মাস্ক-এর কিছু ‘খ্যাপাটে’ ভাবনা

ব্যস্ত সময়ের মধ্যে জীবন পার করছেন মার্কিন ধনকুবের ও প্রকৌশলী ইলন মাস্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেওয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন-কে সমর্থন দেওয়া ও হাইপারলুপ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ধাপ চালু করা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে তার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড।

রিয়াদ মোর্শেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2017, 12:17 PM
Updated : 3 Feb 2017, 12:17 PM

বরাবরই ‘খ্যাপাটে’ ধরনের নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা ও মন্তব্য দিয়ে আলোচনায় স্থান নেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও সৌরশক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সোলারসিটি’র এই শীর্ষ ব্যক্তি।

মাস্ক-এর প্রকাশ করা এমন কিছু ‘খ্যাপাটে’ পরিকল্পনা আর মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন সংবাদ সাইট বিজনেস ইনসাইডার।

২০২৪ সালের মধ্যে মানবজাতিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন মাস্ক। তিনি বলেন, “আমরা মঙ্গলে যাওয়ার জন্য কার্গো ফ্লাইট প্রস্তুত করছি, যা মানুষের জন্য উপযুক্ত। প্রতি ২৬ মাসে একবার পৃথিবী এবং মঙ্গল-এর মিলনস্থল তৈরি হয় অর্থাৎ ২০১৮ সালে একবার এবং ২০২০ সালে একবার এমন সময় তৈরি হবে। আর আমি মনে করি, যদি পরিকল্পনা অনু্যায়ী সবকিছু হয় তবে ২০২৪ সালে আমরা মানুষ পাঠিয়ে ২০২৫ সালে পৌঁছে দিতে পারি।”

কোথাও মানুষ থাকলে তাদের সঠিকভাবে দেখভালের জন্য সরকারেরও দরকার হয়। এ বিষয়ও মাথায় রেখেছেন ইলন মাস্ক, মঙ্গলে সরকার গঠন নিয়েও আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি মঙ্গল-এর সরকার কোনো প্রতিনিধি নয় বরং সরাসরি গণতন্ত্র হবে।” তিনি আরও বলেন, “তাই এই বিষয়ে জণগণ সরাসরি ভোট দেবে এবং আমি মনে করি এটি হয়তো ভাল হবে কেননা গণতন্ত্রের দক্ষতা যথেষ্ট কমে গিয়েছে।”

মঙ্গলে মানুষের শুধুই বেঁচে থাকা নিয়ে আগ্রহী নন তিনি। তিনি চান সেখানে একটি থ্রাইভিং সিটি (একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান যারা পৃথিবীর উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে) বিদ্যমান থাকুক। মাস্ক জানান, এই লাল দুনিয়ায় (মঙ্গল) তিনি কাপড় আয়রন থেকে পিৎজা দোকান সব অন্তর্ভুক্ত করতে চান।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাস্ক জানান যিনি প্রথম মঙ্গলে যাবেন তার ‘মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত’ থাকা উচিৎ। তিনি বলেন, “মঙ্গলে প্রথম যাত্রাটি সত্যিকার অর্থে অনেক বিপদজনক হতে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এর বিপরীতে করার কিছুই নেই।”

কিন্তু তিনি এও জানান, মহাশূন্যে মারা যাওয়া খারাপ কিছু হবে এমনটা জরুরী নয়। তিনি বলেন, “আমি মনে করি যদি আপনি মারা যাওয়ার জন্য কোনো স্থান নির্ধারণ করেন তবে মঙ্গল পছন্দ করা মন্দ হবে না।”

স্বচালিত গাড়ি প্রযুক্তি সমালোচকদের নিয়ে ইলন মাস্ক এর মত হচ্ছে- যারা স্বচালিত গাড়ি থেকে মানুষকে বিরত রাখতে চান, প্রকৃতপক্ষে তারাই মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। মাস্ক এই বার্তা দেন যখন টেসলার একটি স্বচালিত গাড়ির দুর্ঘটনার কারণে তার সমালোচনা করা হয়। তিনি বলেন, “খোলাভাবে আমি একটি কথা বলতে চাই যে, এটি আমার কাছে অনেক বিরক্তিকর, অটোপাইলট গাড়ির দুর্ঘটনা যেভাবে মিডিয়া প্রচারণা করেছে। যখন ম্যানুয়াল গাড়ির দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ১২ লাখ মানুষ মারা যান, তখন মিডিয়া দুর্ঘটনার গুরুত্ব অনুভব করে না।” তিনি আরও বলেন, “তাই আমি সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করেছি যে, কেউ যদি স্বচালিত গাড়ি ব্যবহার নিয়ে নেতিবাচক লিখে থাকেন তবে তিনি মানুষ হত্যা করছেন।” ইলন মাস্ক স্বচালিত গাড়ির দুর্ঘটনার ঘটনা তুলনা করেছেন এলিভেটর আটকে পড়ার সঙ্গে। যখন তাকে জিজ্ঞাস করা হয় টেসলা প্রতিষ্ঠানটি কোনো দুর্ঘটনার দায় নিজের ঘাড়ে নিবে কিনা, এই জবাবে তিনি বলেন, “স্বচলিত গাড়ির দিক থেকে চিন্তা করলে এটি অনেকটা একটি দালান এর এলিভেটরে আটকে যাওয়ার মতো হবে। অটিস (এলিভেটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) কি পৃথিবীজুড়ে সব এলিভেটর-এর দায় নেবে?”

ইলন মাস্ক বলেন, মানুষ ইতোমধ্যে ‘সাইবর্গ (রূপকথার সুপারহিরো, যার দেহ যন্ত্র এবং রক্ত মাংসের মিশ্রণ)’- এর মতো হয়েছে। তিনি জানান, ইমেইল এবং সামাজিক মাধ্যমের জন্য ডিজিটাল আবির্ভাব থাকার কারণে মানুষের সাইবর্গ-এর মতো ‘সুপারপাওয়ার’ এর সক্ষমতা আছে। তিনি বলেন, “২০ বছর আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর থেকে এখন আপনার বেশি ক্ষমতা আছে। আপনি যে কোনো প্রশ্নের উত্তর ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে দিতে পারেন, আর তা যে কোনো জায়গায়।”

ইলন মাস্ক-এর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ‘সবচেয়ে বড় বিদ্যমান হুমকি’ হতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শয়তানকে ডাকছি।”