্জার অ্যাপ যা শুধু মা-বাবারা সাইন আপ করে দিতে পারবে, শুনে দারুণ একটি ধারণার মতো লাগছে।”
“কিন্তু ডেটা সংগ্রহ নিয়ে স্পষ্ট নীতিমালা ছাড়া, শিশুদের পোস্টের কনটেন্টের কী হচ্ছে আর এ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী তা জানা ছাড়া এই প্লাটফর্মকে পুরো বিশ্বাস করা অসম্ভব।”
শুরুতে শুধু অ্যাপলের আইওএস প্লাটফর্মেই অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে।
আরও খবর-