সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে কী করছে ফেইসবুক?

সন্ত্রাসবাদের প্রচারণামূলক কনটেন্ট সরাতে নিজেদের প্রচেষ্টা নিয়ে আগের চেয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুক। প্রজ্ঞাপন প্রচার ও লোক নিয়োগের জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সামাজিক মাধ্যমটিকে ব্যবহার করছে- এমন অভিযোগে ইউরোপে রাজনৈতিক চাপের মুখে এই পদক্ষেপ নিল মার্কিন সোশাল জায়ান্টটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2017, 02:14 PM
Updated : 16 June 2017, 02:14 PM

দ্রুত এ ধরনের কনটেন্ট সরাতে ফেইসবুক ইমেজ ম্যাচিং ও ভাষা বুঝতে সক্ষম এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করছে, ফেইসবুকের বৈশ্বিক নীতিমালা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিকা বিকার্ট ও  সন্ত্রাসবিরোধী নীতিমালা ব্যবস্থাপক ব্রায়ান ফিশম্যান এক ব্লগপোস্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বব্যাপী ১৯০ কোটি ব্যবহারকারী থাকা সামাজিক মাধ্যমটি তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সবসময় এতটা খোলামেলা ছিল না। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরগতিতে আগাচ্ছে- এমন সমালোচনাকারীদের কারও কারও সংশয় ফেইসবুকের এই বিবৃতির মাধ্যমে দূর হয়েছে বলে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ফেইসবুক ইমেজ ম্যাচিংয়ের জন্য এআই ব্যবহার করে যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ইসলামিক স্টেস্ট ও আল কায়দা’র মতো আগে সন্ত্রাসী হিসেবে শনাক্ত হওয়া কোনো গ্রুপের পোস্ট করা ছবি বা ভিডিও-এর সঙ্গে পরবর্তীতে আপলোড করা কোনো ছবি বা ভিডিও মেলে কিনা তা শনাক্ত করতে পারে। ২০১৬ সালে ইউটিউব, ফেইসবুক, মাইক্রোসফট ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্টের একটি ডেটাবেইস তৈরি করে, যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ছবি বা ভিডিও জমা হয়ে পড়ে। এর ফলে, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্লাটফর্মে একই ধরনের কনটেন্ট আপলোড হচ্ছে কিনা শনাক্ত করতে পারে।  

একই উপায়ে ফেইসবুক এখন ‘টেক্সট’ও বিশ্লেষণ করছে, যাত মাধ্যমে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রশংসা ও সমর্থন করা কোনো টেক্সটও ইমেইজ ম্যাচিংয়ের মতো করে শনাক্ত করা যাবে।

এক টেলিফোন সাক্ষাতকারে বিকার্ট বলেন, “আমরা যেসব সন্ত্রাসমূলক কাজে ব্যবহৃত অ্যাকাউন্ট সরিয়েছি তার অর্ধেকেরও বেশি আমাদেরও খুঁজে পাওয়া; এটি আমরা আমাদের সম্প্রদায়কে জানাতে চাই যাতে তারা বুঝতে পারে আমরা আসলেই ফেইসবুকে সন্ত্রাসীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ বানাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”

অনলাইনের উগ্রপন্থী কনটেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করা যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজ-এর কম্পিউটার বিজ্ঞানী হ্যানি ফারিড বলেন, “আমরা জানি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।”

“এটা কেন এত বছর ধরে, তারা কী এ কাজটি কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে করিয়ে আসছিলেন?” এত বছর ধরে কী তারা উদ্ভাবন থেকে পিছিয়ে ছিলেন?”- এমন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তিনি। তার মতে, ফেইসবুকের এই বিবৃতি ইউরোপীয় সরকারগুলোর প্রতি জবাবে ফেইসবুকের স্রেফ প্রচারণামূলক একটি জনসংযোগ পদক্ষেপ। 

অনেকদিন ধরে এ বিষয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করা হলেও এতদিনে ফেইসবুক কেন তাদের নীতিমালা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলল- এমন প্রশ্নের জবাবে বিকার্ট বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে এমন আলোচনা সৃষ্টি করছিল যে তারা (ফেইসবুক) আসলেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কী করতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা এটি নিয়ে কথা বলছি কারণ, আমরা দেখছি এই প্রযুক্তি আমাদের এ ধরনের কনটেন্টগুলো খোঁজার চেষ্টার উপায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।”    

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেইসবুকের প্রচেষ্টাগুলোকে স্বাগত জানালেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেশি কাজ করা দরকার বলে মত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “এগুলোর মধ্যে কিছু কারিগরী সমাধান আছে যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের কনটেন্টগুলো শনাক্ত করে সেগুলো বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরানো যাবে, সেই সঙ্গে প্রথমে আপলোড করাও ঠেকানো যাবে।”