মুখেই হবে এবার বাংলা টাইপ

কম্পিউটিং জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণে গবেষণা ও সহায়ক সফটওয়্যার উন্নয়নে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2017, 06:11 AM
Updated : 11 Feb 2017, 07:27 AM

বাংলায় সরাসরি কথা থেকে লেখা বা লেখা থেকে কথায় রূপান্তরসহ এ প্রকল্পে কম্পিউটিং জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণে ১৬টি ক্ষেত্রে কাজ করা হবে।

‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামে এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক এনামুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, “এর ফলে কথা বলে যন্ত্রের মাধ্যমে টাইপিং কাজ সম্পাদন করা যাবে, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে।”

শব্দের উচ্চারণ লিখিত আকারে প্রকাশ করতে আইপিএ (ইন্টারন্যাশনাল ফনেটিক অ্যাসোসিয়েশন) ফন্টের ব্যবহার হয়ে থাকে।

আইপিএ’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলা আইপিএ ফন্ট উন্নয়ন করা হবে। এতে অভিধান প্রণয়নে এবং বিদেশি ভাষার ছাত্র-শিক্ষক, ভাষাবিদ, গায়ক, স্পিচ-ল্যাংগুয়েজ প্যাথলজস্টিদের প্রয়োজন মেটাবে, বলেন প্রকল্প পরিচালক। 

তথ্য-প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য মূলত কম্পিউটিং জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্প্রসারণে কাজ শুরু করা। শূন্য থেকে একাজ শুরু করতে হচ্ছে।”

এনামুল কবির জানান, বাংলা কি-বোর্ডের ব্যবহার সম্প্রসারণে এর বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং অধিকতর উন্নয়ন করা হবে। এতে কি-বোর্ডকে বিভিন্ন কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম যেমন- ডেক্সটপ, মোবাইলে ব্যবহারের জন্য সম্প্রসারণ করা যাবে।

বাংলা কি বোর্ড

এছাড়া হাতে লেখা, প্রিন্ট করা দলিলপত্র ইত্যাদি ব্যবহারযোগ্য বাংলা টেক্সট হিসেবে রূপান্তরের সফটওয়্যার তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এর ফলে অফিস-আদালত, গ্রন্থাগার ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক দলিলপত্র, সাহিত্যকর্মকে টেক্সট হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক। 

বাংলা লেখা ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভিন্নরূপে দেখা যায়। ভিন্ন ভিন্ন ফন্টে লেখা বাংলা টেক্সটকে পছন্দনীয় ফন্টে রূপান্তর খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে থাকে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে ফন্ট ইন্টারঅপারেবিলিটি ইঞ্জিন উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে বাংলায় ডকুমেন্ট প্রসেসিং, ই-মেইলিং, হিসাব-নিকাশ সহজতর হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় বাংলা ভাষার জন্য কমন লোকাল ডেটা রিপোজিটরি উন্নয়ন করা হবে। ভাষার ইন্টারলাইজেশনের জন্য প্রমিত শব্দ ভাণ্ডার (যেমন বিদেশি শব্দ বা কারিগরি শব্দের সমার্থক বাংলা শব্দ) ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে জমা দিতে হয়।

এর ফলে কম্পিউটিং জগতে বাংলার ব্যবহার সম্প্রসারণ, বাংলা সফটওয়্যার এবং অনুবাদ সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

প্রকল্পের আওতায় বাংলা বানান ও ব্যকরণ পরীক্ষার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এর ফলে ভুল পরিহার করে বাংলায় সঠিক বানান ও ব্যকরণের ব্যবহার হবে।

তথ‌্য প্রযুক্তিতে তরুণদের দক্ষ করে তুলে এখাত থেকে বিশাল রপ্তানি আয়ের লক্ষ‌্য সরকারের

মৌখিক ও লিখিত প্যারাগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে অনুবাদের জন্য বাংলা মেশিন ট্রান্সলেটর উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষান্তরিত করতে সহায়ত হবে।

স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার অর্থাৎ কম্পিউটিং যন্ত্রের স্ক্রিনে প্রদর্শিত তথ্য ও চিহ্নগুলো পাঠ করার সফটওয়্যারও তৈরি হবে, যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা পড়তে অক্ষম ব্যক্তিদের কম্পিউটিং যন্ত্র ব্যবহারও সহজ হয়।

এছাড়া সেন্টিমেন্ট (ভাব) বিশ্লেষণে টুলস উন্নয়ন, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির জন্য প্রমিত কি-বোর্ড করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছরের মধ্যে এসব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কি না- এ প্রশ্নে মোস্তফা জব্বার বলেন, “বাংলা ভাষার জন্য এটি অনেক বড় কাজ। মনে হয় না তিন বছরে সম্ভব হবে।”

প্রাক্কলিত ১৫৯ কোটি টাকায়য় প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে কি না, তা গবেষক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগের পরই বোঝা যাবে বলে মনে করেন এই প্রকল্পে যুক্ত মোস্তফা জব্বার।

গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।