যৌন হয়রানি: বহিষ্কার উবারের ২০ কর্মী

যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তের পর ২০ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার। বরখাস্ত হওয়া এসব কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যান্য পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 10:52 AM
Updated : 7 June 2017, 10:52 AM

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যৌন হয়রানি, নিপীড়ন এবং প্রতিষ্ঠানের দুর্বল সংস্কৃতি নিয়ে সমস্যার কারণে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে, বলা হয় বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উবারের সাবেক প্রকৌশলী সুজান ফ্লাওয়ার এক ব্লগ পোস্টে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানের এক ব্যবস্থাপকের দ্বারা তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও অন্যান্য ব্যবস্থাপক এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দেননি।

এ ঘটনার পর থেকেই রোষের মধ্যে ছিল উবার। পরবর্তীতে এ নিয়ে তদন্ত শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাওয়ার তার ব্লগ পোস্টে বলেন, উবার এমন একটি কর্মস্থল যেখানে যৌন নিপীড়ন ‘সাধারণ ঘটনা’ এবং ‘কারও কোনো শাস্তি হয় না’।

যৌন হয়রানির এ অভিযোগের পর উবার প্রধান ট্রাভিস কালানিক বলেন, “ফ্লাওয়ার যে অভিযোগ এনেছেন তা জঘন্য এবং উবার যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে ও বিশ্বাস করে এইভিযোগ তার সঙ্গে যায় না।”

এ নিয়ে দুইটি পৃথক তদন্ত চালিয়েছে উবার। এতে হয়রানি এবং অন্যান্য দাবী নিয়ে ২১৫টি অভিযোগ তদন্ত করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু খাতে চাপের মধ্যে রয়েছে। অনেক দেশেই উবার বন্ধের জন্য আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশে সেবা বন্ধ  করেছে এই প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্বচালিত প্রযুক্তি নিয়ে গুগলের ওয়েইমো’র সঙ্গে সম্প্রতি মামলা শেষ করেছে উবার। রায়ের পর মামলার মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি অ্যান্থনি লেভানডস্কিকে বরখাস্ত করে প্রতিষ্ঠানটি। মামলার কারণে প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নির্বাহী কর্মকর্তাও প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেছেন।

এখানেই শেষ নয়। ভাড়া কমানো নিয়ে এক চালকের সঙ্গে কালানিক দুর্ব্যবহার করার কারণেও সমালোচনার শিকার হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তদন্তের বিষয়ে উবার-এর এক মুখপাত্র বলেন আইনী প্রতিষ্ঠান পার্কিন্স কোই ২১৫টি অভিযোগ পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে যৌন হয়রানি, বৈষম্য এবং অন্যান্য অভিযোগ রয়েছে।

২১৫টির মধ্যে ১০০টিতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পার্কিন্স। ৫৭টি এখনও পর্যালোচনা করছে তারা। আর বাকিগুলোর জন্য সতর্কতা বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। যাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও রয়েছেন বলেন জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।

যে ২১৫টি অভিযোগে পর্যালোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে ৫৪টি বৈষম্যের, ৪৭টি যৌন হয়রানির, ৪৫টি অপেশাদার আচরণ, ৩৩টি নীপিড়ন, ১৩টি অন্যান্য হয়রানি, শারীরিক নিরাপত্তা ৩টি এবং ১টি বেআইনীভাবে বরখাস্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

পর্যালোচনা প্রতিবেদনের পর ২০ জনকে বরখাস্ত, ৩১ জনকে প্রশিক্ষণ, সাত জনকে শেষবারের মতো সতর্ক করেছে উবার। ৫৭টি বিষয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃত সংস্কৃতি তদন্ত করতে এরিক হোল্ডার-কে নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ইতোমধ্যেই বরখাস্ত করা বেশ কিছু পদে নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে উবার। চলতি সপ্তাহেই উচ্চপদস্থ স্থানে দুইজন নারী কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্বজুড়ে ১২ হাজার কর্মী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ নারী কর্মী, যার ১৫ শতাংশ প্রযুক্তিবিষয়ক পদে রয়েছেন।