শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই হামলায় অন্তত আটজন নিহত ও ১২ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে আইএএনএস-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার হ্যালোইন উদযাপনকালে বিকালে ওই ঘটনার পর ২৯ বছর বয়সী ট্রাকচালক পুলিশের গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, অভিবাসী ওই যুবকের নাম সাইফুল্লো সাইপভ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ২০১০ সালে। নিউ ইয়র্কের পুলিশ এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই দেখছে।
এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিবিএস টেলিভিশন জানিয়েছে, সাদা রঙের ওই ট্রাকে একটি নোট পেয়েছে পুলিশ; যেখানে আইএস এর কথা বলা হয়েছে।
আহতদের অবস্থা ‘গুরুতর হলেও জীবন সংশয়ী নয়’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেমস ও’নিল জানান, স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার পরপরই ট্রাকটি সাইকেলের লেইনে উঠে পড়ে। পথচারী ও সাইক্লিস্টদের আঘাত করার পর এটি একটি স্কুল বাসে ধাক্কা দেয় এবং ভেতরে থাকা দুই শিশুসহ অন্তত চারজনকে আহত করে।
ট্রাকটি থামার পর চালক দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে বেরিয়ে আসে এবং ‘সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’ বক্তব্য দেয় বলে জানান কমিশনার। এক পুলিশ কর্মকর্তা হামলাকারী যুবকের পেটে গুলি চালালে সে আহত হয়; ওই অবস্থাতেই তাকে আটক করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ছবি- রয়টার্স
বিবিসি বলছে, ঘটনার পর সাইকেলের লেইনে বেশ কয়েকটি সাইকেল চূর্ণ বিচূর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। শহরের মানুষ যখন হ্যালোউইন উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত, তখনি এই হামলার ঘটনা ঘটলো।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ট্রাক হামলায় সন্দেহভাজন আসামি অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবারের নিবন্ধিত চালক ছিলেন। এ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে উবার। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সাইপোভ উবারের অধীনে গাড়ি চালানোর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তবে, তিনি এখন এই প্লাটফর্ম থেকে বহিষ্কৃত। কিন্তু এই ঘটনা উবারের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এতে আরও বলা হয়, এর আগের রেকর্ডে দেখা যায়, সাইপোভ এর আগে একাধিক যান চালানোবিষয়ক অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মিশৌরিতে যথাযথ ব্রেক ব্যবস্থা ছাড়া গাড়ি চালানো নিয়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি আদালতে হাজির না হলে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
ছবি- রয়টার্স
উবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সাইপোভের ইতিহাস ঘেটে দেখছে আর এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বিষয়ে চালক হিসেবে তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো যাত্রীর অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলে, “আমরা এমন অর্থহীন সহিংস আচরণে মর্মাহত। আক্রান্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য আমাদের সমবেদনা। আমরা পুরো সহযোগিতা দিতে আইন শৃংখলা প্রয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।”
মঙ্গলবার গুগল প্রধান নির্বাহী সুন্দার পিচাই এক টুইটে বলেন, “নিউ ইয়র্ক সিটিতে হয়ে যাওয়া অভাবনীয় ক্ষতির জন্য অত্যন্ত মর্মাহত। সেখানে ক্ষতিগ্রস্থ সবার জন্য প্রার্থনা করছি। এনওয়াইপিডি, এফডিএনওয়াই আর সর্বপ্রথম যারা সেখানে সাড়া দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।” এই টুইটের শেষে ‘এনওয়াইসিস্ট্রং’ হ্যাশট্যাগ জুড়ে দিয়েছেন তিনি। এনওয়াইপিডি বলতে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আর এফডিএনওয়াই বলতে নিউ ইয়র্ক সিটি ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে বোঝায়।
ছবি- রয়টার্স
অ্যাপল প্রধান টিম কুক এ নিয়ে দেওয়া টুইটে বলেন, “আজ রাতে আমাদের হৃদয় আক্রান্তদের, তাদের পরিবারের ও নিউ ইয়র্কে সবার সঙ্গে। নিরাপদ থাকুন, শক্ত থাকুন।”
ইতোমধ্যে এই হামলার ঘটনার কারণে ওই এলাকায় সেইফটি চেক ফিচার চালু করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক। সেইফটি চেক ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিরাপদ থাকলে তা বন্ধু ও আত্মীয়দের জানাতে পারবেন। সেই সঙ্গে অন্য কোনো বন্ধু নিরাপদে আছেন কিনা তাও যাচাই করা যাবে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো এই ঘটনাকে ‘নিরীহ বেসামরিকদের লক্ষ্য করে চালানো কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা‘ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ঘটনার পরপরই টুইটারে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, নিউ ইয়র্ক আরেকজন অসুস্থ ও উন্মাদ ব্যক্তির হামলার শিকার হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই ধরণের হামলা যুক্তরাষ্ট্রে হতে দেওয়া হবে না।